সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ইসিতে অভিযোগের পাহাড়

দুই সিটিতে চলছে আচরণবিধি লঙ্ঘন

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে মেয়র ও কমিশনার প্রার্থীদের মধ্যে চলছে আচরণবিধি লংঘনের প্রতিযোগিতা। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের একে অপরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রায় শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে রিটার্নিং অফিসারে কার্যালয়ে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রঙিন পোস্টার ও ফেস্টুন ছাপানো, হামলা, যান চলাচলে বিঘœ ঘটিয়ে নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ সাধারণ অভিযোগও। ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে এ ধরণের লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী। অনেক প্রার্থীকে ডেকে সাবধান করা হচ্ছে, আবার অনেককে শোকজ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়কারী ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার পরিচালক ইদ্রিস সিদ্দিকী ইনকিলাবকে বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট সমন্বয় করছেন ঢাকা জেলা প্রশাসক। আমার কাছে রিপোর্ট আসেনি। তবে কোথাও আচরণবিধির বড় ধরণের ব্যত্যয় ঘটলে তা ক্ষতিয়ে দেখা হবে।

অভিযোগের সত্ত¡তা স্বীকার করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের রিটার্নিং অফিসার মো. আবুল কাশেম বলেন, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পেলে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কাছ থেকে নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের ৮ থেকে ১০টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রত্যেকটি অভিযোগে আমরা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছি। গতকাল আমরা পাঁচটি ওয়ার্ড পরিদর্শন করেছি। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে দুই মেয়র প্রার্থীর পোস্টার ঝুলতে দেখেছি। একটি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখি একাধিক লাউড স্পিকার ব্যবহার করছে। আমরা সেই কাউন্সিলর প্রার্থীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। রিটার্নিং অফিসার বলেন, আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যারা আচরণবিধি লঙ্ঘন যে করবে আমরা তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবো।

গত মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামের প্রচারণায় বিধিমালা ভেঙ্গে অংশ নেন ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাদেক খান। অথচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ২২ নম্বর ধারা অনুযায়ী বলা আছে সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। এর আগে শনিবার মিরপুরের শাহ আলী মাজারে নির্বাচনী পথসভায় অংশ নেন আতিক যা নির্বাচন বিধির ২০তম ধারার লঙ্ঘন। এদিন তিনি আচরনবিধি অগ্রাহ্য করে প্রচারণা চালিয়েছেন গাড়িতে চড়ে। ২১ নম্বর ধারা ভেঙ্গে দুপুর ১২টা থেকেই ব্যবহার করেছেন মাইক। আচরণবিধি মানছেন না ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল। আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী, নির্বাচনের আগে মিছিল বা শোডাউনের মাধ্যমে জনভোগান্তি সৃষ্টি করা যাবে না। অথচ সোমবার মিছিল নিয়ে ফার্মগেট ও তেজগাঁওয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন তাবিথ আউয়াল। এসব অভিযোগ এখন ইসিতে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেম বলেন, নির্বাচন আচরণ বিধিমালার প্রত্যেকটা অক্ষর, লাইন, শব্দ দেখে মেনে চলতে হবে। আমরা স¤পূর্ন, স্বাধীন এবং নিরপেক্ষভাবে কাজ করেছি। এখানে প্রত্যেকে আমাদের প্রার্থী। যদি কেউ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ভঙ্গ করেন তাহলে তাদের অনূর্ধ্ব ৬ মাসের কারাদন্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার ক্ষমতা রয়েছে। এর আগে শুক্রবার ঢাকা দক্ষিণে বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেন নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে। সরকারি দল দাবি করেছে তা নির্বাচনী আচরণবিধিমালার লঙ্ঘণ।

এদিকে শনিবার আওয়ামী লীগের দক্ষিণ সিটির মেয়র প্রার্থী ফজলে ন‚র তাপসের বিরুদ্ধেও উঠেছে আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগ। মিছিল নিয়ে শোডাউন করে চালিয়েছেন প্রচারণা। মানেননি মাইক ব্যবহারের বিধিনিষেধও। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন বলেন, আমরা খুব যে একবারে কঠোর হস্তে দেখা হচ্ছে সেটা কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আমাদের যারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছেন তাদেরকে নিয়ে একটা বৈঠক করবো। আচরণবিধি মানার জন্য প্রার্থীদের বাধ্য করতে হবে। প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন কি না তা পর্যবেক্ষণে উত্তরে ১৮ ও দক্ষিণ সিটিতে ২৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন। তফসিল ঘোষণা থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত অভিযোগ জমা পড়েছে। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করেছেন বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।

ইতিমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটিতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের একটি অভিযোগের সত্যতা পাননি ম্যাজিস্ট্রেট। বাকিগুলো খতিয়ে দেখার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটদের চিঠি দেয়া হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনেন। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়কারী ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার পরিচালককে চিঠি দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

ঢাকা উত্তরের চেয়ে দক্ষিণ সিটিতে বেশি অভিযোগ জমা পড়ছে। প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে দু’শ থেকে তিনশ’ লোকজন নিয়ে নিজের ওপর হামলার অভিযোগ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. জহিরুল হক ভ‚ঁইয়া। তিনি বলেছেন, শান্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি মিটিং থেকে ডেকে নিয়ে আমার ও আমার ছেলের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং কিলঘুষি দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। আমি প্রাণ বাঁচাতে স্কুলে আশ্রয় নিলে প্রতিপক্ষের লোকজন স্কুল ঘিরে ফেলে। প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমি অভিযোগ দায়ের করার পর প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীকে শোকজ করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। খিলগাঁও থানার ওসি নিজে এসে তদন্ত করে প্রমাণ পেয়েছেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মো. আবদুস সাহেদ মন্টু প্রতিপক্ষ কাউন্সিলর প্রার্থীর ছেলে ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে হুমকি দেয়ার অভিযোগ দায়ের করেন। বিএনপির এ নেতা তার অভিযোগে উল্লেখ করে ২ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে প্রতিপক্ষ কাউন্সিলর প্রার্থীর ছেলে ও ভাইয়ের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন আমাকে ও আমার সঙ্গে থাকা ৪-৫ জন মুসল্লিকে গালাগাল করেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের জাতীয় পার্টি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে পোস্টার ও ফেস্টুন লাগানোর অভিযোগ আনেন। অভিযোগে তিনজন প্রার্থীর কোথায় কোথায় রঙিন পোস্টার রয়েছে সেই স্থানের নাম উল্লেখ করে ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. লিয়াকত আলী তার বাড়ির সামনের রাস্তা দখল করে ক্যাম্প স্থাপনের অভিযোগ আনেন প্রতিপক্ষ প্রার্থীর বিরুদ্ধে। ভোটকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত দক্ষিণ মুসন্দি গার্লস হাইস্কুলের মধ্যে ক্যাম্প স্থাপনের অভিযোগ করেন। যদিও ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার কথা সংশ্লিষ্ট সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। এছাড়া আরও কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী অভিযোগ করেছেন। তবে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দোষ স্বীকার করেছেন সংরক্ষিত-১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী শেফালী রানী মল্লিক।

ম্যাজিস্ট্রেটদের রিপোর্ট পান না দুই রিটার্নিং কর্মকর্তা: তফসিল ঘোষণার একদিন পরই ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা দুই সিটিতে নামেন ৪৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ইতিমধ্যে দুই সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা স্ব স্ব ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে বৈঠক করে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন দুই রিটার্নিং কর্মকর্তা। নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিদিন ম্যাজিস্ট্রেটরা কোথায় কোথায় পরিদর্শন করেছেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছিল কিনা, এর পরিপ্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা একীভ‚ত করে রিপোর্ট আকারে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানোর কথা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন