এতীম শিশু ও অসহায় বিধবা মুসলিম জাতির আমানত। আয়হীন গরীব মানুষ, ঋণে জর্জরিত লোক, কারাগারে বন্দীর পরিবার, আকষ্মিক রোগব্যধিতে আক্রান্ত দুঃখী মানুষ, সন্তানহীন বৃদ্ধ ও অথর্ব বয়স্ক নারী পুরষ আপনার দানের অপেক্ষায়। এদের মধ্যে যারা যাকাত পাওয়ার মতো তাদের যাকাত দিন। যারা সাধারণ দান পেলে বিপদমুক্ত হয় তাদের দান-সাদাকাহ করুন। পবিত্র রমজানে নফল দান ফরজের সমান সওয়াব নিয়ে আসবে। আর যাকাতের সওয়াব হবে অন্য সময়ের চেয়ে সত্তুর গুণ। নবী করিম সা. বলেছেন, এতীম ও বিধবার জন্য যে কষ্ট করে জীবিকা অর্জন করে তার মর্যাদা সারাদিন রোজা রাখা ও সারা রাত নামাজে দাঁড়িয়ে কাটানো লোকের সমান। -আল হাদীস। মহানবী সা. আরও বলেছেন, আমি (মোহাম্মদ সা.) ও এতীমের লালনকারী জান্নাতে পাশাপাশি থাকবো। (তিনি সা. তখন হাতের দু’টি একসাথে মিলিয়ে দেখান, এভাবে একসাথে থাকবো।) -আল হাদীস। রমজানের দিনগুলি দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। মুমিনদের মনে এখন রমজান বিদায়ের কষ্ট। এসময় নিজের সম্পদের যাকাত হিসাব করে প্রার্থীদের দিয়ে দেওয়া উত্তম। যদি দেওয়া শেষ না হয়, পরেও তা সারা বছর দেওয়া যাবে। কিন্তু রমজানে হিসাব করে নিয়ত করে নিলে পরেও সত্তুর গুণ সওয়াব আশা থেকে যায়। সামনে ঈদ। যদি ফিতরার গম, যব, পনির, কিসমিস, মনাক্কা, খেজুর ইত্যাদি সাড়ে তিনসেরের দাম (শুধু গমের বেলা পৌনে দুইসের) হিসাব করে ধনীরা দিয়ে দেয় তাহলে পরিবারের ছোট বড় সকলের পক্ষ থেকে বহু টাকা একান্ত গরীবরা পায়। যেমন, ছয় সদস্যের একটি পরিবার কমপক্ষে সত্তুর টাকা থেকে ফিতরা শুরু করে। আর সাধ্যমত কোনো পরিবার তার প্রতিটি সদস্যের পক্ষ থেকে পনির, কিসমিস, মনাক্কা, খেজুর এসবের সাড়ে তিনসের পণ্যের মূল্য যত হয় তত করে দ্রæত দিয়ে দেন, তাহলে বঞ্চিত লোকেরা ঈদের খুশিতে অংশ নিতে পারবে। এ হচ্ছে ওয়াজিব দান। যারা যাকাত দিবেন তারা তাদের যাকাতযোগ্য মালের শতকরা আড়াই ভাগ দ্রæত গরীবদের হস্তান্তর করলে তারা তাদের প্রয়োজন মিটাতে পারে। যাকাতের নিয়ম হলো আরবী মাসের হিসাবে বছরের যে কোনো একটি দিন আপনি নিজের যাকাত হিসাব দিবস হিসাবে নির্ধারণ করবেন। সেদিন আপনার নিজের নগদ টাকা, ব্যাংক-ব্যালেন্স, বন্ড, শেয়ার ডিবেঞ্চার, স্বর্ণ-রূপা, ব্যবসা পণ্য, বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে রাখা জমি-ফ্ল্যাট ইত্যাদি সবকিছুর সেদিনকার বাজার মূল্য হিসাব করে যত হয় তার ৪০ ভাগের এক ভাগ অর্থ্যাৎ ২.৫% যাকাত দিতে হবে। যেমন একলাখ টাকায় আড়াই হাজার টাকা। ৪০ লাখ টাকার যাকাত একলাখ টাকা। যাকাতের সর্বনি¤œ নেসাব সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ, সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা এর যে কোনোটির সমান মূল্যের টাকা অথবা ব্যবসা পণ্য। নিজের ব্যবহারের বাড়ি, আসবাবপত্র, গাড়ির ওপর যাকাত নেই। উপর্জনের মাধ্যম, শিল্প কারখানার জমি, মেশিনপত্র, অবচয় হয় এমন ইকুইপমেন্ট ইত্যাদিতে যাকাত আসে না। ভাড়া দেওয়া বাড়ি, দোকান, ট্রান্সপোর্ট এসবের আয়ের ওপর যাকাত আসবে কিন্তু মূল সম্পত্তির ওপর যাকাত নেই। যদি ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী বাস, ট্রাক, কার ইত্যাদি বিক্রয়ের জন্য রাখে তাহলে ব্যবসা পণ্য হিসাবে এসবের ওপরও যাকাত আসবে। ঋণ, পাওনা টাকা, ফসলি জমি, বাগানবাড়ি ইত্যাদি বিষয়ক মাসআলা নিকটস্থ বড় মাদরাসার ফতোয়া বিভাগ বা প্রাজ্ঞ মুফতির নিকট থেকে জেনে নেওয়া ওয়াজিব। যাকাত কেবল নিজের পিতা-মাতা ও স্ত্রী-সন্তানদের দেওয়া যায় না। এছাড়া যাকাত নেওয়ার উপযুক্ত চাচা-মামা, ভাই-বোন ইত্যাদি সকল আত্মীয়কে দেওয়া যায়। যাকাত দেওয়ার সময় গ্রাহক বলে দেওয়া মোটেও জরুরী নয়। বরং যাকাত না বলে গিফট, ঈদ উপহার, সৌজন্য বা সহায়তা ইত্যাদি যে কোনো শোভনীয় কথা বলে দিয়ে দেওয়াই উত্তম। যাকাত-ফিতরা ছাড়াও সাধারণ অর্থ থেকে আলেম, ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম, ভদ্র দরিদ্র পরিবার, চেনা-জানা মানুষ, প্রতিবেশি, সহকর্মী, শ্রমিক-কর্মচারী, কাজের লোক, ড্রাইভার-দারোয়ান প্রভৃতি সার্কেলে ঈদের বাজার খাদ্য ও পোষাক উপহার হিসাবে দেওয়া খুবই উত্তম। এতে প্রচুর সওয়াবের পাশাপাশি সামাজিক মিল-মহব্বত দৃঢ় হয়। শারীরিক-মানসিক সুস্থতা, চেহারায় নূর, সুখী জীবন, দীর্ঘায়ু ও অপরিসীম আধ্যাত্মিক তৃপ্তি লাভ করা যায়। অতএব, যাকাত ও সাধারণ দানের এ সময়টি কাজে লাগান। সময় কিন্তু খুব দ্রæত বয়ে যাচ্ছে। জানা নেই আরেকটি রমজান আমরা ক’জন পাবো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন