বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

উপ সম্পাদকীয়

জানতেই হবে : মহানবী (সা.)-এর জীবন

মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

১২ রবিউল আওয়াল আসার যথেষ্ট পূর্বে আমি এই কলামটি লিখলাম এবং সম্মানিত পাঠক পড়ছেন। কেন এত আগে আগে লিখলাম? আজ থেকে নিয়ে আগামী কয়েকদিন, এই কলামের পাঠক সময় পাবেন চিন্তা করার জন্য। আমার আবেদন, যেই পাঠকের দ্বারাই সম্ভব, যতটুকুই সম্ভব, চিন্তা করুন। চিন্তার বিষয় কী? বিষয় হলো মহানবী (সা.) এর জীবনী, তাঁর কর্মগুলো; তাঁর পারিবারিক জীবন, তাঁর সমাজসেবার জীবন, মক্কায় ইসলাম প্রচারের জীবন, মদীনায় হিজরতের ঘটনা, মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্রের উন্মেষ ও রাষ্ট্রনায়কের জীবন, সেনাপতির জীবন, নৈমিত্তিক সাংসারিকতার জীবন, নৈমিত্তিক ইবাদতের জীবন, যতটুকু দর্শনীয় ততটুকুই আধ্যাত্মিকতার জীবন ইত্যাদি
কলামের এই পর্যায়ে আমরা মহানবী (সা.) এর সম্মানে মনে মনে পবিত্র দরূদ শরীফ পাঠ করছি এবং দরূদ শরীফের পর সুপরিচিত ফারসি ভাষার মাত্র চার লাইনের একটি কবিতা পাঠ করছি।
বালাগাল উলা বি কামালিহি,
কাশাফাত দুজা বি জামালিহি,
হাসুনাত জামিও খিসালিহি,
সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহি।।
জগৎ বিখ্যাত এবং ইতিহাসখ্যাত অমর কবি ও সুফি সাধক আল্লামা জালালুদ্দিন রুমী (রহ.)-এর সমসাময়িক বা সমকালীন আরেকজন কাব্য জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র ও আধ্যাত্মিক জগতের দীপ্তমান সূর্য ছিলেন ‘মুশাররফ উদ্দীন মুসলেহ বিন আব্দুল্লাহ সাদী শিরাজী’ সংক্ষেপে যিনি শেখ সাদী নামে পরিচিত (১২০৯ থেকে ১২৯১ খ্রিস্টাব্দ)। বিগত দেড় হাজার বছরে, যুগে-যুগে কালে-কালে বছরে-বছরে উৎসবে-উৎসবে দিনে এবং রাত্রিতে রাসুল প্রেমিকগণ কাব্যিক ভাষায় মহানবী (সা.) এর প্রশংসা করেছেন, তাঁর প্রতি সম্মান জানিয়েছেন। মহানবী (সা.) তাঁর প্রতি নিবেদিত ও রচিত হাজার হাজার বা লক্ষ লক্ষ কবিতার চরণগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ কবিতার লাইন বা বাক্য যেটি এই অনুচ্ছেদের শুরুতেই লিখলাম। এই লাইনগুলো রচনা করেছিলেন শেখ সাদী (রহ.)। এই চারটি লাইনের বাংলায় অর্থ লিখছি। অর্থ: ‘তাবত পূর্ণতা নিয়ে শীর্ষে হয়েছেন উপনিত/ অপার সৌন্দর্য্যে তিনি আলোও করেছেন তমসাকে/ আশ্চর্য চরিত্র তাঁর অতুলন সৌন্দর্যমÐিত/ রাহমাতুল্লিল আলামিনÑহাজার সালাম তাঁকে।’
বাংলাদেশের হিজরী ক্যালেন্ডার মোতাবেক সফর মাস শেষ রবিউল আওয়াল মাসের বারোতম দিবসটি তথা রবিউল আওয়াল মাসের ১২ তারিখ হচ্ছে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর এই পৃথিবীতে আগমন দিবস তথা আমাদের ভাষায় জন্মদিন। বাংলাদেশে নবীপ্রেমিক মুসলমানগণ এই দিবসটি তথা এই দিবসের কয়েকদিন আগের থেকেই, দিবসটি পালন করা শুরু করেন। দুই-তৃতীয়াংশ নবীপ্রেমিক, পালন করেন মিলাদুন্নবী নাম দিয়ে, কেউ পালন করেন সীরাতুন্নবী নাম দিয়ে। সরকারের উদ্যোগে বঙ্গভবনে মিলাদ শরীফ পড়ানো হবে এবং এটা রাত্রিবেলা টেলিভিশনে দেখানো হবে; দিনটি ছুটি থাকবেÑএর বেশি কিছু নেই। বড় বড় মহানগরী এবং শহরে সম্মান ও আনন্দের মিশ্রণের মিছিল বের হবে; জশনে-জুলুসে-মিলাদুন্নবী (সা.) যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ শামিল হবেন। অতীতে, আমরা যখন শিশু বা কিশোর ছিলাম তখন স্কুলে আলোচনা সভা হতো, মিলাদ শরীফ হতো এবং মিষ্টি বিতরণ হতো। যাহোক, একজন অভ্যাসকারী মুসলমান হিসেবে আমি মনে করি এই দিনটি পালন করা যেমনই গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ হলো দিনটির তাৎপর্য বোঝা। তথা, এই দিনে জন্মগ্রহণকারী বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, মহান আল্লাহতায়ালার বন্ধু, সর্বশেষ রাসুল ও নবী এবং রাসুল ও নবীগণের ইমাম হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনের শিক্ষাগুলো নিয়ে চিন্তা করা। তাই, এই দিনটিকে সামনে রেখেই আজকের কলামটি।
মহানবী (সা.) এর জীবনী নিয়ে বহু পুস্তক লেখক বা কলাম লেখক বা প্রবন্ধকারকেই দেখেছি একটি পুস্তকের রেফারেন্স দিতে। পুস্তকটির নাম ‘দি হান্ড্রেড: এ র‌্যাংকিং অফ দি মোস্ট ইনফ্লুয়েনশিয়াল পারসনস ইন হিস্ট্রি’। এই বইয়ের লেখক পাশ্চাত্যের একজন অমুসলমান পÐিত, যার নাম মাইকেল এইচ হার্ট। মাইকেল হার্ট পৃথিবীর ইতিহাসে বা মানব সভ্যতার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বা সর্বাধিক প্রভাব বিস্তারকারী একশতজন ব্যক্তিত্বের তালিকা ও জীবনী প্রকাশ করেছেন তাঁর বইয়ে। মাইকেল এইচ হার্টের মতে এবং তাঁর বইয়ে প্রকাশিত তালিকা মোতাবেক, এই একশতজনের মধ্যে ক্রমিক নম্বর ১ হচ্ছেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তথা মাইকেল এইচ হার্টের ভাষায় মুহাম্মদ (সা.) হচ্ছেন মানব সভ্যতার উপরে, মানব ইতিহাসের উপরে সর্বাধিক প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তিত্ব। অতএব সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। মাইকেল এইচ হার্ট জানতেন যে, তাঁর এই বিবেচনা বা সিদ্ধান্ত প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। তাই তিনি মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনী নিয়ে যে অধ্যায় তাঁর শুরুতেই এই সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ব্যাখাটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু এর মর্ম ব্যাপক। মাইকেল এইচ হার্ট লিখেছেন যে, ‘ইতিহাসে মুহাম্মদই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ধর্মীয় অঙ্গনে এবং জাগতিক অঙ্গনে তথা উভয় ক্ষেত্রে চরমভাবে সফল হয়েছিলেন। বাকি ৯৯ জনের মধ্যে বেশিরভাগই কোনো না কোনো সভ্যতার কেন্দ্রে বা জনপদে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং উৎসাহব্যঞ্জক বা জ্ঞান-বান্ধব পরিবেশে বড় হয়েছেন। কিন্তু ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে যখন মুহাম্মদ আরব উপদ্বীপের মক্কা নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তখন চতুর্দিকের জনপদগুলো, তাদের লেখাপড়ার স্তর এবং তাদের ধর্মীয় চিন্তা চেতনার স্তর তৎকালীন পৃথিবীর পরিচিত মানদÐে নিম্নস্তরে ছিল। সেইরূপ নিম্নস্তরে থেকেও তিনি একটি নতুন চিন্তা নতুন চেতনা নতুন সভ্যতার উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন।’ আমি (মেজর জেনারেল ইবরাহিম) মাইকেল এইচ হার্টের সিদ্ধান্তের কারণেই মুহাম্মদ (সা.)কে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ বলবো না, বরং আমার নিজের করা বিশ্লেষণ ও আমার নিজের বিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তেই আমি তাঁকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ বলবো।
ভাঙন সৃষ্টি করা বা ভেঙে দেওয়া সহজ, জোড়া লাগানো বা গঠন করা কঠিন। সমালোচনা করা খুব সহজ, সমালোচনার উত্তর দেওয়া কঠিন। সমালোচনা করা খুব সহজ কেন? এইজন্যই সহজ কারণ, গুজবের উপর ভিত্তি করে, কানকথার উপর ভিত্তি করে, চটকদার সংবাদ পড়ে, ভিত্তিহীন রচনা পড়ে যে হালকা জ্ঞান অর্জন করা হয় সে হালকা জ্ঞানের উপর ভিত্তি করেই সমালোচনা করা যায়। কিন্তু সমালোচনার উত্তর দিতে গেলে, গভীর এবং ব্যাপক লেখাপড়া করতে হবে, সুপ্রতিষ্ঠিত পÐিতের সুপরিচিত লেখা পড়তে হবে এবং যে কোনো তথ্যের বা মতামতের গোড়ায় যেতে হবে। এই কথাটি সা¤প্রতিক এক দশকের ফেসবুকের রচনাবলীর ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য তেমনই দেড় হাজার বছরের পুরানো দ্বীন ইসলামের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, শুধু আজকে বলে নয়, গতকাল এবং গত পরশু তথা গত দশক বা গত শতাব্দী বা তার আগেও একটি প্রবণতা যেমন ছিল, সেই একই প্রবণতা আজও আছে। প্রবণতাটা কী? প্রবণতা হলো, সাধারণভাবে মুসলিম তরুণ-তরুণীগণ কর্তৃক লেখাপড়া থেকে দূরে থাকা, গবেষণা থেকে দূরে থাকা, কানকথা ও গুজবের উপর নির্ভর করা, দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে লেখাপড়াকে পশ্চাৎমুখিতা মনে করা এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জীবনী পড়াকে অনুৎপাদনশীল শ্রম মনে করা। এই প্রবণতার কারণে, মুসলমান সমাজের তরুণ-তরুণীগণ, সাধারণভাবে, অর্থাৎ ব্যতীক্রম ব্যতীত সাধারণগণ, আমরা যে কোনো বিষয়ের মৌলিক জ্ঞান থেকে দূরে থাকি।
আমি ব্যক্তিগত জীবন থেকে একটি উদাহরণ দিই। ছোটকালে এসএসসি বা এইচএসসি লেভেলে ছিলাম কলা বিভাগের (বা মানবিক বিভাগের) ছাত্র। স্নাতক করেছি কলা বিভাগে অর্থাৎ বিএ। মাস্টার্স করেছি কলা এবং বিজ্ঞানের মাঝামাঝি তবে কলার দিকে প্রাধান্য বেশি; মাস্টার্স ইন ডিফেন্স স্টাডিজ। আমি কোমরে ব্যাথ্যা কেন হয়, গলবøাডারে পাথর কেন হয়, চোখে কেন ছানি পড়ে ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করে কূল পাবো না। তাই জ্ঞানী ডাক্তারগণের সিদ্ধান্তই মেনে নিই। কিন্তু পৃথিবীর উষ্ণতা কেন বেড়ে যাচ্ছে সেটা সম্বন্ধে কিছু না কিছু জানতে চেষ্টা করি কারণ, পুরোটা বুঝবো না কিন্তু কিছুটা তো বুঝবো। বাংলাদেশ থেকে টাকা কীভাবে পাচার হয়, বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে কীভাবে বড় বড় মাত্রার টাকা চুরি করা হয় ইত্যাদি চিন্তা করলে আমি হয়রান হই না, তাই চিন্তা করি; কারণ রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এটা আমাকে বুঝতেই হবে। উদাহরণ শেষ; এখন মৌলিক প্রসঙ্গটি উপস্থাপন করি।
আমার ঈমানে প্রথম বা আদি বা শিকড় যে বাক্যে এবং যে অনুভূতিতে নিহিত, সেখানে দুইটি শব্দ বা নাম পাশাপাশি অবস্থিত, একটি শব্দ বা নাম ‘আল্লাহ’ এবং অপর শব্দ বা নাম ‘মুহাম্মদ’। তাই মুহাম্মদ (সা.) এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ যে দ্বীন বা যে জীবন বিধান পৃথিবীতে আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন সে প্রসঙ্গে চিন্তা করা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, আমার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে এবং আমার জন্য উপকারী তো বটেই। অনুরূপ যাঁর মাধ্যমে সে প্রতিষ্ঠিত দ্বীন এই পৃথিবীতে এসেছে, তাঁর সম্বন্ধে জানাও আমার কর্তব্য ও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে এবং জানাটা আমার জন্যও উপকারী। আমি মনে করি, দ্বীন সম্বন্ধে এবং রাসুল সম্বন্ধে না জানাটা বড় রকমের অপরাধ এবং ক্ষতিকারক। এই দুনিয়ায় তথা এই পার্থিব সংসারে যে ব্যক্তি যত বড় পোস্ট অলংকৃত করেছেন, যত বড় দায়িত্ব পালন করেছেন, যত বেশি ধন সম্পদের মালিক হয়েছেন, যত বেশি সুনাম অর্জন করেছেন, এই সবগুলোকে একজন বিশ্বাসীর দৃষ্টিতে বলতে চাই যে তিনি ঐ পরিমাণ বেশি বেশি আল্লাহর পক্ষ থেকে দয়া প্রাপ্ত হয়েছেন। তাহলে যিনি যত বেশি দয়া পেয়েছেন তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশও তত বেশিই হতে হবে, এটাই স্বাভাবিক সূত্র। অতএব যে সকল মুসলমান ভাইবোন লেখাপড়া জানেন তাঁদের পক্ষে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব যে, তাঁরা মহানবী (সা.) এর জীবনী পড়বেন এবং বুঝতে চেষ্টা করবেন। যে সকল মুসলমান ভাইবোন আল্লাহর প্রেমে ডুব দিতে চান, নবীর প্রেমে ডুব দিতে চান, তাঁদের জন্য এটা অত্যন্ত সহায়ক কর্ম যে, তাঁরা মহানবী (সা.) এর জীবনী পড়বেন এবং বুঝতে চেষ্টা করবেন। এই সংঘাত-সংকুল একবিংশ শতাব্দীতে, পৃথিবীর চারটি প্রধান উপমহাদেশে বিপদগ্রস্ত মুসলমানগণের বিপদসংকুল পরিবেশ সম্বন্ধে যদি গভীর ধারণা পেতে হয়, তাহলে যে কোনো আগ্রহী ব্যক্তির জন্য এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি কাজ যে, তিনি মহানবী (সা.) এর জীবনী পড়বেন এবং বুঝতে চেষ্টা করবেন। ইতিহাসে বর্ণিত আছে যে, মহানবী (সা.) এর ইন্তেকালের পর, একদিন একজন সাহাবী উপস্থিত হলেন মহানবী (সা.) এর সম্মানিতা স্ত্রী (তথা মুসলমানগণের মা) হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-এর সামনে। সম্মানিত সাহাবী, বিনীত আবেদন করলেন: ‘আমাদেরকে রাসুল (সা.) এর চরিত্র সম্পর্কে কিছু বলুন।’ মা আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) উত্তর দিলেন: ‘আপনি কি কোরআন পড়েননি? পবিত্র কোরআনই তো তাঁর অনুপম চরিত্র।’ অর্থাৎ পবিত্র কোরআনের আলোকেই রাসুলুল্লাহ (সা.) তথা নবীজির পবিত্র জীবন গঠিত। পবিত্র কোরআনে, তাঁর প্রিয় বন্ধু রাসুল (সা.)কে সম্বোধন করে মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আপনি তো মহান চরিত্রের উপর অধিষ্ঠিত।’ মহান আল্লাহতায়ালা, কোরআনের পাঠক এবং বিশ্বাসীগণের সামনে নবীজি (সা.)র পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন এইভাবে, ‘তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের নিকট এক রাসুল এসেছেন। তোমাদেরকে যা উদ্বিগ্ন করে সেগুলো তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মোমিনদের প্রতি তিনি দয়ার্দ্র এবং পরম দয়ালু।’ অনুসন্ধিৎসু বা অনুসন্ধানী মনসম্পন্ন যে কোনো সচেতন মুসলমানই জানতে চাওয়ার কথা, স্বাভাবিক যুক্তিতে, কী কারণে বা কী যুক্তিতে বা কী প্রেক্ষাপটে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রিয় বন্ধু সম্বন্ধে এই বাক্যসমূহ উপস্থাপন করেছিলেন। সম্মানিত পাঠক খেয়াল করুন, আমি পূর্ববর্তী বাক্যে লিখেছি দুইটি শব্দ: স্বাভাবিক যুক্তিতে। কিন্তু সা¤প্রতিক বিশ্বে মুসলমানদের সামনে স্বাভাবিক যুক্তিগুলোকে অস্বভাবিকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। সহনীয় বিষয়গুলোকে অসহনীয় হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। সুন্দর সুস্মিত বিষয়গুলোকে অসুন্দর ও কঠোর হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। কে করছে? পাশ্চাত্য বিশ্ব; বন্ধুবেশী শত্রুগণ এবং অল্প বিদ্যায় আপ্লুত অহংকারী মুসলমানগণ। আমি নিজে প্রার্থনা করি মহান আল্লাহতায়ালা যেন আমাকে বা আমাদেরকে সঠিক উপস্থাপনার সম্মুখীন করেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) তথা নবীজির জীবনী বা তাঁর জীবনের কর্ম সম্বন্ধে জানার জন্য সুযোগের কোনো অভাব নেই। বই পুস্তকের অভাব নেই। যে ভাষায় মানুষের ইচ্ছা সে ভাষাতেই যথেষ্ট বই পুস্তক এবং লেখাপড়ার উপাদান আছে। গত পাঁচ ছয় দশকে, বাংলা ভাষায় অনেক জ্ঞানী-গুণি ব্যক্তি কর্তৃক মহানবী (সা.) এর জীবনী লেখা হয়েছে বা কর্মাবলীর মূল্যায়নমূলক গ্রন্থ লেখা হয়েছে বা অন্যান্য ভাষা থেকে ঐরূপ পুস্তক বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জীবনী গ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম যুগপৎ প্রাচীন ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ হলো ইবনে ইসহাক কর্তৃক লিখিত ‘সিরাত’। এই গ্রন্থটি বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। অতি স¤প্রতি বাংলা ভাষায়ও অনুবাদ পুনঃপ্রকাশ করেছে ঢাকা মহানগরের কারওয়ান বাজার ও ধানমন্ডিতে অবস্থিত ‘প্রথমা’ নামক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। ২০১৪ সালের ১২ জুলাই আমি, বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত ইসলামী বইমেলা থেকে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত ‘মহানবীর জীবন চরিত’ নামক গ্রন্থটি সংগ্রহ করি; ঐদিন ছিল ১৪৩৫ হিজরীর রমজান মাসের ১৩ তারিখ। আলোচ্য বইটি হলো মিশরের প্রখ্যাত লেখক ও গবেষক ডক্টর মুহাম্মদ হোসাইন হায়কল কর্তৃক আরবি ভাষায় প্রণীত ‘হায়াতে মুহাম্মদ (সা.)’ নামক গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ। অনুবাদক হচ্ছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ও ইসলামী চিন্তাবিদ মওলানা আব্দুল আউয়াল। আনুমানিক এক দশক পূর্বে, প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সঙ্গীত শিল্পী মোস্তফা জামান আব্বাসী কর্তৃক লিখিত জীবনী গ্রন্থ ‘মুহাম্মদ এর নাম’ আমার হস্তগত হয়েছিল। বাকি আরও দুই ডজন বইয়ের নাম উপস্থাপন করছি না। ইন্টারনেট, মানুষের জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রশস্ত রাস্তা খুলে দিয়েছে। গুগল-এ মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনের কোনো ঘটনা নিয়ে সার্চ দিলে বা জীবনী গ্রন্থসমূহের তালিকা প্রসঙ্গে সার্চ দিলে, বিশাল তথ্য ভান্ডার উপস্থিত হবে। তবে এখানে একটি সংবেদনশীল সাবধানতা অবলম্বন করতেই হবে; সে প্রসঙ্গে ইনশাআল্লাহ পরবর্তী কলামে আলোচনা করবো। আজকের কলাম এখানেই শেষ।
লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি

 mgsmibrahim@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
কাসেম ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ৪:০৭ এএম says : 0
অনেক সুন্দর একটি লেখা । ধন্যবাদ জানাচ্ছি লেখক মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক সাহেবকে
Total Reply(0)
নাঈম ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ৪:০৮ এএম says : 0
আল্লাহতায়ালা যেন আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন।
Total Reply(0)
তানবীর ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ৪:০৯ এএম says : 0
মহানবী (সা.) এর জীবনই আমাদের জন্য উৎকৃষ্ট জীবন আদর্শ
Total Reply(0)
ফারহানা শারমিন ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ৪:১০ এএম says : 0
আরো বেশি বেশি এই ধরনের লেখা চাই
Total Reply(0)
Shahidul Alam ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:২৬ পিএম says : 0
A Munin (muslim) should bear the virtues of the Prophet (sm:) in his own life and then real peace and happiness inhis own life and in the society.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন