শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

হাওরে মাছশূন্যের আশঙ্কা

নেত্রকোনা থেকে এ কে এম আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

দেশের অন্যতম মৎস্য ভান্ডার খ্যাত নেত্রকোনার হাওরগুলোতে এ বছর মাছের পর্যাপ্ত ডিম না ফোটায় মৎস্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে মৎস্যজীবীরা আশঙ্কা করছেন।
মৎস্য বিশেষজ্ঞরা জানান, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিস্তীর্ণ হাওরগুলো হচ্ছে মিঠা পানির মাছের আধার। এই হাওরগুলোতে বছরের সাত-আট মাস পানি থাকে। বৈশাখ মাসের শুরুর দিকে বৃষ্টিপাতে নেত্রকোনার হাওরগুলোতে নতুন পানি আসতে শুরু করে। নতুন পানি আসার সাথে সাথে ১৫ বৈশাখ থেকে ৩০ বৈশাখের মধ্যে রুই, কাতলা, বোয়াল, সিং, মাগুর, কৈ, গইন্যা, আইড়, সরপুটি, কাল বাউশ, চিংড়ি, শৌল, গজারসহ প্রায় ৫০ প্রজাতির দেশীয় মা মাছ হাওরে প্রচুর ডিম ছাড়ে। সেই ডিম থেকে কয়েক দিনের মধ্যেই রেণুপোনা ফোটতে শুরু করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, মাছের ডিম না ফোটায় আষাঢ় মাস শেষ হতে চললেও এই ভরা বর্ষাতেও মাছের পোনা কিংবা তেমন মাছ চোখে পড়ছে না স্থানীয় জেলেদের। তাই মৎস্যজীবীদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তারা হাওরাঞ্চলে মাছ সঙ্কটের আশঙ্কা করছেন।
একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতু পরিবর্তন ঘটছে, অন্যদিকে হাওরাঞ্চলের ফসল রক্ষায় অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ নির্মাণ, নদ-নদী, খাল-বিল জলাশয় দিন দিন ভরাটের ফলে মাছের প্রজনন শূন্যতার দিকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা।
খালিয়াজুরী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, হাওরে প্রায় ৫০ প্রজাতির দেশীয় মাছ রয়েছে। নতুন পানি আসার সাথে সাথে মা মাছেরা প্রচুর ডিম ছাড়ে। সে সব ডিম থেকে প্রায় ১০ মেট্রিক টন রেণুপোনা উৎপাদিত হয়। প্রতি বছর এখানে প্রায় ১২ হাজার মে.টন মাছ উৎপাদিত হয়। এখানকার উৎপাদিত মাছ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করেও জাতীয় অর্থনীতিতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার অবদান রাখছে। এ উপজেলায় আট হাজার নিবন্ধনকৃত জেলে পরিবার ছাড়াও বর্ষাকালে মৎস্য আহরণ করে অন্তত ১৫ হাজার পরিবার সুখে স্বাচ্ছন্দে দিনাতিপাত করে।
খালিয়াজুরীর মৎস্যজীবী নিখিল বর্মন বলেন, দুই বছর আগেও এই সময় হাওরে জাল টান দিলে ছোট সাইজের রুই, কাতলা, বোয়াল, কালবাউশ, গইন্যা ও আইড় মাছসহ নানা জাতের প্রচুর মাছ পাইতাম। কিন্তু এইবার হাওরে তেমন মাছ পাইতাছি না। ভল্লবপুর গ্রামের মৎস্যজীবী কালাচান বলেন, বর্ষাকালে হাওরে বের জাল দিয়া টান দিলে জালে মাছ ভইরা যাইত। কিন্তু এহন হাওরে সারা দিন জাল টানলেও মাছের দেহা পাই না।
নেত্রকোনা জেলার হাওর উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি স্বাগত সরকার শুভ বলেন, দুর্যোগ যেন হাওরবাসীর পিছু ছাড়ছে না। গত বছর আগাম বন্যায় ফসল তলিয়ে যাওয়ায় উৎপাদিত ধান নষ্ট হয়ে পানি দূষিত হওয়ার পর মাছের মড়ক দেখা দিয়েছিল। এবার হাওরে মা মাছেরা পর্যাপ্ত ডিম ছাড়লেও রহস্যজনক কারণে মাছের পোনা ফোটে নাই। এক সময় এই হাওরে প্রায় ৬০ প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। সঠিক পদক্ষেপের অভাবে ইতোমধ্যে অনেক প্রজাতির মাছ হারিয়ে গেছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ফসল উৎপাদনে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ, পলি পড়ে প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো ক্রমশ ভরাট হয়ে যাওয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছের অভয়াশ্রম না থাকা, জলমহালগুলোতে বিষ দিয়ে মাছ শিকার ও শুকিয়ে মাছ ধরার প্রবণতাও মাছের উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, হাওর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে কি কি করণীয় সে সম্পর্কে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন