শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

ইয়াবার ভয়ঙ্কর আগ্রাসন লাখো পরিবারের সন্তানদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে

| প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সৈয়দ শামীম শিরাজী : দেশের সর্বত্র মহামারীরূপে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বনাশা মাদক ইয়াবা। ইয়াবাসেবীর সংখ্যা ক্রমে ক্রমে বেড়ে চলেছে। প্রতিদিন দেশের এক প্রান্ত টেননাফ থেকে বিভিন্ন উপায় ও কৌশলে ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের আরেক প্রান্ত তেতুলিয়া পর্যন্ত। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে, গ্রামগঞ্জে এখন ইয়াবার জমজমাট ব্যবসা প্রসারিত। মিয়ানমারের ৬০ টাকার এই ট্যাবলেট পাচার হয়ে দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে বিক্রি হচ্ছে ৪শ থেকে ৫শ টাকায়। এটি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। আর এ কারণে পেশা পরিবর্তন করে মাদক ব্যবসায় ঝুঁকছে অনেক মানুষ। সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ, এমপি, রাজনৈতিক নেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কাহিনীর কতিপয় সদস্যর সমন্বয়ে গঠিত শক্তিশালী সিন্ডিকেট ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। এ কারণেই কোনভাবেই এর আগ্রাসন রোধ করা যাচ্ছে না, ঠেকানো যাচ্ছে না ইয়াবার ব্যবসা। মাদক চিকিৎসার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা বলেছেন, এখন চিকিৎসা নিতে আসা মাদকসেবীদের অধিকাংশই ইয়াবা আসক্ত। মাদকসেবীরা ধোঁয়ায় উড়িয়ে দিচ্ছে বিপুল অংকের টাকা। ইয়াবার সর্বনাশা থাবায় লাখো পবিরারের সন্তানদের জীবন এখন বিপন্ন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধ্বংস করে মাদক ব্যবসার এই সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইয়াবা প্রবেশ রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতীতের চেয়ে এখন বেশি তৎপর। ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিগত সাত বছরে ৯৫ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করলেও গত বছরে উদ্ধার হয়েছে ২ কোটি পিসেরও বেশি। গত ১৬ জানুয়ারি ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ২৮ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে র‌্যাব। এ যাবৎকালের ইয়াবার সবচেয়ে বড় চালান ছিল সেটি, যার বাজার মূল্য ১১৩ কোটি টাকা। র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কোস্টগার্ড দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অনেক ইয়াবা চালান আটক করে। এর পরেও ঠেকানো যাচ্ছে না এই ভয়ঙ্কর মাদকের অনুপ্রবেশ? বিভিন্ন উপায় ও কৌশলে বন্যার স্রোতের মতো আসছে ইয়াবা। দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা ৫০ লাখ। এরমধ্যে প্রায় ৫০ ভাগ অর্থাৎ ২৫ লাখ মানুষ ইয়াবা আসক্ত। একজন মাদকসেবী দিনে যদি সর্বনিম্নে দু’টি করে সেবন করে তাহলে ২৫ লাখ মাদকাসক্ত প্রতিদিন সাবাড় করছে ৫০ লাখ পিস ইয়াবা। আর এই ৫০ লাখ পিস ইয়াবার পেছনে খরচ করছে দুই’শ কোটি টাকা। মরণ নেশা ইয়াবার একদিনের চাহিদার এমন আশঙ্কাজনক তথ্য খোদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, সর্বনি¤œ ব্যবহারে হিসাবে এই বিপুল পরিমাণ ইয়াবা চাহিদা তথ্য পাওয়া গেলেও প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। হু হু করে ইয়াবাসেবীদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। আর এই ইয়াবা প্রতিদিন আসছে অবৈধ পথে পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার থেকে। দেশের এক প্রান্ত টেকনাফের স্থল ও সাগর পথের ১১টি পয়েন্ট দিয়ে দিনেরাতে ঢুকছে ইয়াবা চালান। আর এই ইয়াবা বিভিন্ন উপায়ে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের আরেক মাথা তেতুলিয়া পর্যন্ত। দীর্ঘদিন টেকনাফে চাকরি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন একজন কর্মকর্তা জানান, টেকনাফ সীমান্তবর্তী এলাকার মাদক প্রচারের পয়েন্টগুলোতে সর্বোচ্চ নজরদারি রাখা হলেও নানা কৌশলে অবিশ্বাস্যভাবে ইয়াবা চালান আসছে যেমন মাছ ধরা ট্রলারে জালে বেঁধে সাগরে ভাসতে ভাসতে, মহাসড়কে কাভার্ডভ্যানে, প্রাইভেটকারে, কুরিয়ার সার্ভিসের পরিবহনের গাড়িতে, মানুষের পায়ের জুতার মোজার ভেতরে ও বিভিন্ন শরীরে অংশের মধ্যে।
ঘটনা এখানে শেষ নয়, সড়ক পথে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ি নজর থাকায় চোরাকারবারীরা মাছ ধরার ট্রলারে করে মাঝিমলাদের সহায়তা এসব ইয়াবা পাচার হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা, গ্রামগঞ্জে ও শহরে। নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, বাংলাদেশে সীমান্তের কাছে মিয়ানমারে ১৫টি স্থানে ৩৭টি ইয়াবা কারখানা রয়েছে। সেখান থেকে সাগর ও সড়ক পথে টেকনাফের শাহারীর দ্বীপে, নয়াপাড়া, সবরাং, নজির পাড়া, মৌলভী পাড়া, লেদা আরোও অনেক পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা চালান বাংলাদেশের প্রবেশ করছে। এসব ইয়াবা তৈরি ও পাচারে আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসায়ী যেমন জড়িত রয়েছে তেমনি বাংলাদেশ-মিয়ানমারের গড ফাদারও রয়েছে। তারা সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিজিবি, কোস্টগার্ড, র‌্যাব পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে ইয়াবা পাচার করে আসছে। যতদূর জানা গেছে, ইয়াবা পাচার ঠেকাতে ২০১৪ সালে ১২ শতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ীর একটি তালিকা করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এরমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযান শুরু হবার পর ইয়াবা চোরাচালান অনেকটা কমে যায়। দেশ-বিদেশি ইয়াবা গড ফাদার পালিয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে অনেকে মারা যায়। কিছুদিন পর থেকে আবার তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। আসলে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সবই সম্ভব। দেশে কঠোর হস্তে জঙ্গি দমন করা সম্ভব হয়েছে। সরকার যদি জঙ্গি দমনের মতো করে ইয়াবা দমনের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে তবে দেশের যুব সমাজ রক্ষা পাবে। দেশও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গুরুত্বসহকারে জরুরিভাবে গ্রহণ করা বাঞ্চনীয় বলে দেশের সচেতন মানুষ মনে করে।
লেখক : সাংবাদিক, কবি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন