শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

আ.লীগের গলার কাঁটা বিদ্রোহী প্রার্থী

কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু | প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৯ এএম

কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলার ৬টিতেই আ. লীগের দলীয় প্রার্থীদের প্রতিপক্ষ আ. লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এসব বিদ্রোহী প্রার্থী শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলায় কয়েকটি উপজেলায় জয় হাতছাড়া হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তৃণমূলের সমর্থন পেলেও অনেকেই মনোনয়ন না পেয়ে ভোটের মাঠে নেমেছেন নৌকা মার্কার বিরুদ্ধে।

নির্বাচনী প্রচারণা জমে উঠেছে কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলায়। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দু‘জন করে প্রার্থী মাঠে থাকায় কিছুটা সুবিধা পাচ্ছেন আ. লীগের প্রার্থীরা। তবে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা তাদের জয়ের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কোথাও কোথাও সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন মনোনয়ন বঞ্চিত বিদ্রোহী প্রার্থীরাই।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় গোপন ব্যালটে ভোটাভোটির মাধ্যমে শীর্ষ তিন প্রার্থীর নাম সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এরমধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা আ. লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বিদ্রোহী প্রার্থী কুড়িগ্রাম পৌর কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আনারস প্রতীক নিয়ে সাইদুল হাসান দুলাল।

আ. লীগ মনোনীত প্রার্থী আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, ‘যিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, তিনি হাইব্রিড নেতা। চার বছর আগে দলের সুফল ভোগ করার জন্য পৌর আ. লীগে যোগ দিয়ে আজ নির্বাচন করতে চাচ্ছেন। যিনি চার বছর আগে যোগ দিয়েছেন এমন নেতাকে আ. লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা ভোট দিবেন-এটা বিশ্বাস করিনা। যারা দল পরিবর্তন করে তাদেরকে কখনই পছন্দ করেনা কুড়িগ্রামের মানুষ।’
অপরদিকে আ. লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাইদুল হাসান দুলাল বলেন, ‘দলের বাইরে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি এবং নির্বাচনের মাঠে আমার বিচরণ আছে। সদর উপজেলার মানুষের প্রত্যাশা ও ভালো মানুষ ও যিনি সেবামূলক কাজ করেন-তাকেই নির্বাচিত করতে চায়।’
রাজারহাট উপজেলায় দলের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু নুর মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান। তবে তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, রংপুর মহানগর আ. লীগের নেতা ও চাকিরপশার ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদ সোহরাওয়ার্দী বাপ্পি। তার প্রতীক মোটরসাইকেল। তাদের দু’জনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে। নির্বাচনে প্রার্থীতা বাছাইয়ের সময় উপজেলা আ.লীগের বর্ধিত সভায় বাপ্পির সমর্থকরা ভাঙচুর চালিয়ে পন্ড করে দেয় সভা। মুলতবি সভায় তিনি উপস্থিত হননি। ফলে তৃণমুলের প্রার্থী হিসেবে আক্তারুজ্জামান আবু নুরের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

এ ব্যাপারে রাজারহাট উপজেলায় আ.লীগ মনেনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু নুর মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী। আমার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী, মোটরসাইকেল মার্কার প্রার্থীকে আমি আমার প্রতিদ্বন মনে করিনা। আমি আশা করি এই উপজেলার মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে। এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত’। বিদ্রোহী প্রার্থী জাহিদ সোহরাওয়ার্দী বাপ্পি বলেন, ‘নৌকা পাইনি। তারপরেও আমার চেতনার মার্কা, হৃদয়ের মার্কা নৌকা, আমার বাবার মার্কা নৌকা। নৌকা পাওয়ার একমাত্র দাবিদার আমি ছিলাম। যে কারণে হোক পাইনি। আমি তারপরেও প্রার্থী হিসেবে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছি, যে প্রার্থী তার বিরুদ্ধে।’

একইভাবে ফুলবাড়ী উপজেলা আ.লীগের সভাপতি আতাউর রহমান শেখ মনোনয়ন পেলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সরকার। ফুলবাড়ী উপজেলায় ভোটাভোটির মাধ্যমে গোলাম রব্বানী সরকার প্রথম হন। তবে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আতাউর রহমান মনোনয়ন পেলেও মাঠ ছেড়ে দেননি রব্বানী সরকার। রাজীবপুরে দলের প্রার্থী শফিউল আলমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরু। বিদ্রোহী প্রার্থী আকবর হোসেন হিরু দলীয় প্রার্থী শফিউল আলমের বিরুদ্ধে নির্বাচনের মাঠে সন্ত্রাস আর টাকা ছড়ানের অভিযোগ এনেছেন। অপরদিকে শফিউল আলম অভিযোগ করে বলেন, ‘আকবর হোসেন হিরু একাধিকবার দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন।’ রৌমারীতে দলের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বঙ্গবাসীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন শেখ আবদুল্লাহ্। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১২ জন প্রার্থীর মধ্যে ১১তম হয়ে শেখ আব্দুল্লাহ পেয়েছিলেন ৭৮৯ ভোট। অথচ উপজেলা কমিটি থেকে তাকেই এবার দলীয় মনোনয়ন দেয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বর্তমান চেয়ারম্যান মনোনয়ন পেলেও তিনি ভোটের মাঠে রয়েছেন অনঢ়। উলিপুর উপজেলায় দলীয় প্রার্থী গোলাম হোসেন মন্টুর বিরুদ্ধে লড়ছেন বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন তালুকদারের ছেলে সাজেদুর রহমান তালুকদার। তাদের দু’জনের প্রতিদ্বন্দ্বি আরেক সাবেক আ.লীগ নেতা ও বর্তমানে জাপার প্রার্থী এম কফিল। ত্রিমুখী লড়াইয়ে আ.লীগের প্রার্থী কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। আগামী ১০ মার্চ কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন