হোসেন মাহমুদ : ২০১৬ সাল বিদায়ের গান গাইছে। আজই বছরের শেষ দিন। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কালে কোনো বছরের আগমন ও বিদায় দুই নিয়েই ভীষণ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়ে থাকে। একদিকে অগুণতি প্রায় সংবাদপত্র, আরেকদিকে ডজন দুইয়েরও বেশি টিভি চ্যানেল। কে কাকে ছাড়াতে পারে, সে প্রতিযোগিতায় তারা পারলে সব কিছুকে রঙে রঙিন করে ফেলতে চান। এদিকে দেশের যারা সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ, বিশেষ করে যাদের পকেটে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা থাকে না তাদের এসব আদিখ্যেতা প্রকাশের সময় নেই। তাদের কাছে বছরের শুরুও যা শেষও তা। কিন্তু কথা হচ্ছে, প্রতিটি বছরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের পকেট যেমন ভরায়, তেমনি মনও। সেই ভর-ভরাট অবস্থায় তাদের সারা তনুমন তখন আকুল আবেগে বিদায়ী বছরের কাছে মিনতি জানায়Ñ ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও যাও গো এবার যাবার আগে ’...
এ বছরটি কতভাবে কত পর্যায়ের মানুষের মন রাঙিয়েছে, শ্রী ও সমৃদ্ধির শীর্ষচূড়ে স্থাপিত করেছে আর কত পর্যায়ের কত মানুষের মন ভেঙেছে বা সর্বস্বান্ত করেছে, তার কোনো হিসাব কারো পক্ষেই করা সম্ভব নয়। সারা বছর ধরে দেশে নানা রকম ঘটনা ঘটেছে। সে সব ঘটনার বিবরণ সংবাদপত্রের পাতায় রয়ে গেছে। তার মধ্যে আছে পদ্মাসেতুর কাজ ২০১৬ সােেলই প্রায় ৩৫ ভাগ শেষ হওয়া, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের চুক্তি ও কাজ শুরু। বিশেষ ঘটনা হলো প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বিদেশগামী বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তুর্কমেনিস্তানে অবতরণ। ২০১৬ সালে সারা দেশে মানুষ পূর্বের মতই যথারীতি নিখোঁজ হয়েছে, বন্দুক যুদ্ধে নিহতের ঘটনা অব্যাহত থেকেছে, ‘আমার দেশ’ এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক প্রায় বছর তিনেক ধরে আটক মাহমুদুর রহমান, ২১ মাস ধরে আটক নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও এপ্রিলে গ্রেফতারের পর পাঁচ মাস আটক থাকা প্রখ্যাত সাংবাদিক শফিক রেহমান মুক্তি পান। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে যে রাজনৈতিক সংলাপে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাত করেছে এবং তাঁর সাথে কথা বলে খুশি হয়েছে। এদিকে গত ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে আইভির বিজয়ের পর এ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে যেভাবে প্রশস্তি আর প্রশংসার সুবাতাস বইছে তাতে এ সরকার কোনোদিন যে কোনো নির্বাচনে অনিয়ম-অন্যায় করেছে তা ঢাকা পড়ে যেতে বসেছে। এখন সরকার সমর্থক সবাই মনে করছেন ও বলতে চাইছেন যে বিএনপি নিশ্চয়ই আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে।
নাসিক নির্বাচনের পর প্রায় সকল বিশ্লেষক দেশের নির্বাচন নিয়ে ভালো ভালো কথা বলতে শুরু করেছেন। এই বাংলাদেশে যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপির ভাষায় একটি প্রহসনের নির্বাচন, ইইউ-র ভাষায় ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন ও যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে হতাশাজনক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, বাকিরা নামমাত্র নির্বাচনে নির্বাচিত হন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচন বর্জন ও প্রতিরোধের ঘোষণা দিলেও তাতে কোনো সমস্যা হয়নি। ভোটারশূন্য ও প্রায় ভোটারশূন্য ভোটকেন্দ্রে যথারীতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং কিছু টিভি চ্যানেলেও সেসব ফুটেজ দেখানো হয়। বিভিন্নসূত্রে ৫ থেকে ১০ শতাংশ ভোট পড়ার কথা বলা হলেও নির্বাচন কমিশন ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দাবি করে। লক্ষ্যণীয় যে বিএনপি তাদের মতো বড় দল ও সমমনাদের নিয়ে গঠিত জোটকে ফেলে রেখে নির্বাচন করা সত্ত্বেও সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তোলার বদলে নীরবে সময় ক্ষেপণের সিদ্ধান্ত নেয়। এটি হয় তাদের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। বিএনপি চেয়েছিল যে ’৯১, ’৯৬, ২০০১ ও ২০০৯-এর মতো ২০১৪-র নির্বাচনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। প্রচলিত ধারণা ছিল যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া মানেই নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত হওয়া। কিন্তু ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের রাজনৈতিক পরিকল্পনায় আমূল পরিবর্তন আসে। ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সর্বোচ্চ আদালতের রায় দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের আর কোনো নির্বাচন আর কখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না করার পাকাপাকি পথ রচিত হয়। বিএনপি সেকালে এর বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে পারত। কিন্তু ২০০৯ সালের নির্বাচনী পরাজয়ের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না পারা এবং নেতৃত্বের জৌলুস ম্লান হয়ে আসায় দলটি কিছুই করতে পারেনি। ‘৯১-এর পর তিন বার ক্ষমতায় আসা দলটির এ নেতিয়ে পড়া পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের সুযোগ সন্ধানীদের চোখ এড়ায়নি। সম্ভবত তারা এ সিদ্ধান্তে আসেন যে বিএনপিকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়ার সময় এসেছে। ততদিনে তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথ আইনগতভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। বেগম খালেদা জিয়ার নামের মামলাগুলো পুরোপুরি চালু হয়। এর মধ্যে ২০১৩ সাল এসে গেলে বিএনপি ২০১৪-এর নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার জন্য আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নেয়। আন্দোলন শুরুও হয়। কিন্তু তা যত ব্যাপক শক্তিসম্পন্ন হওয়ার আশা করা হয়েছিল তা হয়নি। অন্যদিকে আওয়ামীলীগ সরকার উচ্চ আদালতের রায়কে পুঁজি করে বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে বদ্ধ পরিকর হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা যে ২০১৪-র নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না করার জন্যই সরকার পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নেয়। শেষ মুহূর্তে খালেদা জিয়াকে আলোচনায় বসার জন্য টেলিফোন করা ছিল শেখ হাসিনার একটি কৌশল। খালেদা জিয়া তার সে মুহূর্তের প্রস্তাবে সাড়া দিতে পারতেন না, দেনও নি। আর এটুকু বোঝার মতো রাজনৈতিক জ্ঞান শেখ হাসিনার থাকবে না কেন? বরং কারো কারো মতে, রাজনৈতিক জ্ঞান ও কৌশলে তিনি খালেদা জিয়ার চেয়ে অনেক বেশি দড় হয়েছেন ২০০১ সালের পরাজয়ের পর। যাহোক, খালেদা জিয়া আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করার পর শেখ হাসিনা সর্বশক্তি ব্যবহার করে নামকাওয়াস্তে হলেও নির্বাচন করেন। পরে ভারত, রাশিয়ার সমর্থনে টিকেও গেলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বা ব্রিটেনসহ ইইউ কেউই দৃঢ় সমর্থন নিয়ে খালেদা জিয়ার পাশেও দাঁড়ায়নি কিংবা সরকারের সাথে নিজেদের কোনো দূরত্বও তৈরি করেনি। এতে প্রমাণ হয়ে যায় যে এসব দেশ বিশ^ব্যাপী গণতন্ত্রের জন্য কথা বললেও তা শুধু লোক দেখানো বিষয়। আসলে গণতন্ত্র নিয়ে তারা মাথা ঘামায় না যদি তাতে তাদের স্বার্থ না থাকে। তাই বাংলাদেশে গণতন্ত্র যখন নাজুক অবস্থায় পড়ল তখন তারা এ গণতন্ত্র রক্ষায় এগিয়ে এল না। ফলে গণতন্ত্রের শ^াসনালি চেপে ধরা সরকার একটু অস্বস্তিবোধ করা ছাড়া তেমন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়নি।
বাংলাদেশে কোনো গণতন্ত্র নেই, যা আছে তা গণতন্ত্র নামে অন্য কিছু ও সরকার সমর্থকদের গণতন্ত্র বলে বহু মানুষ মনে করে। আর এই যে গণতন্ত্র নেই তা নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথাও নেই। মানুষ গণতন্ত্র নিয়ে মাথাও ঘামায় না। তারা দেখেছে যে যারা গণতন্ত্রের কথা বলে ক্ষমতায় এসেছে তারা কেউই তাদের নিজেদের দলে বা দেশের মানুষের সাথে গণতন্ত্রের চর্চা করে না। ক্ষমতায় আসার জন্য গণতন্ত্র হচ্ছে উল্লম্ফনের বুলি। জনগণ বা জনগণের স্বার্থ নয়, নিজেদের লোকদের খাইয়ে-পরিয়ে মোটাতাজা করিয়ে তাদের হাতে রাখা এবং তাদের মাধ্যমে দেশের বৃহত্তর সংখ্যক মানুষকে কব্জা করাই হচ্ছে গণতন্ত্র ব্যবসায়ীদের কাজ। এরা নানা বিপদজনক কাজ করে চলেছেন। সবচেয়ে বড় যে কাজ করেছেন তা হচ্ছে দেশের সর্বত্র এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে যে নেহাৎ দিনমজুর শ্রেণির লোকজন ছাড়া বাকি সবাইকে একটিই স্লোগান, একটিই মত, একটিই পথ গ্রহণে বাধ্য করা হয়েছে। সরকারের পছন্দ নয় এমন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকলে, সরকারের সমর্থক নয় এমন দল করলে তাদের টিকে থাকার কোনো উপায় নেই। তাই সারাদেশে আজ একটিই অঘোষিত অথচ প্রবল প্রতাপময় দিকনির্দেশনা। তার বাইরে যে যাবে তাকে ছিটকে ফেলে দেয়া হবে। সরকারি চাকুরি, শিক্ষাক্ষেত্র, ব্যবসা-বাণিজ্য, সাংবাদিকতা ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই এ অবস্থা বিরাজমান।
সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলগুলোতে সরকার ও সরকার অনুরাগীজনেরা হালে একটি ধারা তৈরি করে দিতে পেরেছেন। তা হচ্ছে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের ভাষায় গঠনমূলক সমালোচনার ধারা। এ গঠনমূলক সমালোচনার অর্থ হলো এটা করা উচিত হয়নি ওটা করা হলে অধিক ভালো হতো টাইপের কথা নয়Ñ সরকারের পছন্দ নয় বা হবে না এমন কথাবার্তা পরিহার করা। ফলে এসব মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের কোনো বিষয়ে শক্ত সমালোচনা আর শোনা যায় না। যারা এ মাপকাঠি মেনে চলতে চান তারাই ইদানীং এসব জায়গায় কথা বলেন। উল্লেখ্য যে তাদের গায়ে সরকারের প্রতি সমর্থন বা আনুগত্যের প্রকাশ্য ছাপ লাগানো থাকলেও তাদের দিয়েই আসর গুলজার করানো হয়। তবে নিতান্তই এক থেকে দু’জন এর মধ্যে ভীষণ পরিমিত ভাষায় কিছুটা শক্ত কথা বলার চেষ্টা করেন বলে দেখা যায়। আর এ দেশের মানুষ! তাদের নিজস্ব কোনো বক্তব্য আছে কি না সে বক্তব্য তারা প্রকাশ করে কি না তা বোঝা সহজ ব্যাপার নয়।
আগে যেমন দেখা গেছে, বিএনপি সরকারের আমলে যেসব আওয়ামী সমর্থক বঞ্চিত ও সংক্ষুব্ধ হয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকার এলে তাদের সে ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার আওয়ামী সরকারের আমলে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিএনপি সরকারও তাদের জন্য একই ব্যবস্থা করেছে। এভাবেই ’৯১-’৯৬-এর ক্ষতিগ্রস্তদের ’৯৬-২০০১-এ, এ সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ২০০১-০৬-এ এবং এ সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ২০০৯ পরবর্তীকালে ক্ষতি উপশম করা হয়েছে। তবে এ ধারাবাহিকতা রক্ষায় হেরে গেছে বিএনপি। ’৯১ থেকে পাঁচ বছর পর পর নতুন সরকারের ধারাটি পাল্টে দেয়া হয়েছে ২০১৪ সালে। এর ফলে সরকারের বিভিন্ন বিভাগে চাকুরিরতরা থেকে শুরু করে নানা পর্যায়ে সরকার দলীয় সমর্থক নন, এমন চিহ্নিত সবাই ভীষণ সমস্যার মধ্যে আছেন। এর সাথে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যোগ হয়েছে আরেক সর্বনাশা ধারা। সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সকল চাকুরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটের বাইরে কাউকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। বিশেষ করে যদি জানা যায় যে সংশ্লিষ্ট জনের বা নিকটজনের সাথে বিএনপি-জামায়াত সম্পৃক্ততা আছে তার আর চাকুরি হবে না। জাতির কল্যাণাকাক্সক্ষীরা মনে করেন, সরকার এভাবে বিভাজন না করে বরং কোনো সরকারি চাকুরিতেই রাজনীতি করা প্রার্থীদের নিয়োগ করা হবে না বলে নিয়ম করলে সেটাই অধিক কল্যাণকর হতো। এখন যা হচ্ছে, তদ্বির-সুপারিশে দলীয়রাই শুধু নিয়োগ পাচ্ছে, অন্যরা নয়। এটা বিষময় ফল বয়ে আনতে পারে।
২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের নানা ক্ষেত্রে বেশ উন্নয়ন হয়েছে। এ অর্জনের পিছনে রয়েছে ধারাবাহিকতা। এমন নয় যে শুধু আওয়ামী লীগ সরকার এসেছে বলেই উন্নয়ন হয়েছে, এ সরকারের আমলেই উন্নয়ন হয়, আর কোনো সরকারের আমলেই উন্নয়ন হয় না, হয়নি। যারা তা বলেন, বলার জন্য বলেন। তাদের সব বলাই সবটা সত্য নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত আসা প্রত্যেক সরকার যখন যেভাবে পেরেছে দেশের উন্নয়নের চেষ্টা করেছে। হতে পারে আগের সকল সরকারের তুলনায় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বেশি উন্নয়নের কাজ করছে, দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে। এ সরকার পদ্মা সেতুর মতো, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের মতো মহাপ্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আগের আর কোনো সরকার এসব পারেনি। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই আওয়ামী লীগকে কৃতিত্ব দিতে হবে। এ সবের জন্য জনগণের বিরাট অংশ নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থনের পাল্লা ভারী করতে পারে।
তার অর্থ বিএনপির প্রতি জনসমর্থনের পাল্লায় টান পড়া। ধারণা করা যায়, মামলা-হামলায় জেরবার বিএনপি ২০১৬ সালে জনগণের কাছে যেমন যেতে পারেনি, তেমনি জনগণকে কাছেও টানতে পারেনি। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মানুষকে দলের পক্ষে টানার একাধিক সুযোগ দলটি হেলায় হারিয়েছে। আগামীতে এ রকম আরো সুযোগ আসবেই এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই বা সুযোগ এলেও তা কাজে লাগাতে পারবে বলেও কথা নেই। ২০১৯-এর আগে কোনো নির্বাচন করাতে দলটি সরকারকে বাধ্য করতে পারেনি। আর পারবেও না। ইতোমধ্যে সৃষ্ট পরিস্থিতি থেকে নিশ্চিত যে ২০১৯-এই পরবর্তী নির্বাচন হবে। আর সে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন বা শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে নাÑ এসব আজ অর্থহীন দাবিতে পরিণত হয়েছে।
আমাদের প্রখ্যাত এক কবির কাব্যগ্রন্থের নাম ছিল ‘সীমাবদ্ধ জলে সীমিত সবুজে।’ কবির ভাষা আলাদা। তার কাব্যগ্রন্থের নামটিকে সীমাবদ্ধ চিন্তা থেকে বিএনপির বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োগ করা যেতেও পারে। আজ আক্ষরিক অর্থে বিএনপি সীমাবদ্ধতার শিকার, তার সবুজ দিগন্তের বিস্তৃতিও সীমিত। রাজনীতি একটি খেলা। গুণীদের ভাষায় অসম্ভবের খেলা। শুধু নিজেদের চেষ্টাই নয়, ভাগ্যেরও সহায়তা প্রয়োজন হয় এখানে। ভাগ্য বিএনপিকে ২০১৬ সালে বা আগের দু’বছরে সহায়তা করেনি। ২০১৭-তে বা পরবর্তী সময়ে করে কিনা- তাই এখন দেখার বিষয়।
লেখক : সাংবাদিক
h-mahumudbd@yahoo.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন