রমজানের রহমতের অংশ চলে গেল। এখন মাগফেরাতের অংশ। শেষ অংশ জাহান্নাম থেকে মুক্তির। মিডিয়ায় একটি সংবাদ এসেছে, কুমিল্লার বুড়িচংয়ে সউদি প্রবাসী এক তরুন সাহরীর সময় নিকটস্থ মসজিদের মাইকের শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে মসজিদের খাদেমকে মারধর করেছে। এটি খুবই দুঃখজনক একটি সংবাদ। শ্রমক্লান্ত কোনো ঘুমন্ত ব্যক্তি যদি পারিবারিকভাবেই যথা সময় ঘুম থেকে উঠতে পারে, তাহলে তার হাতে থাকা ঘুমের সময়টি সে চাইবে একটু শান্তিতে ঘুমুতে।
রমজানে মসজিদের মাইক ব্যবহারে মিতাচার ও পরিমিতিবোধ থাকা অপরিহার্য। মানুষকে সাহারীতে জাগানো একটি উদ্দেশ্য। বর্তমানে শহরে, গঞ্জে সাইরেন আছে। ঘরে ঘরে মোবাইল, এলার্ম, ঘড়ি, টিভি ইত্যাদি আছে। এক স্থান থেকে আরেক স্থানে মানুষ আত্মীয় স্বজনদের মোবাইলে কল দিয়ে জাগায়। তবে মূল জাগরণটি মসজিদ থেকেই হয়। শেষ ঘোষণাটিও মূলত মসজিদের মাইকে মানুষ আশা করে। এর কিছু সময় পর হয় ফজরের আজান। কিন্তু কোনো কোনো মসজিদে কমিটির লোকেরা অবুঝের মতো আচরণ করেন। তারা মুয়াজ্জিন বা খাদেমকে এক মুহূর্তের জন্যও স্বস্তি দেন না। তাদের দিয়ে বলতে গেলে ঘন্টা তিনেক তারা কেরাত, গজল, হামদ-নাত, ডাক, আহŸান, ওয়াজ, নসীহত ইত্যাদি তারস্বরে করাতেই থাকেন। এরা শান্তি মতো সাহরী খাওয়ার সময়টুকুও পায় কি না সন্দেহ। এসব ইসলাম সম্পর্কে যথেষ্ট না জানার ফল। একদুইবার ডাক দিয়ে মানুষকে জাগানোই যথেষ্ট। প্রয়োজনে গোটা সময়টিতে সমান দুরত্বে দুই থেকে তিনবার আহŸান জানালেই হয়। অথবা প্রথম ডাকের পর শেষে একবার ‘১০ মিনিট’ বাকী আছে এমন একটি ঘোষনা দেওয়াই যথেষ্ট। যারা দুইতিন ঘন্টা ব্যাপী উচ্চ ডেসিবলের আওয়াজ মাইক দিয়ে চালিয়ে যান, তাদের কি জানা আছে যে, খুব কাছের বাসা-বাড়ির মানুষগুলোর কী পরিমাণ কষ্ট হয়। শুধু কাছের কেন? গভীর রাতের নিরবে দূরের মানুষও এ মাইকের আওয়াজে কত কষ্ট পায়। যারা উঠে গেছে তাদের আর এ আওয়াজ শোনার প্রয়োজন কি? যারা অমুসলিম, যারা শিশু, যারা রোগী, যারা মুসাফির, যারা হৃদরোগী, ঘুমের ওষুধ খেয়ে যাদের ডাক্তার ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে, এককথায় যাদের ওপর রোজার হুকুম নেই তাদের প্রতি মসজিদের মাইকের এ আচরণকে কী অত্যাচার বলা বেশি ভুল হবে? রমজানের রাত মোটেই ঘুমান না এমন হাজারো লোক আছেন। ইশা তারাবি শেষে তারা নফল নামাজ, কিয়ামুল্লাইল, তাহাজ্জুদ ইত্যাদি পড়েন। অনেকে তিলাওয়াত, জিকির, মুরাকাবায় রাত পার করেন। তারা যে নিরবতা চান তা পাওয়া তাদের ভাগ্যে জোটে না। মসজিদের মাইকের অপ্রয়োজনীয় অধিক শব্দ তাদের ইবাদতে ভীষণ বিঘœ ঘটায়। আমাদের কাছে শতশত ভুক্তভোগী বিনয়ের সাথে অনুরোধ জানান যেন আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। আমি মসজিদ কমিটি ও ইমামগণের সকল সংগঠনকে এ নিয়ে খুব প্রজ্ঞা ও আন্তরিকতার সাথে ভাবতে বলবো। আরও বলবো, তারা যেন শরীয়তের বিধি-বিধান ও আদব মেনে চলার প্রতি সবাইকে উৎসাহিত করেন। প্রসঙ্গত: আরেকটি কথা বলে রাখি, রমজান এবার বৃষ্টির মৌসুমে এসেছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক নয়। ভ্যপসা গরম, হঠাৎ বৃষ্টি আবার কিছুক্ষণ কড়া রোদ। রাজধানীতে জুমার নামাজে মসজিদের সব তালা ভরে যায়। শেষে মানুষ খোলা মাঠে, রাস্তায় ও ফুটপাতে পর্যন্ত দাঁড়ায়। বয়ান খুতবা ও নামাজের সময় থাকে রোদ বৃষ্টি ও কষ্টদায়ক তাপের মিশ্র বাতাবরণ। যা মূল মসজিদের এসি অংশে কিংবা ছাদের নিচে থাকা মুসল্লীরা ততটা টের পান না। কিন্তু ইমাম ও খতীব সাহেবকে তার ধর্মীয় দায়িত্ব হিসাবেই সব মুসল্লীর সুবিধা অসুবিধার খবর রাখতে হয়। তিনি বয়ান পরিমিত, খুতবা সংক্ষিপ্ত ও নামাজ সংক্ষিপ্ততর করবেন এটাই শরীয়তের চাহিদা। দোয়া মোনাজাত একটি বরকতের অথচ ঐচ্ছিক বিষয়। ভীড়, আবহাওয়া, জামাতের বিস্তৃতি, রাস্তার দখল, জ্যাম ইত্যাদি সবদিক বিবেচনা করে স্বস্তিমতো শরীয়তের দেওয়া আসানির আলোকে ইমাম খতিবগণ নামাজ পড়াবেন। তাদের পরামর্শ দরকার হলে প্রাজ্ঞ শরীয়া বিশেষজ্ঞ মুফতি ও শায়েখগণের সহায়তা নিবেন। কমিটির যেন কোনো চাপ, অন্যায় চাহিদা বা অজ্ঞতাজনিত শখ না থাকে। যা শান্তি, রহমত ও বরকতের নামাজকে মানুষের জন্য কষ্টের কারনে পরিণত করতে পারে। জরুরী কিছু কথা বললাম, আশাকরি পজেটিভভাবে নিয়ে সবাই দীনের সহজ পথটি অবলম্বন করবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন