মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

চিকিৎসক সংকটে মিলছে না কাক্সিক্ষত সেবা

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল

| প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা : চিকিৎসক সংকট আর অপ্রতুল ওষুধ সরবরাহের কারণে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল। প্রয়োজনীয় জনবল আর অবকাঠামোগত সংকীর্ণতায় অন্যতম মৌলিক চাহিদা কাক্সিক্ষত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার কয়েক লাখ সাধারণ মানুষ। চিকিৎসা না পেয়ে অনেককেই যেতে হচ্ছে রংপুর, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন স্থানে। অপরদিকে প্রয়োজনীয় টেকনিশিয়ান আর চিকিৎসকের অভাবে অকেজো হয়ে পড়ে আছে কোটি টাকা দামের এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনগুলো। ষাটের দশকে পঞ্চগড় মহুকুমায় ক্ষুদ্র পরিসরে নির্মিত পঞ্চগড় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ১৯৮৪ সালে জেলা ঘোষণার পর ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়ে পরিণত হয় পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে। ২০০৫ সালে এই হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়ে পরিণত হয় আধুনিক সদর হাসপাতালে। এরপর থেকেই শুরু হওয়া চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় জনবল সংকট। যা আজও ঘোচেনি। দেশের সর্ব উত্তরের এই জেলা শহরে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ কম হওয়ায় সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা এখানে এসে বেশি দিন থাকতে চান না। জানা যায়, পঞ্চগড়ে পোষ্টিংকে চিকিৎসকরা পানিশমেন্ট বদলি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বাধ্য হয়ে অনেক চিকিৎসক যোগদান করলেও অল্প কিছু দিনের মধ্যে তদবির করে অন্যত্র চলে যান। চলতি বছরে চর্ম ও যৌন বিভাগের একজন সিনিয়র কনসালটেন্টকে পঞ্চগড়ে পোষ্টিং দেওয়ায় তিনি একেবারেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ১০০ শয্যার এই আধুনিক সদর হাসপাতালটিতে ৩৬ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও এর বিপরীতে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ১০ জন। সিনিয়র কনসালটেন্ট ৭টি পদের মধ্যে খালি রয়েছে ৪টি। জুনিয়র কনসালটেন্ট ১০টি পদের মধ্যে খালি রয়েছে ৬টি। প্যাথলজিস্ট ও রেডিওলজিস্টের ১টি করে পদের দুটিই খালি। মেডিকেল অফিসার ও সহকারী সার্জনের ১৫টি পদের মধ্যে খালি রয়েছে ১১টি। এ ছাড়া হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্সসহ দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার ১৫টি, তৃতীয় শ্রেণির ১২টি এবং চতুর্থ শ্রেণির ২টি পদ এখনো শূন্য রয়েছে। হাসপাতলের তিনটি এক্স-রে মেশিন থাকলেও প্রায় ৬ থেকে ৭ বছর ধরে নষ্ট হয়ে আছে দুটি এক্স-রে মেশিন। দক্ষ টেকনিশিয়ান আর আল্ট্রাসনোগ্রাম চিকিৎসকের অভাবে স্টোর রুমে প্যাকেটবন্দি থাকতে থাকতে অবশেষে নষ্ট হতে বসেছে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটিও। এতে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা প্রায় সকলকেই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে। এদিকে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে পঞ্চগড় জেলার ৩৬টি ছিটমহল বাংলাদেশ ভূখ-ে অধিভুক্ত হওয়া জেলায় যুক্ত হয়েছে প্রায় ২০ হাজার নতুন বাংলাদেশি। বৃহৎ এই জনগোষ্ঠী পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নির্ভর হলেও তাদের জন্য বাড়েনি কোনো অবকাঠামো বা শয্যা। এতে স্বল্প জনবল নিয়ে জেলার এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এদিকে সময়মতো ডাক্তার না আসা, বেশির ভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কেনা, হাসপাতালের অপরিচ্ছন্ন টয়লেটে দুর্গন্ধ ও নার্সদের দুর্ব্যবহারসহ নানান অভিযোগ সাধারণ রোগী ও তাদের স্বজনদের। এ ছাড়াও বেশির ভাগ চিকিৎসকই বাইরের ক্লিনিকগুলোতে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে ব্যস্ত থাকেন এমনও অভিযোগ অনেকের। নার্সদের দুর্ব্যবহারের ব্যাপারে জানতে চাইলে সিনিয়র স্টাফ নার্স শেফালী রানী রায় বলেন, “সারা দিনে যদি ৫০ জন রোগী আসেন তাহলে তাদের সাথে আরো ৫০ জন লোক আসেন। বিভিন্ন সময়ে নতুন লোকজনের সাথে কথা বলার সময় হয়তো অনেকেই শুনতে পান না বা ব্যস্ততার কারণে তাড়াহুড়ো করে বলতে গিয়ে অনেকেই ভুল বুঝে বলেন নার্সদের ব্যবহার খারাপ। আসলে বিষয়টি সত্য নয়।” পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডা. পীতাম্বর রায় বলেন, “৩৬ জন চিকিৎসকের জায়গায় মাত্র ১০ জন থাকায় চিকিৎসাসেবা দিতে অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। তারপরও আমরা দিন-রাত পরিশ্রম করে রোগীদের যথাযথ সেবা প্রদানের চেষ্টা করছি। ওষুধ সংকটের ব্যাপারে তিনি বলেন সরকার কর্তৃক সরবরাহকৃত  যে সকল ওষুধ আমরা পাই তার পুরোটাই রোগীদে মাঝে দেওয়া হয়। তবে পর্যাপ্ত চিকিৎসকের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।”

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন