চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অটোরিকশার স্ট্যান্ড বসিয়ে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। উপজেলার চাতরি চৌমুহনী বাজারের ১১টি স্ট্যান্ড থেকে এসব চাঁদা আদায় করা হয়। চাঁদাবাজরা স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না চালকেরা। অনেকটা বাধ্য হয়ে নিয়মিত চাঁদা দিয়ে এলেও তারা জানেন না এ টাকা কোথায় যায়। এ নিয়ে পুলিশ একাধিকবার অভিযান চালালেও তা এখনো বন্ধ হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাতরী চৌমুহনী বাজারে বিভিন্ন এলাকার ১১টি অটোরিকশার স্ট্যান্ড আছে। সেখান থেকে পিএবি সড়ক হয়ে ক্রসিং-মইজ্যারটেক, আনোয়ারা সদর হয়ে চন্দনাইশ-সাতকানিয়া, সিইউএফএল সড়ক হয়ে সেন্টার-ফেরিঘাট, সিইউএফএল-পারকি, বারশত-গহিরা, ছুরুত বিবি সড়ক হয়ে বটতলী রুস্তমহাট এবং পিএবি সড়ক হয়ে বাঁশখালী-মগনামা-পেকুয়া-বদরখালীতে প্রায় তিন হাজার অটোরিকশা চলাচল করে। চৌমুহনী বাজারে প্রতিদিন এসব অটোরিকশা হতে ১০০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে দুটি চক্র। এভাবে প্রতিমাসে পাঁচ-ছয় লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। কিন্তু এ চক্র দুটির সদস্যদের বিষয়ে কিছুই জানে না প্রশাসন। চালকেরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি এই চাঁদার টাকার ভাগ নেন।
ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দুটি চক্র এসব করছে বলে চালকদের অভিযোগ। স্থানীয়রা জানান, স্ট্যান্ডের কারণে বাজার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় প্রতিদিন এ অবস্থার সৃষ্টি হলেও ঝামেলায় পড়তে হবে এমন ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেন না। অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন নামে দুটি ভুঁইফোড় সংগঠন বিনা রশিদে চাঁদা আদায় করছে। সংগঠন দুটির বৈধ-অবৈধ নিয়েও তাদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। পটিয়া-চন্দনাইশ-আনোয়ারা অটোরিকশা-অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের (১৪৬৮) নাম ভাঙিয়ে একটি চক্র চাঁদা আদায় করছে।
অপরটি হচ্ছে চট্টগ্রাম অটোরিকশা-অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়ন (১৪৪১) নামে। কিন্তু সংগঠন দুটির কোনো কমিটি বা বৈধতা নেই বলে জানান চালকেরা। এরপরও দাপট দেখিয়ে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করছে সংগঠন দুটি। এতে চালকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করছে অতিরিক্ত ভাড়া। সম্প্রতি চাতরী চৌমুহনী বাজারে অভিযান চালিয়ে অটোরিকশায় চাঁদাবাজির দায়ে কয়েকজনকে আটকের পর মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয় আনোয়ারা থানা পুলিশ। স্থানীয় নামধারী শ্রমিক নেতা জেবল, সেলিম, জাহেদ, এরশাদ, নাছির, হারুন, ইলিয়াছ ও আলমের নেতৃত্বে এসব চাঁদাবাজি হচ্ছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে এসব চাঁদাবাজিতে তাঁর কোন সম্পৃক্ততা নেই জানিয়ে নিবন্ধিত ১৪৬৮ সংগঠনের সাবেক উপদেষ্টা দাবিদার মো. জাহেদুল হক বলেন, চৌমুহনী বাজারে অটোরিকশায় চাঁদাবাজি করা হচ্ছে সত্য, কিন্তু কারা এ কাজে জড়িত তা বলতে তিনি রাজি হননি। অপরদিকে চট্টগ্রাম অটোরিকশা-অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দাবি করে নুরুল আলম জানান, আমরা এ ব্যাপারে প্রশাসনকে জানিয়েছি। ১৪৪১ সংগঠনের কেউ চাঁদা তুলছে না। স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু লোক এসব করছে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আনোয়ারা থানার ওসি দুলাল মাহমুদ ইনকিলাবকে বলেন, এ নিয়ে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। কয়েকজনকে ধরে মুচলেকা নেয়া হয়েছে। কাউকে চাঁদা না দিতে চালকদের বলা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন