গত নিবন্ধে আমরা মিরাজের সপ্তাকাশ ভ্রমণের আংশিক আলোচনা করেছিলাম। আজ বাকিটুকু করতে চেষ্টা করব। পঞ্চম আকাশের কার্যক্রম শেষ করে হযরত জিব্রাঈল আ. রাসূলুল্লাহ সা. সহ ষষ্ঠ আকাশের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছলেন। এখানেও দ্বাররক্ষী ফিরিশতাদের পূর্ববৎ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। যথাযথ উত্তর প্রদানের পর দ্বার খোলা হলে বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. ষষ্ঠ আকাশে পদার্পণ করলেন। এখানে হযরত মূসা আ.-এর সাথে তার মোলাকাত হলো। মারহাবা হে পুণ্যবান পয়গাম্বর এবং পুণ্যবান ভ্রতা বলে তিনি তাকে সাদর সম্ভাষণ জানালেন। তারপর পিয়ারা নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. যখন সামনে অগ্রসর হলেন, তখন হযরত মূসা আ. কেঁদে উঠলেন। এমন সময় গায়েব হতে আওয়াজ আসল, হে মুসা আ., তোমার এ কান্নার কারণ কী? হযরত মূসা আ. বললেন, হে বারে এলাহী, আমার বেশ পরবর্তীকালে এই সাইয়্যেদুল মুরসালীন নওজোয়ানকে আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী করে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। আমার উম্মতের চেয়ে তার উম্মত অধিকসংখ্যক জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ জন্য আমি অশ্রæবরণ করছি।
তারপর হযরত জিব্রাঈল আ. হাবীবে কিবরিয়া মুহাম্মাদ সা. কে সাথে নিয়ে সপ্তম আকাশের দিকে রওয়ানা হলেন। সপ্তম আকাশের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হলে দ্বাররক্ষী ফিরিশতাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। যথাযথ উত্তর প্রদানের পর দ্বার খোলা হলে সাইয়্যেদুল কাউনাইন সা. সপ্তম আকাশে পদার্পণ করলেন। সেখানে হযরত ইব্রাহীম আ. তাকে মারহাবা হে পুণ্যবান সন্তান বলে অভ্যর্থনা জানালেন। হযরত জিব্রাঈল আ. বললেন, ‘তিনি আপনার পিতা হযরত ইব্রাহীম আ.।’ হযরত ইব্রাহীম আ. বায়তুল মামুরের (আবাদগৃহের) দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে ছিলেন। যার মাঝে প্রতিদিন সত্তর হাজার ফিরিশতা এবাদতের জন্য প্রবেশ করে। যারা একবার প্রবেশ করে তারা দ্বিতীয়বার প্রবেশের সুযোগ পায় না। আল্লাহপাকের ফিরিশতাদের সংখ্যা কত তা কেবল মাত্র তিনিই জানেন।
তারপর রাসূলুল্লাহ সা. কে জান্নাতে পরিভ্রমণ করানো হল। এর গম্বুজ ছিল মতির তৈরি এবং জমিন ছিল মেশকে পরিপূর্ণ। এবং তাকে জাহান্নামও পরিভ্রমণ করানো হয়। বেশ কিছু কিতাবÑযেমন ইবনে হাতীমের তাফসীর, ইবনে জারীরের তাফসীর এবং বায়হাকীর দালায়েলুন নাবুওতে জান্নাত এবং জাহান্নামের অনেক অত্যাশ্চর্য দৃশ্যাবলী অবলোকন করা এবং বিভিন্ন পয়গাম্বর ও ফিরিশতাদের সঙ্গে মোলাকাত ও কথোপকথনের বিস্তৃত বিবরণ আছে। এ সবল বর্ণনা আবু হারুন আবাদ, আবু জাফর রাজী এবং খালিদ বিন এজিদ বর্ণনা করেছেন। তাদের মাঝে আবু হারুন আবদী এবং খালেদ বিন এজিদ মশহুর মিথ্যাবাদী ছিলেন বলে জানা যায়। তবে আবু জাফর রাজীকে যদিও কোনো কোনো গবেষক সমর্থনযোগ্য বলেছেন, কিন্তু অধিকাংশ মোহাদ্দেসীনের মতে সে দুর্বল এবং অপছন্দনীয় বর্ণনাকারী। জমহুর মোহাদ্দেসীনের মতে তার একক বর্ণনাকে কোনোমতেই গ্রহণ করা যায় না। তাছাড়া উল্লিখিত কিতাবসমূহের বর্ণনাবলীতে এমনসব অসংলগ্ন ও বেহুদা কথাবার্তা রয়েছে, সেগুলোকে মোহাদ্দেসীনগণ মেনে নিতে পারছেন না। হয়ত অসাবধানতা বশত:ই এসকল বর্ণনাকে উল্লিখিত তাফসীরকারগণ নিজেদের কিতাবে স্থান দিয়েছেন। তবে, মোদ্দাকথা হচ্ছে এই যে, এ সকল দৃশ্যাবলী প্রত্যক্ষদর্শন সংক্রান্ত বিবরণ সহীহ বুখারীতে এভাবে ব্যক্ত হয়েছে যে, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. কে এসকল দৃশ্যাবলী অন্য একস্থানে দেখানো হয়েছিল। তাই এর সাথে মিরাজের কোনো যোগসূত্র না থাকারই কথা। এই উভয়দিকের বর্ণনাবলীর মাঝে সামঞ্জস্য বিধানের লক্ষ্যে কোনো কোনো গবেষক বলেছেন যে, অত্যাশ্চর্য দৃশ্যাবলীর প্রত্যক্ষদর্শন কর্মটিকে দু’বার বর্ণনার মাঝে কোনো বিরোধ অবশিষ্ট থাকে না। যেমন নূর নবী রাসূলুল্লাহ সা. হযরত জিব্রাঈল আ. কে আসল সুরতে দু’বার দেখেছিলেন। একবার জাবালে নূরের মুক্তকাশে এবং দ্বিতীয়বার সিদরাতুল মুনতাহায়। জান্নাত ও জাহান্নামের প্রত্যক্ষদর্শন ও একাধিকবার হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। সবই আল্লাহপাকের ইচ্ছা। সবকিছু তার এলমে নিহিত আছে। ওয়াল্লাহ আ’লামু বিস সাওয়াব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন