বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

নরসিংদীর সেই তেতো সবজি উচ্ছে এখন ২০ টাকা

| প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নরসিংদী থেকে সরকার আদম আলী:
বহুল আলোচিত সেই তেতো সবজি নরসিংদীর উচ্ছের ব্যাপক দরপতন ঘটেছে। চলতি মৌসুমে এক কেজি উচ্ছের দাম সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা পর্যন্ত উঠে এখন ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ কেজি প্রতি মূল্য কমেছে ১৪০ টাকা। অস্বাভাবিক মূল্যের সময় সাধারণ মানুষ উচ্ছের ধারে কাছেও যেতে পারেনি। এখন সস্তা পেয়ে সকল শ্রেণীর ক্রেতারাই উচ্ছে কিনে নিচ্ছে। ২০ টাকা কেজি উচ্ছের দাম শুনে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে উচ্ছের ওপর। উচ্ছে বিক্রেতারা জানিয়েছে, জমিতে উচ্ছের উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে দাম কমে গেছে। মাস দুয়েক পূর্বে উচ্ছের মূল্য বৃদ্ধির কারণ ছিল কম উৎপাদন এবং ঢাকার ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য। নরসিংদীর চরাঞ্চলে উচ্ছে চাষাবাদ হয়ে থাকে। উৎপাদন মৌসুম এলেই ঢাকার ফড়িয়ারা চরাঞ্চলের উচ্ছে চাষীদের বাড়ী গিয়ে অগ্রিম মূল্য দিয়ে আসে। অর্থাৎ জমিতে উচ্ছে ফলনের পূর্বেই ফড়িায়ারা উচ্ছে অগ্রিম কিনে ফেলে। পরে জমিতে যা কিছু উৎপাদন হয় তা ফড়িায়ারা জমিতে গিয়ে তুলে ক্যারেট ভর্তি করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। নরসিংদীতে উৎপাদিত উচ্ছে নরসিংদীর সাধারণ মানুষই খেতে পারে না। প্রতিবছরই উৎপাদন মৌসুম শুরু হলেই উচ্ছের দাম বাড়িয়ে দেয় ফড়িয়ারা। এ বছর উৎপাদনের শুরুতে উচ্ছের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। প্রথমে এক কেজি উচ্ছে বিক্রি হয় ৮০ টাকা কেজি দরে। মাস খানেক এ দামে বিক্রির পর দাম কমে প্রতি কেজি উচ্ছে বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। সপ্তাহখানেক এই মূল্যে বিক্রি হবার পর হঠাৎ করে কেজি প্রতি ২০ টাকা বেড়ে এক কেজি উচ্ছে বিক্রি হয় ৮০ টাকা কেজি দরে। এরপর উচ্ছের মূল্য বাড়তে বাড়তে ১২০ টাকা এবং ১২০ টাকা থেকে এক লাফে ১৬০ টাকা উঠে যায়। গত কয়েক বছরে উচ্ছের মূল্য এতটা বৃদ্ধি পেতে শোনা যায়নি। খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছে, উচ্ছের মূল্য প্রথমভাগে বেশী থাকলেও শেষভাগে অর্থাৎ ফাল্গুন চৈত্র মাসে উচ্ছের মূল্য একেবারেই কমে যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা আবহাওয়ার কোন তারতম্য না ঘটলে প্রতিবছরই উচ্ছে পানির দরে বিক্রি হয়। গত বছর উৎপাদনের ভরা মৌসুমে এক কেজি উচ্ছে ৫ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়েছে। এর আগে কয়েক বছর ২ টাকা কেজি দরেও কেউ উচ্ছে কিনতে চায়নি। উচ্ছের মূল্য বৃদ্ধির মূল কারণ হলো চাষাবাদের এরিয়া বা জমির পরিমাণ কম। নরসিংদীর চরাঞ্চল ছাড়া আর কোন জায়গায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উচ্ছের চাষাবাদ হয় না। নরসিংদীর চরাঞ্চলে করিমপুর, আলোকবালী, নিলক্ষা, চরমধুয়া, মির্জারচর, বাঁশগাড়ী ইত্যাদি এলাকার মেঘনা তীরবর্তী বালিয়াড়ী জমিতে উচ্ছের চাষাবাদ হয়ে থাকে। নরসিংদীতে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নরসিংদীর চরাঞ্চলের মাত্র ২ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্ছে চাষাবাদ হয়। বাজারে উচ্ছের চাহিদার তুলনায় এই জমির পরিমাণ খুবই অপ্রতুল। এক সময় তেতো সবজি হিসেবে উচ্ছের কোন চাহিদা ছিল না। বেশীরভাগ মানুষই উচ্ছে পছন্দ করতো না। কিন্তু বিগত কয়েক দশক ধরে বাঙালী সমাজে ডায়াবেটিকস, পেটের পীড়া, লিভার ডিজিজ, ইত্যাদি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় উচ্ছের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। ঘরে ঘরে ডায়বেটিকসের রোগী রয়েছে। ঘরে ঘরেই উচ্ছেরও চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া রাজধানী ঢাকায় উচ্ছের চাহিদা অনেক বেশী। উচ্ছে খেলে লিভার ভালো থাকে। ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে থাকে, পেটের পীড়া ভালো হয়, এ ধরনের ডাক্তারী পরামর্শের কারণে মানুষ এখন ব্যাকুল হয়ে উচ্ছে খায়। কাঁচা উচ্ছের রস, সিদ্ধ উচ্ছের ভর্তা, জিয়ল মাছের সাথে উচ্ছের ঝোল, উচ্ছের পলা ভাজা ইত্যাদি এখন প্রতিটি বাঙালী পরিবারের খাবারে পরিণত হয়েছে। এমন এক সময় ছিল বাঙালী ব্রাহ্মণরা সকাল বেলায় সরিয়ার তেল ও সিদ্ধ উচ্ছে দিয়ে ভাত খেতেন। এখন সকল শ্রেণী পেশার মানুষই উচ্ছে খেয়ে থাকেন। যার ফলে উচ্ছের চাহিদা এখন আকাশ ছোঁয়া। সেই পরিমাণ উৎপাদন নেই। দিন দিন উচ্ছের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু উচ্ছে চাষের এরিয়া বা জমি বাড়ছে না। বাণিজ্যিক চাষাবাদ একেবারেই কম। সচেতন গ্রাহকদের মতে, উচ্ছে এখন মূলত: ওষধী সবজিতে পরিণত হয়েছে। কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগ যদি উচ্ছে চাষের এরিয়া বা জমি বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয় বা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উচ্ছে চাষের জন্য কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করে তবে উচ্ছের উৎপাদন ঘাটতি কমে যাবে। সকল শ্রেণী পেশার মানুষ উচ্ছে খাবার সুযোগ পাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন