সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

সাতকানিয়ায় টপসয়েল যাচ্ছে ইটভাটায় : হুমকিতে কৃষি

সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সাতকানিয়ার ফসলি জমির মাটি (টপসয়েল) কেটে নেয়া হচ্ছে ইট ভাটায়। নগদ টাকার আশায় জমির মালিকরা মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এর ফলে উর্বরতা হারিয়ে চাষাবাদের অযোগ্য হচ্ছে কৃষি জমি। হুমকির মুখে পড়েছে কৃষি। এতে ফসলহানীর আশঙ্কা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। ভূমি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এক শ্রেণির দালাল মাটির ব্যবসা করে যাচ্ছে। এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন ও জীব বৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে।
সরজমিনে দেখা গেছে উপজেলার চরতি, খাগরিয়া, নলুয়া, কাঞ্চনা, আমিলাইশ, এওচিয়া, মাদার্শা, ঢেমশা, কেওচিয়া, কালিয়াইশ, ধর্মপুর বাজালিয়া, পুরানগড় ও ছদাহা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় স্কেভেটর দিয়ে কৃষি জমির উপরের অংশ কেটে ট্রাক ও ট্রলিতে করে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এসব মাটি যাচ্ছে সাতকানিয়ার ৫৭টি ইট ভাটায়। তাছাড়া বসতভিটা, পুকুর ভরাট কাজেও মাটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাটি কাটার গভীরতা ৫-১০ ফুট পর্যন্ত ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে এসব ফসলি জমি ডোবায় পরিণত হচ্ছে। কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় যে কোন ফলনযোগ্য জমির উৎপাদন শক্তি জমা থাকে মাটির ৬-১৮ ইঞ্চি গভীরতায়। মাটির এই অংশে যে কোন ফসল বেড়ে ওঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে। বীজ রোপণের পর এই অংশ থেকেই ফসলটি প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে। এই টপসয়েল একবার কেটে নিলে সে জমির আর মৃত্তিকা প্রাণ থাকে না। এমনকি এই জমিতে ৫-১০ বছরের মধ্যে কোন ফসল উৎপাদন হবে না। এতে জমিটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
জানা যায়, ফসলি জমির টপসয়েল কেটে নেয়ার কারণে ফসলের প্রধান খাদ্য নাইট্রোজেন, ফসফরাস, আয়রন, জিংক, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়ামসহ বিভিন্ন জৈব উপাদানের ব্যাপক ঘাটতি হচ্ছে। অন্যদিকে বলা চলে নিষেধ থাকলেও মাটি ভর্তি ডেম্পার ট্রাক চলাচল করায় গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোবারক হোসেন ইনকিলাবকে জানান, মাটি কাটার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শোয়াইব মাহমুদ ইনকিলাবকে বলেন, সাধারণ কৃষকের অসচেতনতার সুযোগে এক শ্রেণির মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষি সম্পদের সর্বনাশ করছে। তিনি আরো জানান, উদ্বেগজনক হারে টপসয়েল বিক্রি হচ্ছে। কৃষকদের টপসয়েল বিক্রি করতে নিষেধ করা হচ্ছে। কেউ কর্ণপাত করছে না।
এদিকে কৃষি জমির উপরিভাগের টপসয়েল কাটা থেকে ফসলি জমি রক্ষায় বিভাগীয় কমিশনার বরাবর পত্র প্রেরণ করেছেন সাতকানিয়ার বাসিন্দা স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান। গত ৪ এপ্রিল দেয়া পত্রে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, সাতকানিয়ায় কৃষকের অজ্ঞতাকে পুঁজি করে এক শ্রেণির অসাধু মাটি ব্যবসায়ী ও দালালরা নগদ অর্থের লোভের ফাঁদে পা ফেলে স্বল্পমূল্যে আবাদি জমির মাটি ইট ভাটায় বিক্রি করছে। কৃষি জমির টপসয়েল মূল্যবান মাটি কেটে নিয়ে গেলেও উপজেলা, থানা, কৃষি প্রশাসন রহস্যজনকভাবে নিরবতা পালন করছেন। এতে করে ফসল উৎপাদন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। শুধু তাই নয়, উপজেলার সকল ইউনিয়ন পৌর এলাকাসহ জমি থেকে প্রায় ২০-৩০ ফুট গভীর কূপ খনন করে মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে। তিনি বলেন, মাটি পরিবহন করতে গিয়ে গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রæত ব্যবস্থা না নেয়া হলে তিনি জনস্বার্থে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন