পাল্টে গেছে রাজধানী ঢাকার দৃশ্যপট। বহুদিন পর এই মহানগরীর মানুষ নৌকা আর ধানের শীষের সমানতালে প্রচারণা দেখছেন। ঢাকার রাজপথ থেকে গলিপথ, পাড়া-মহল্লার অলিগলি, নৌকা-ধানের শীষের পোস্টারে ছেঁয়ে গেছে। কোথাও কোথাও জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবিসহ অন্যান্য দলের মেয়র প্রার্থীদের পোস্টারও চোখে পড়ছে। প্রার্থীদের চিরাচরিত ভোট প্রার্থনা চলছে। পূজার দিন ভোট নিয়ে বিতর্ক চলছে। সরেজমিন প্রচারণার পাশাপাশি ডিজিটাল তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভোট প্রার্থনা নির্বাচনী প্রচারণায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ভোটের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে ছাত্ররা অনশন করছেন, হিন্দু সম্প্রদায় তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা যেখানে যাচ্ছেন নেতাকর্মীরা ভিড় করছেন। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণাযুদ্ধে ভোটের মাঠ উত্তপ্ত হলেও ভোটারের তেমন সাড়া নেই। বড় দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভোট দেয়ার আগ্রহ দেখা গেলেও সাধারণ ভোটাররা অনেকটাই নীরব। এমনকি ভোটের দিন তারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন কি না তা নিয়েও অনেকেই রয়েছেন সংশয়ে।
রাজধানীর হাট-বাজার, চায়ের দোকান, অফিস-আদালত সর্বত্রই চলছে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা। মেয়র-কাউন্সিলর-মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীদের যোগ্যতা, মেধা, দক্ষতা এবং কর্মতৎপরতা নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। অনেকদিন পর নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের নির্বিঘœ প্রচারণা ভোটের মাঠে ‘সমতা’ ক্ষেত্র তৈরি করেছে। কিন্তু নির্বাচনের দিন ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন কিনা তা নিয়ে দ্বিধাদ্ব›েদ্ব রয়েছেন মানুষ। কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বললে তারা জানান, বিপুল সংখ্যক ভোটারকে গত মেয়র নির্বাচনে ভোট দিতে দেয়া হয়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে ভোট দিতে পারেননি তারা। এই তিক্ত অভিজ্ঞতায় তারা ভোট নিয়ে আগ্রহ হারিয়েছেন। এছাড়া সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেয়া, গোপন বুথে ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীদের ভোটদান, ইভিএম মেশিনে একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেয়ার ঘটনা ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের ‘আগাম বার্তা’ মনে করছেন। আর বিএনপির পিছুটান রাজনীতির চেতনা আগামী কয়েক বছর রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের একাচ্ছত্র আধিপত্য সুনিশ্চিত করেছে। এ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্ব›েদ্ব পড়েছেন দুই সিটির বেশির ভাগ ভোটার।
সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। তীব্র শীত আর কুয়াশা উপেক্ষা করে কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত অবদি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোট প্রার্থনায় পাড়া মহল্লায় ঘুরছেন। ঢাকা এখন পোস্টারের নগরীতে পরিণত হয়ে গেছে। শুধু বিল্ডিং-দালান-কোঠা আর গাছপালায় নয়, দীর্ঘ দড়িতে পোস্টার ঝুলিয়ে রাজধানীর অলি-গলি রাজপথ ছেয়ে ফেলা হয়েছে। দুপুরের পর থেকে চলছে মাইকিং, মিছিল, শোভাযাত্রা, উঠান বৈঠক। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে এসব কর্মকান্ডে যোগ দিয়েছেন কর্মীরাও। সিটি ভোটকে ঘিরে রাজনীতির মাঠ এখন সরগরম। অথচ নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন এতোকিছুর পরও ভোটের মাঠে সাধারণ ভোটারের আগ্রহের কোনো প্রতিফলন নেই। লোক সমাগমের স্থানগুলোতে দৃশ্যমান হচ্ছে না ভোটের সরব আলোচনা। বরং ভোট নিয়ে জনমনে বিরাজ করছে নানামুখী উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-ভীতি-আতঙ্ক। ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রায় অর্ধশত ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ভোট দেয়া নিয়ে তারা দ্বিধাদ্ব›েদ্ব রয়েছেন। ভোটকেন্দ্রে যাবেন কিনা এখনো সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেননি। ভোট দেয়ার বিষয়টি নিয়ে বন্ধু-বান্ধব-পরিজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন। তবে তাদের প্রত্যাশা নির্বাচনে যে প্রার্থীই জিতুক, ভালোয় ভালোয় যেন ভোটপর্ব শেষ হয়; এটাই একমাত্র চাওয়া!
এদিকে নির্বাচনের তারিক পরিবর্তনের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনশন করছেন। এর আগে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য জাতীয় পরিষদ নির্বাচন কমিশনে আবেদনের মাধ্যমে ৩০ জানুয়ারি পূজার দিন ভোটগ্রহণ না করার দাবি জানিয়েছেন। অতপর সংগঠনটির নেতারা নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে গিয়ে ইসির সঙ্গে বৈঠক করে দুর্গাপূজার দিন ভোট না করে তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং কিছু শিক্ষক সংগঠন ভোটের তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের একাধিক এমপি ভোটের তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নির্বাচনী প্রচারণার পাশাপাশি তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানানো হচ্ছে।
৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে গতকাল শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের মতো আমরণ অনশন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি গ্রæপ। এ সময় চার শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ হল ইউনিয়নের সহ-সভাপতি উৎপল বিশ্বাস জানান, ক্যাম্পাসে অনশনের সময় তাঁদের হলের ছাত্র অপ‚র্ব চক্রবর্তী ও অর্ক সাহা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া জগন্নাথ হল ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কাজল দাস ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক প্রদীপ দাস অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের স্যালাইন দেয়া হয়।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৩০ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন দেশব্যাপী উদ্যাপিত হবে হিন্দু স¤প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা। এই পূজাকে কেন্দ্র করে নির্বাচন পেছানোর নির্দেশনা চেয়ে ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ। ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্ট রিট সরাসরি খারিজ করে দেন। গত ১৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রিট খারিজের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিব মো. আলমগীর বলেছেন, আদালত যে রায় দেবে সে অনুযায়ী নির্বাচন হবে।
ঢাকা উত্তর
নৌকা প্রার্থী : গতকাল শুক্রবার ঢাকা উত্তর সিটির মানিকদি কালিবাড়ির বাউনিয়া এলাকা থেকে অষ্টম দিনের গণসংযোগ শুরু করেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। তিনি ভোটারদের প্রতিশ্রæতি দেন আসন্ন নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনবেন।
মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামের একান্ত সচিব সাইফুদ্দিন ইমন জানান, শুক্রবার কালিবাড়ির (বালুঘাট) বাউনিয়া মোড় থেকে গণসংযোগ শুরু করে মানিকদি, মাটিকাটা, লালসরাই এলাকায় এবং দুপুরের পর ভাষানটেক, বাইগারটেক, আলব্দীটেক, বারনকোট, দামালকোট, বিআরবি কোলনি এলাকায় গণসংযোগের মাধ্যেমে নৌকার পক্ষে ভোট চান আতিকুল ইসলাম। তিনি ভোটারদের মধ্যে লফটলেট বিতরণ করেন এবং নানান প্রতিশ্রæতি দেন।
ভোটারদের উদ্দেশে এ সময় আতিকুল ইসলাম বলেন, আপনারা নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে যদি আমাকে নির্বাচিত করেন, তাহলে আমি কথা দিতে চাই, মেয়র, কাউন্সিলরসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনব। এছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতি মাসে সবাইকে নিয়ে টাউন হল মিটিং করব। যে মিটিংয়ে কাউন্সিলরসহ এলাকার জনগণ উপস্থিত থাকবেন। এলাকার যত সমস্যা, যা সমাধান হয়নি, এলাকার উন্নয়নে আর কি কি করা বাকি আছে, কোন কাজ আগে করতে হবে, অর্থাৎ সমস্যা চিহ্নিত এবং তার সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে সেসব টাউন হল মিটিংয়ে। যার মাধ্যমে জনগণের কাছে আমাদের সবার জবাবদিহিতা থাকবে।
উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আসন্ন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে তিনি আরো বলেন, নৌকার কোনো ব্যাক গিয়ার নেই, নৌকার আছে শুধু ফ্রন্ট গিয়ার। আর এ ফ্রন্ট গিয়ার মানে শুধু উন্নয়নের গিয়ার। নয় মাস দায়িত্ব পালনকালে আমরা নানা সমস্যা চিহ্নিত করেছি, সেসব সমস্যা সমাধানে পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ৩০ জানুয়ারির ভোটে আমি নির্বাচিত হলে ফুটপাথ, এলইডি লাইট, ড্রেনেজ, রাস্তাসহ আধুনিক পরিকল্পিত বাসযোগ্য ঢাকা গড়ার কাজ আগামী ছয় মাসের মধ্যে শুরু করব ইনশা আল্লাহ্।
ধানের শীষ : গতকাল শুক্রবার ঢাকা উত্তরের বিএনপি মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল সকাল সোয়া দশটায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নুরজাহান রোড এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। অতপর আশপাশের কয়েকটি এলাকায় ঘুরে ঘুরে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন। ডিএনসিসি’র বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, গত ১৬ জানুয়ারির পরিস্থিতি ছিল মেনে নেয়ার মত। আজকেও তাই হবে আশা করছি। এখন পর্যন্ত সব কিছু শান্তিপ‚র্ণ আছে। আমরা প্রতিদিন ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করি। যেখানেই যাচ্ছি জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আজকে যেখানে এসেছি এখানেও জনগণ সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিলো। আমরা দেখছি সাধারণ নাগরিকরা অনেক উৎফুল্ল মনে এগিয়ে আসছে। আমরা যে রকম সাড়া পাচ্ছি, এতে বিশ্বাস করি যদি আগামী ৩০ জানুয়ারি এরকমভাবে শৃঙ্খলা থাকে তাহলে আমাদের নিশ্চিত বিজয় হবে।
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তাবিথ বলেন, প‚জার দিন নির্বাচন দিয়ে নির্বাচন কমিশন ইচ্ছাকৃতভাবে এ বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে তারা হাস্যকর ও অসম্মানজনক মন্তব্যও করছেন। প‚জার দিনে নির্বাচন কারো জন্যই মঙ্গলজনক নয়। এ বিষয়ে আপীল বিভাগের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে তাবিথ আউয়াল বলেন, ইসিতে আমরা কিছু অভিযোগ করেছি। ইলেকশন কমিশন কী ব্যবস্থা নেয় আমরা তা দেখার অপেক্ষায় আছি। তবে বলতে পারি প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। আজকে আমরা বলতে পারি সব কিছু শান্তিপ‚র্ণ আছে।
হাতপাখা : ঢাকা উত্তরের ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ গতকাল শুক্রবার নগরীর কাফরুল থানার বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেছেন। এ সময় হাতপাখা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে পরিকল্পিত ভাবে সংকট তৈরি করা হচ্ছে। ৩০ জানয়ারি দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা। দেশে নির্বাচন এখন আতংকের বিষয়। আতংকের মধ্যে ধর্মীয় উৎসব পালন করা যায় না। আবার পূজার কারণে ভোটারদের ভোটকেন্দ্র থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হবে। দূরভিসন্ধিমূলকভাবেই পূজার দিনে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ায় সরকারের অনুমোদনেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। অতঃএব সরকার এর দায় কিছুতেই এড়াতে পারে না।
ঢাকা দক্ষিণ
নৌকা প্রার্থী : গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বংশাল থানার ফুলবাড়িয়ায় কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালের সামন থেকে নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করেন ডিএসসিসির আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে ন‚র তাপস। অতপর তিনি ঢাকা দক্ষিন সিটির বিস্তীর্ণ এলাকায় জনসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ৩০ জানুয়ারি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইনশাল্লাহ বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। জনগণের ভোটে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। আমরা অত্যন্ত সুষ্ঠু পরিবেশে গণসংযোগ করছি। কোনো রকম আচরণবিধি লঙ্ঘনের অবকাশ নেই। নেতাকর্মী ও জনগণের মাঝে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ আছে। ইনশাল্লাহ আগামী ৩০ জানুয়ারি আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।
ধানের শীষ প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগের সুরে তাপস বলেন, আমরা গণসংযোগ নিয়ে ব্যস্ত আর ওনারা গুজব নিয়ে ব্যস্ত। হয়তো বা আমিই একমাত্র মেয়রপ্রার্থী যিনি ঐতিহ্যবাহী ঢাকাকে নিয়ে চিন্তা করে সুনির্দিষ্ট উন্নয়নের রূপরেখা দিয়েছি। আমরা মৌলিক যে ৫টি উন্নয়নের রূপরেখা দিয়েছি, তার পুরোটাই হলো আমাদের ঐতিহ্যবাহী ঢাকাকে নিয়ে। আমরা ঢাকাকে ভালোবাসি, ঢাকা আমাদের গর্ব। গর্বকে পুনরুদ্ধার করতে সংস্কৃতি, ঐতিহ্য পুনর্জীবিত করব এবং উন্নত ঢাকা গড়ে তুলব।
ধানের শীষ প্রার্থী : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন শুক্রবার শনির আখড়ার দনিয়ায় বর্ণমালা স্কুল থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। অতপর তিনি বিস্তীর্ণ এলাকা ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে ভোট পার্থনা করেন। তিনি বলেন, জনগণের অধিকার আদায়ে যদি জীবন দিতে হয়, তবে জীবন দিতেও প্রস্তুত আছি। ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি আপনাদের বলতে চাই, কোন বাধা মানবেন না। কোন ভয় পাবেন না। আমার বাবা আমাকে সবসময় বলেছেন, কোন মানুষের কাছে মাথা নত করবো না। আমাদেরকে মহান আল্লাহতালা বানিয়েছেন, উনাকে শুধু ভয় পাবা। আর দুনিয়াতে কোন মানুষকে ভয় পাওয়ার দরকার নেই। আমরা কারো জমিদারি মানবো না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেবো।
ঢাকা নগরীকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিলে তিলে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে দাবী করে ইশরাক হোসেন বলেন, তারা দেখাচ্ছে অনেক উন্নয়ন হয়েছে, খালি উন্নয়নের বলে জোয়ার আর জোয়ার, কিন্তু বৃষ্টি আসলে আমরা দেখছি এই এলাকা পানির জোয়ারে রাস্তাঘাট ভেসে যায়। আপনারা একটু চিন্তা করে দেখেন গত ১৩ বছরে এমন কোনো অপকর্ম নেই যা এই সরকার করেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক লুটসহ, ধর্ষণ, হত্যা খুন ভোটের অধিকার হরণ, জনগণের কথা বলার অধিকার হরণ করেছে।
৩০ জানুয়ারি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়ার আহ্নবা জানিয়ে ইশরাক বলেন, বিএনপি জনগণের রাজনীতি করে। জনগণের অধিকার জনগণকে ফিরিয়ে দেবো, ভোটের অধিকার আপনাদের ফিরিয়ে দেবো। গণতন্ত্রকে মুক্ত করব, বাংলাদেশ আবারো স্বাধীন করবো। আগামী ৩০ তারিখে আপনারা ভোট কেন্দ্রে যাবেন। আপনারা কোনো বাধা বিপত্তি মানবেন না।
লাঙ্গল প্রতীক : ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থীকে মনে করা হচ্ছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ডামি প্রার্থী। জনসমর্থন এবং দলের নেতাকর্মীরা না থাকলেও লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। অতঃপর মতিঝিল, গোপীবাগ, ধলপুর, টিকাটুলী, রাজধানী মার্কেট, ওয়ারী, জজকোর্ট প্রাঙ্গণ, শ্যামবাজার, সদরঘাট, মিটফোর্ড ও লালবাগে লাঙল মার্কায ভোট চেয়ে গণসংযোগ ও প্রচারণায় অংশ নেন। গণসংযোগকালে তিনি সাতটি পথসভা করেন। পথসভায় তিনি বলেন, এরশাদ যেমনভাবে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করে ঢাকা মহানগরকে তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন, আমিও ঢাকাবাসীর সেবক হতে চাই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন