বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

রূপগঞ্জে সরকারি অফিস টাইম ৪ ঘণ্টা!

মো. খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ থেকে : | প্রকাশের সময় : ১১ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 সকাল ১০টা। উপজেলা পরিষদের কোনো দফতরে কারো দেখা মেলেনি। দু’য়েকটি অফিসের অফিস সহকারী আর কেরাণী ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি। বেশির ভাগ অফিসে খালি চেয়ার-টেবিল ও ঘুরছে সিলিং ফ্যান। শিক্ষা বিভাগে এক ভদ্রলোক এসেছেন দেখা করতে। অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে অবশেষে তিনি চলে গেলেন। ভদ্রলোক আবুল হাশেমকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি ক্ষোভের সুরে বলেন, মানুষ সরকারি কর্মকর্তাদের থেকে সুযোগ-সুবিধা আশা করবে কোথায়? তা-না উল্টো ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এ চিত্র শুধু শিক্ষা বিভাগে নয়, প্রতিটি দফতরেই। কার্যত রূপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনে সরকারি সময় মানছেন না কোনো কর্মকর্তা। কর্মকর্তারা আসেন বেলা ১১টায়, আবার চলে যান দুপুর ২টায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার থেকে শুরু করে সব স্তরের কর্মকর্তারা অফিসে আসছেন নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে। এটা প্রতিদিনের চিত্র হলেও বাসাবাড়ি দূরে, বৃষ্টির সমস্যা, পরীক্ষা ডিউটিসহ নানা অজুহাত দেখিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ অনেক কর্মকর্তা। ফলে চরম ভোগান্তি আর দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন অফিসগুলোতে আসা লোকজন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সকাল ৯টা থেকে অফিস সময় শুরু হলেও অনেক অফিসারই ঠিকমতো আসেন না। অনেককেই ১০টার পর থেকে আসতে দেখা যায়। আবার চলে যান ২-৩টার পরপরই। এর মাঝখানে দুপুরের খাবার ও নামাজের বিরতি তো রয়েছেই। ফলে অফিসারদের রুমে না পেয়ে অনেকে ফিরে যান। রোববার প্রথম কার্যদিবস হওয়ায় ওইদিন কর্মকর্তারা সচরাচর দেরি করে অফিসে আসেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বৃহস্পতিবার শেষ দিন হওয়ায় দুপুরের পর অফিস কার্যত ফাঁকা হয়ে পড়ে। কয়েকজন কর্মকর্তা সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন অফিস করে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন পুরো মাসের বেতন।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের কাছে আসা লোকজন সকাল থেকেই অপেক্ষা করতে থাকেন। সকাল সাড়ে ৯টায় আসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু ফাতে মো. শফিকুল ইসলাম। সকাল ১০টায় সমাজসেবা অফিসে গিয়ে দেখা যায়, সমাজসেবা অফিসার সোলায়মান ভ‚ঁইয়া অফিসে আসেননি। পিয়ন নারায়ণচন্দ্র সূত্রধর জানান, স্যার কাজে বাইরে আছেন। কোন কাজে আছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার জানা নেই। সকাল সাড়ে ১০টায়ও পৌঁছেননি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবেদ আলী। সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলা প্রকৌশলী এহসানুল হকের রুমে গিয়ে দেখা যায় তালা ঝুলানো। এ ছাড়া উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মালেক ও ফিরোজ সাইফুউদ্দিনের রুমে তালা। বেলা পৌনে ১১টায় উপস্থিত হন উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহেদা আখতার। এ সময় পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন না সহকারী শিক্ষা অফিসার মুক্তা বেগম, নাহিদা বেগম, মার্জিয়া, লিপি আক্তার, গুলশান আরা, সিমা রাণী মৃধা ও আইয়ুব খান।
শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী শাহ আলম ভ‚ঁইয়া বলেন, ম্যাডাম জ্যামে আছেন। তবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীর আহম্মেদ রতনকে সকাল ৯টায় তার অফিসে দেখা গেছে। সাড়ে ১০টায় কৃষি অফিসার মুরাদুল হাসান ছেলের পরীক্ষার কারণে আসেননি। আর কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কায়সুন রাফাত হাওলাদার ছুটিতে রয়েছেন। উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার মোয়াজ্জেম হোসেন ও অফিস সহকারী বকুল মিয়া ছাড়া আর কাইকে পাওয়া যায়নি। উপজেলা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ঠিকমতো অফিস না করার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সপ্তাহে তিনি দুই থেকে তিন দিন অফিস করেন। জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী মোট ১২ জনের মধ্যে একজন ছাড়া বেলা ১১টা পর্যন্ত বাকি সবাই অনুপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিন দেখা যায়, মৎস্য কর্মকর্তা সুমীর কুমার বসাক সকাল সাড়ে ১০টায়ও উপস্থিত হননি। অন্যদিকে পরিসংখ্যান অফিসার মো. নুরুউদ্দিন মিয়ার দেখা মেলেনি সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হাফিজা বেগম ১১টার আগে একদিনও আসেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিসার ওমর ফারুক সাড়ে ৯টায় আসেন। পল্লী উন্নয়ন অফিসার অলিউল্লাহ খান প্রায়ই আসেন সাড়ে ১০টায়। সমবায় অফিসার নাসিমা শাহীন আসেন ১১টায়। এ দফতরের চারজন কর্মকর্তার মধ্যে একজন উপস্থিত ছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, অধিকাংশ অফিসারই ১১টার আগে আসেন না। আর সবাই ঢাকা থেকে এসে অফিস করেন। কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় কর্মকর্তারা অফিসকে নিজেদের বাড়ি মনে করেন। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ওমর ফারুক জেএসসি পরীক্ষার পরিদর্শনে ছিলেন বলে জানান অফিস সহায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন। উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. মাহাবুবুর রহমান সকাল ১০টায় অফিসে আসেন। যথাসময়ে না আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্মার্ট কার্ড নিয়ে সহকারীদের প্রশিক্ষণ ছিল, তাদের সহযোগিতা করতে গিয়েই দেরি হয়েছে।
দাউদপুরের ধামচি থেকে কৃষি বিভাগে আসা ভুক্তভোগী মোস্তফা মিয়া বলেন, ক্ষেত করছি। ক্ষেতে পোহে দরছে, এইডার বেফারে জানতে আইছি। ১০টা বাজে আইছি, অহনও তা-গো খবর নাইহ্যা। মোস্তফার মতো আরো অনেকে বিভিন্ন দফতরে এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবেদ আলী বলেন, কাজ ছিল তাই একটু দেরি হয়ে গেছে।
জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপ-প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান মিয়ার সঙ্গে সেলফোনে যোগাযোগ করে যথাসময়ে উপস্থিত না হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করতেই তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে মোবাইল রেখে দেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, জেএসসি পরীক্ষার কারণে ১৩ জন ডিউটিতে। আর যানজটের কারণে অনেকের আসতে সময় লাগে। তবে এমনটা যেন না হয় সেদিকে লক্ষ রাখবেন বলে তিনি জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন