রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

নড়াইলে ৫০ ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ

| প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আতিয়ার রহমান, নড়াইল থেকে : নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নড়াইলে ফসলি জমি দখল করে গড়ে উঠছে অসংখ্য ইটভাটা। এসব ভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এতে মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে পরিবেশ। আইন অমান্য করে দিনের পর দিন ইটভাটার সংখ্যা বাড়তে থাকলেও প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সরকারি হিসাব অনুযায়ী এ জেলায় মোট ইটভাটার সংখ্যা ৪২টি। তবে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে বর্তমানে এখানে ৭০টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে ৫৩টিতেই ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ ব্যারেল চিমনি। সরেজমিন দেখা গেছে, লোকালয়ে গড়ে ওঠা এসব অবৈধ ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষিজমির মাটি। ফলে একদিকে নির্বিচারে উজাড় হচ্ছে গাছপালা, অন্যদিকে উর্বরতা হারিয়ে চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ছে জমি। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, আকারভেদে একটি ইটভাটা গড়তে কমপক্ষে পাঁচ একর (৫০০ শতাংশ) জমি প্রয়োজন। তবে ক্ষেত্রবিশেষে ৪০-৪৫ একর জমিরও প্রয়োজন হয়। ১০ বছর আগে জেলায় হাতেগোনা ১৫-২০টি ভাটা ছিল। কিন্তু এখন তা বেড়ে ৭০টিতে পৌঁছেছে। আর এসব ইটভাটা গড়ে ওঠার কারণে চার শতাধিক একর ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইটভাটার ম্যানেজার জানান, সাধারণত মধ্যম সারির একটি ভাটায় বছরে ৪০-৫০ লাখ ইট পোড়ানো হয়। আর প্রতি আট হাজার ইটের জন্য কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার হয় এক হাজার ঘনফুট মাটি। যে মাটির জোগান দেয়া হয় কৃষিজমি থেকে। এজন্য প্রতিটি ভাটায় বছরে পাঁচ থেকে ছয় একর জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করা হয়। সে হিসাবে ৭০টি ভাটাতে প্রতি বছর অন্তত সাড়ে ৩০০ একর জমির মাটি ব্যবহৃত হয়। ইট পোড়ানোর জন্য প্রতিটি ভাটায় দৈনিক গড়ে ৩৫-৪০ মণ কাঠ পোড়াতে হয়। সে হিসাবে জেলার ৭০টি ইটভাটায় প্রতিদিন ২ হাজার ৪৫০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। কাঠ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন গ্রাম থেকে সংগৃহীত কাঠ এসব ভাটায় ব্যবহার করা হয়। গড়ে প্রতিটি গাছ থেকে সাত থেকে আট মণ কাঠ পাওয়া যায়। হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন ইটভাটায় আম, জাম, রেন্ট্রি, কদম, জামরুল, কাঁঠাল, খেজুর, নারকেলসহ তিন শতাধিক ফলদ ও বনজ গাছের কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭-এর ৭ ধারা অনুযায়ী কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রথমবার সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে ১ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও সাজার বিধান রাখা হয়েছে। তৃতীয়বার করলে নিবন্ধন বাতিল ও ভাটা বাজেয়াপ্ত করারও বিধান রাখা হয়েছে। কাগজে কলমে এসব আইনের কঠোর নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ নেই। পরিবেশবাদী সংগঠনের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি ভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। কৃষিজমি এবং জনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে ওঠা এসব ভাটায় স্বল্প উচ্চতার টিনের তৈরি চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এতে ফসলসহ পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।  লোহাগড়ার রামপুরা এলাকার কৃষক তজিবর জানান, ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষেতের পাশে ইটভাটা গড়ে ওঠায় আগের তুলনায় উৎপাদন কমে গেছে। সরকার যদি ফসলি জমির ওপর ইটভাটা স্থাপন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে পাঁচ বছরের মধ্যে এসব জমির উৎপাদন শূন্যে নেমে আসবে। ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে অধিকাংশ ভাটার মালিক বলেন, চাহিদার তুলনায় কয়লার সরবরাহ কম, সেসঙ্গে দামও বেশি। তাই কয়লা দিয়ে ইট পুড়িয়ে লাভবান হওয়া যায় না। কাজেই সরকার যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ কয়লা আমদানির ব্যবস্থা ও দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে পারে, তবে এসব ভাটায় কাঠ পোড়ানো বন্ধ করা যাবে। নড়াইল সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আসাদুজ্জামান মুন্সি দিপু জানান, জনবসতিপূর্ণ এলাকায় যদি কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয়, তাহলে এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রকোপ বাড়ে। নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আমিনুল হক বলেন, কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কাটা হলে এর উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। চার-পাঁচ বছর সেই জমি থেকে ফসল উৎপাদন অনেক কমে যায়। তিনি আরো বলেন, ফসলি জমির মাটি কেটে ভাটায় ব্যবহার বন্ধে ও ফসলি জমির পাশে যেন ইটভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য আমরা জেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে অনুরোধ জানাব। নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, নড়াইলে কিছু ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরইমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এসব ভাটায় অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে। তবে আইন আমান্য করে গড়ে ওঠা ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Iqbal Morshed ২৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১:১৮ পিএম says : 0
Need to stop it now as soon as possible !
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন