রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আসহাবুল উখদুদ বা গর্তওয়ালাদের ধ্বংস

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

জমিনে গর্ত করে এবং তাতে আগুন জ্বালিয়ে ঈমানদার লোকদের তার মধ্যে নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে মারার ঘটনার কথা আল কুরআন ও হাদিসে রাসূল-এ পাওয়া যায়। আল কুরআনের ৮৫ নং সূরা বুরুজের ৪ নং আয়াত হতে ৮ নং আয়াত পর্যন্ত আসহাবুল উখদুদের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ সম্পর্কে বহু হাদিস আছে। তন্মধ্যে সহিহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদিসের সারমর্ম এই, অন্ধকার যুগে এক কাফের বাদশাহ তার গণকের কাছে একটি বালকের জাদু শিক্ষালাভের জন্য নিয়োজিত করেছিল। বালকটির যাতায়াত পথে একজন পাদ্রী/রাহেব (নাসারাদের প-িত) ব্যক্তির আস্তানা ছিল, সময়টি ছিল নাসারা ধর্মের জামানা। বালকটি গোপনে সে পাদ্রীর ভক্ত হয়ে যায় এবং তার নিকট নাসারা ধর্মের দীক্ষা লাভ করতে থাকে। পাশাপাশি চলতে থাকে গণকের কাছে জাদুবিদ্যা শিক্ষা। এই বালকটিকে অনুসরণ করে অন্য একজন লোকও নাসারা ধর্ম গ্রহণ করে। মোটকথা, বালকটি নাসারা ধর্মের কিছু মৌলিক গুণ অর্জন করতে সক্ষম হয়।

একদা বালকটি দেখতে পেল একটি বাঘ দিনে দুপুরে পথিমধ্যে লোকজনকে বিব্রত, ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলছে। জনমানুষ দিশেহারার মতো এদিক-সেদিক ছুটে পালাচ্ছে। তখন সে বাঘটিকে এই বলে একটি পাথর মারল, হে আল্লাহ যদি পাদ্রী সত্য হয়, তবে এ পাথরের আঘাতে বাঘটি নিহত হোক। আর যদি গণক সত্য হয়, তবে না হোক। আল্লাহর কি মহিমা, পাথরের এক আঘাতেই বাঘটি মারা গেল এবং জনসাধারণ বাঘের আক্রমণ হতে রক্ষা পেল। তারপর একজন অন্ধ লোক বালকটির দোয়ায় দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল এবং নাসারা ধর্ম গ্রহণ করল।

কাফির বাদশাহ এই ঘটনা জানতে পেরে পাদ্রীকে হত্যা করে ফেলল এবং দৃষ্টিশক্তি লাভকারী লোকটিকেও মেরে ফেলল। তারপর বালকটিকে হত্যার জন্য নানারূপ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। তখন বালকটি বলল, আমাকে এভাবে জ্বালাতন না করে, ‘বিসমিল্লাহ’ বলে আমার প্রতি তীর নিক্ষেপ করো, তবেই আমি মারা যাব। সুতরাং কাফির বাদশাহ এভাবেই তাকে হত্যা করে।

এই ঘটনার পর বহু লোক নাসারা ধর্মে দীক্ষিত হয়ে পড়ে। তখন বাদশার নির্দেশে বিরাট এক গর্ত খনন করে তার মধ্যে জ্বালানি কাঠ ভর্তি করে ভীষণ এক অগ্নিকু- প্রজ্বলিত করা হয়। কাফের বাদশাহ তার পরিষদ দলসহ উপস্থিত থেকে নাসারাগণকে তাতে নিক্ষেপ করে তামাশা ও হৈ-হুল্লোড় করতে থাকে। ঐতিহাসিক মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকের মতে প্রায় ২০ হাজার লোককে অগ্নিকু-ে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। ঐতিহাসিক তাবারি উল্লেখ করেছেন যে, সেই কাফির বাদশাহর নাম ছিল জুনওয়াহ। সে ইহুদি এবং ইয়েমেনের বাদশাহ ছিল।

এই ঘটনার কথা জানতে পেরে আবিসিনিয়ার রাজা নাজ্জাশী প্রতিশোধ গ্রহণের নিমিত্ত সেনাপতি আবরাহার নেতৃত্বে এক বিরাট সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। আবরাহার হাতে জুয়াওয়াহ ও তার দলবল পরাজিত ও সমূলে ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে ইহুদি ধর্মের পরিবর্তে নাসারা ধর্ম ইয়েমেনে প্রসার লাভ করে। এই আবরাহা কাবা শরীফ ধ্বংস করতে গিয়ে আবাবিল পাখির কঙ্করের আঘাতে হস্তিবাহিনীসহ মিনার অদূরে ধ্বংস হয়েছিল। আল কুরআনের ১০৫ নং সূরা ফিলে আবরাহার ধ্বংসের কথা বিবৃত হয়েছে। তৎকালীন আরবদের মধ্যে এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীও বিদ্যমান ছিল।

ঐতিহাসিক মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক বলেন, হযরত ওমর রা:-এর শাসন আমলে ইয়েমেনে রাস্তা বা বাড়ি নির্মাণের সময় উক্ত বালকটির লাশ ‘কানে হাত দেয়া ও রক্ত প্রবাহিত’ অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। পরে তাকে যথাযথ সম্মানসহ অন্যত্র দাফন করা হয়। উক্ত বালকটির নাম ছিল আবদুল্লাহ ইবনে তামের।

এবার আবরাহার ধ্বংসের কথা জানা যাক। উল্লেখিত সেনাপতি আবরাহা আবিসিনিয়া রাজ্যের অধীনে ইয়েমেনের শাসনকর্তা পদে নিয়োজিত ছিল। সে এবং তার সঙ্গী সাথীরা ছিল নাসারা। তাই সে একটি গির্জা নির্মাণ করে কাবার যাত্রীগণকে এই গির্জায় হজ করতে আহ্বান জানায়। আরবদের, বিশেষত কুরাইশদের তা পছন্দ হয়নি। এক রাতে জনৈক আরব তথায় গিয়ে এতে পায়খানা করে দেয়। ঐতিহাসিক মুকাতিল বলেন, একজন আরব তথায় আগুন জ্বালিয়েছিল, বাতাসের দরুন গির্জাতে আগুন লেগে তা ভস্মীভূত হয়ে যায়।

উক্ত ঘটনায় আবরাহা ক্রোধান্বিত হয়ে বহু সৈন্য এবং হস্তিবাহিনীসহ কাবা শরীফ ধ্বংসের জন্য রওনা হয়। মখমছ নামক স্থানে পৌঁছে সে কাবা শরীফের তৎকালীন প্রধান খাদেম আব্দুল মুত্তালিবকে বলে পাঠায়, আমি যুদ্ধ করতে আসিনি। শুধু কাবাকে ধ্বংস করতে এসেছি। তবে কেউ যদি একে রক্ষা করতে চায়, অবশ্য তার সাথে যুদ্ধ করব। তিনি উত্তর দিলেন যার ঘর তিনি কাবাকে রক্ষা করবেন। স্বয়ং আবরাহার সাথে সাক্ষাৎ করে তিনি এ কথা বলে আসলেন এবং কুরাইশদের নিয়ে পাহাড়ে আত্মগোপন করেন।

আবরাহা মুজদালিফার নিকটবর্তী মুহাছ্ছার নামক স্থানে পৌঁছলে সমুদ্রের দিক হতে, কবুতর অপেক্ষা কিঞ্চিত ছোট আকারের সবুজ ও হলদে রঙের কতগুলো পাখি পায়ে ও চঞ্চুতে মসুর ও ছোলার মতো পাথরসহ এসে তাদের ওপর তা নিক্ষেপ করতে লাগল। আশ্চর্যের বিষয় পাথরগুলো গুলির মতো লাগতে লাগল এবং বহু সৈন্য ও আবরাহা তাতে নিহত হলো। যারা পালিয়ে ছিল তারাও নানাভাবে বিপন্ন হয়ে প্রাণ হারাল। এই ঘটনা রাসুলুল্লাহ সা.-এর জন্মের ৪০ দিন পূর্বে সংঘটিত হয়েছিল। হযরত আয়েশা রা. বলেন, সে দলের বহু মানুষকে অন্ধ অবস্থায় তিনি ভিক্ষা করতে দেখেছেন। নওফেল ইবনে আবি মারিয়া বলেন, তিনি ওই সমস্ত নিক্ষিপ্ত পাথর দেখেছেন। মুসনাদে আহমদে বর্ণিত আছে পাথর লেগে কারো ক্ষত, কারো বসন্তরোগ হয় ও তা বৃদ্ধি পেয়ে তাদের মৃত্যু ঘটে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Farhana Hassan ২৫ অক্টোবর, ২০১৯, ৩:৪০ এএম says : 0
subhanallah.. eirkm niomito quranic torjoma deyar jonno abedon roilo..
Total Reply(0)
Jahid Hasan ২৫ অক্টোবর, ২০১৯, ৩:৪১ এএম says : 0
আল্লাহু আকবার৷
Total Reply(0)
Abdur Rashid ২৫ অক্টোবর, ২০১৯, ৩:৪১ এএম says : 0
মাশাআল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাচবার তৌফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
Abdullah Salim ২৫ অক্টোবর, ২০১৯, ৩:৪২ এএম says : 0
হে আল্লাহ, আমাদের সবাইকে হেদায়েত দান করেন । আমিন আমিন
Total Reply(0)
Fahana ২৫ অক্টোবর, ২০১৯, ৩:৪২ এএম says : 0
হে আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তৈফিক দান করুন। আমিন
Total Reply(0)
AC Abdus ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৮ পিএম says : 0
আলহামদুলিললাহ, আল্লাহ আকবার! ইসলাম ধর্মে র এত এত শৌরয বীরযের কাহিনি শোনার পরেও যদি কেউ মনে করে মুসলিমরা অসহায় তবে তারা বোকার রাজ্যে বাস করছে। তবে এটুকু সত্য যে মুসলিমদের ঈমানদার হতে হবে তবেই কেবল আল্লাহর পক্ষ হতে সাহায্য আসবে ইনশাল্লাহ!
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন