মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপ সম্পাদকীয়

বুড়িগঙ্গার সেকাল-একাল এবং আমাদের দায়িত্ব

| প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ আবদুল গফুর
আমি ঢাকায় আসি প্রথম ১৯৪৫ সালে। এসএসসি সমমানের হাই মাদ্রাসা পরীক্ষা পাশ করে ঢাকায় এসে আই-এ ক্লাশে ভর্তি হয়েছিলাম বর্তমান সরকারী নজরুল (তদানীন্তন গভর্নমেন্ট ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট) কলেজে। উঠেছিলাম ঢাকার নবাব বাড়ীর পাশে আহসানুল্লাহ রোডের ৪ নং ভবন প্যারাডাইস হোস্টেলে। সেখানেই কাটে আমার ইন্টারমিডিয়েট অধ্যয়নের দুই বছর। এর আগে আমার ছাত্র জীবন কাটে গ্রাম্য এলাকায়, এবং মফস্বল শহর ফরিদপুরে। হাই মাদ্রাসা অধ্যয়ন পর্যন্ত আমি নিয়মিত পুকুরে ডুবিয়ে গোসল করতাম।
ঢাকায় এসেই প্রথম আমরা পুকুরে ডুবিয়ে গোসল করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হই। তবে পুকুরে ডুবিয়ে গোসল করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেও ঢাকা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তৎকালীন বুড়িগঙ্গা নদীর স্বচ্ছ পানিতে আমাদের সে বঞ্চনা ভালভাবেই পুষিয়ে যেতো। নবাব বাড়ীর পাশে আমাদের হোস্টেল অবস্থিত হওয়ায় গোসলের সময় আমরা হোস্টেলের অদূরে অবস্থিত বুড়িগঙ্গার পাশে অবস্থিত বাঁধানো ঘাটে যেয়ে মনের সুখ মিটিয়ে ডুবিয়ে সাঁতরিয়ে গোসল করতাম। পুকুরের তুলনায় বুড়িগঙ্গা ছিল আরও অনেক বড় এবং  স্রোতস্বিনী। ফলে আমাদের গোসল পর্ব ছিল আরও মজাদার ও আরামদায়ক।
এসব কথা মনে পড়ছে বুড়িগঙ্গা নদী দূষণের সর্বশেষ দূরবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট পড়ে। গত মঙ্গলবার ঢাকার বাংলা দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকায় প্রথম পৃষ্ঠায় যে প্রধান খবর প্রকাশিত হয়েছে তাতে বলা হয়েছে :  ‘দূষণ ও দখলে হারিয়ে যাচ্ছে বুড়িগঙ্গা। হাজারীবাগের ট্যানারী স্থানান্তর হলেও কমছেনা দূষণ। তাছাড়া দুই পাড়ের জমি দখল করে ঘরবাড়িসহ নির্মাণ করা হয়েছে রঙ-বেরঙের ভবন। গড়ে উঠেছে কল-কারখানা, ডায়িং-ফ্যাক্টরি। এসব কারখানার বর্জ্য সরাসরি ফেলা হচ্ছে নদীতে।
পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, বুড়িগঙ্গা নদীর দুই শতাধিক পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন ওয়াসা ও সির্টি কর্পোরেশনের হাজার হাজার টন বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই নদীতে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। রাজধানীর হাজারীবাগের চামড়া কারখানার দূষনের সাথে কামরাঙ্গির চর, ইসলামবাগ, পোস্তা, লালবাগসহ নদীর পাড়ে অবস্থিত কয়েক শত পলিথিন ও প্লাস্টিক রিসাইক্লিনিং কারখানা, কেরানীগঞ্জের দুই শতাধিক ডায়িং কারখানাসহ হাজারের ও অধিক বিভিন্ন কারখানা এবং শ্যামপুর, কাজলা-ফতুল্লা এলাকার শত শত কারখানা থেকে  কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি নদীতে মিশে পানি দূষিত হচ্ছে। বছরে পর বছর এসব কারখানা থেকে হাজার হাজার টন বর্জ্য নদীতে নিক্ষিপ্ত হলেও নির্বিকার সংশ্লিষ্ট পরিবেশ অধিদফতর।
এসব কারখানা থেকে টনে টনে বর্জ্য নদীতে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। নদীর দুই পাড়ের গৃহস্থালির বর্জ্য, স্থাপনা-ভাঙা সুরকি নদীতে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। বুড়িগঙ্গায় সবচেয়ে বেশী বর্জ্য নিক্ষেপ করছে স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ওয়াসা ও সির্টি কর্পোরেশন। এসব সংস্থার ড্রেনের পানি পরিশোধনের পর নদীতে নিক্ষেপের বিধান থাকলেও এখন পর্যন্ত ঢাকায় বর্জ্য ট্রিটমেন্টের জন্য কোন তরল বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন করতে পারেনি ওয়াসা ও সির্টি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।
উপরন্ত নারায়ণগঞ্জের পাগলায় অবস্থিত ওয়াসার একমাত্র ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি বিগত কয়েক বছর অকেজো রয়েছে। কিন্তু প্ল্যান্টের রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ প্রতি মাসে বিশাল অংকের অর্থের অপচয় হলেও কোন কাজে আসছে না একমাত্র প্ল্যান্টটি। সিটি কর্পোরেশনের মাতুয়াইলে একটি বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশন থাকলেও ড্রেনেজ বর্জ্য পরিশোধনের কোন প্ল্যান্ট নেই এই সংস্থার। এর ফলে তাদের ড্রেনের মাধ্যমে বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে বুড়িগঙ্গায়।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন কাজে এসব অবহেলার ফলে বুড়িগঙ্গার পানির রঙই শুধু অস্বাভাবিক হয়ে যায়নি, বুড়িগঙ্গার পানি থেকে দুর্গন্ধও ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। এর ফলে নদীর দুই পাড়ে ছড়িয়ে পড়ছে মশামাছিসহ পানি ও বায়ুবাহিত বিভিন্ন রোগ-বালাই। স্থানীয়রা জানান, নদী পাড়ের বিভিন্ন মহল্লা থেকে ভ্যানগাড়িতে ময়লা এনে নদীতে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। ফলে নদীর পানি থেকে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর জীবনে অসহনীয় দুর্ভোগ নেমে এসেছে।
বর্জ্য নিক্ষেপের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সির্টি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল অবশ্য বলেন, সির্টি কর্পোরেশন সব সময় দূষণের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনের মাধ্যমে শুধুমাত্র বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার জমানো পানি নদীতে পড়ছে। তাছাড়া ওয়াসাকে একাধিকবার নদীতে সুয়ারেজ বর্জ্য নিক্ষেপ বন্ধ করতে লিখিত ও মৌখিকভাবে বলা হয়েছে তবে তারা তা  ভ্রƒক্ষেপ করছে না। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ পানি রিফাইন করতে প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দ্রæত এ সমস্যা সমাধানে পৌঁছা সম্ভব হবে বলে সিটি কর্পোরেশন আশা প্রকাশ করে।
এদিকে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক আবু নাসের খান যা বলেছেন, তাতে বুঝা যায়, বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিজ নিজ করণীয় যতটা গুরুত্ব দিয়ে পালন করার উদ্যোগ নেয়া উচিৎ ছিল তা নেয়া হচ্ছে না বলেই সমস্যা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। তিনি বলেন, পরিবেশ বাঁচাতে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট দফতরকে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিতে হবে। এসব উদ্যোগের মধ্যে নদীতে দূষিত বর্জ্য নিক্ষেপকারী কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া  সরকারী যেসব প্রতিষ্ঠান দূষণ কার্যে সক্রিয় রয়েছে, তাদের সেসব দূষণ-কার্য বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া ঢাকার চারপাশে বুড়িগঙ্গাসহ যেসব নদী রয়েছে সে সবের দূষণ উচ্ছেদ- উচ্ছেদ খেলা বন্ধ করা ছাড়াও ঐসব নদী নিয়মিত ড্রেজিং করে নদীর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
দুর্ভাগ্যের বিষয় যারা, বুড়িগঙ্গাসহ বিভিন্ন নদীকে দুষণমুক্ত করার দায়িত্বে রয়েছেন তাদের অনেকেই সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজনীতি করার দরুন  জনগণের আশা-আকাঙ্খা মোতাবেক বুড়িগঙ্গা নদীকে দূষণমুক্ত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে সক্ষম হচ্ছেন না। কে চায় দেশের বৃহত্তর স্বার্থ চিন্তা করে নিজের তাৎক্ষণিক স্বার্থকে বির্সজন দিতে? তাছাড়া বুড়িগঙ্গার সমস্যাও তো আর আগের মত অত সহজ নেই।
এক কালের জেলা সদর ঢাকা শহর পরবর্তী সালে প্রাদেশিক রাজধানী এবং আরও পরবর্তীতে বর্তমানে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের রাজধানী। ফলে ঢাকা শহরের লোক সংখ্যা ও আয়তন কোনটাই আর আগের মত নেই। লোকসংখ্যা ও আয়তন বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর গুরুত্ব ও মর্যাদা। এর পাশাপাশি বাড়ছে এর সমস্যার জটিলতা। পরিবর্তনের এসব  প্রক্রিয়ার বিষয় মাথায় রেখে ঢাকাকে যেমন পরিকল্পিতভাবে পরিবর্তিত, সমৃদ্ধ ও উন্নত করা প্রয়োজন ছিল তা কি আমরা করতে পারছি? পারছি যে না, এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিয়েই আমাদের যার যা করণীয়, তা আন্তরিকভাবে সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মনোভাব নিয়ে করে যেতে হবে। নইলে শুধু মৌখিক আশ্বাস প্রদানের মধ্যদিয়ে কাজের কাজ কিছুই হবে না।
আসলে কঠোর বাস্তবতার সাথে যে কোন মূল্যে আমাদের সুন্দর স্বপ্নের সমন্বয় ঘটাতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে এই সমন্বয়ের মধ্য দিয়েই আমাদের এ প্রিয় রাজধানী নগরীতে আমাদের অবস্থানকে কাংখিত পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, যে শহরে একদা আমরা এক বা দুই দিনের জন্য বিশেষ প্রয়োজনে আসতাম, তাদের অনেকেই এখন এ শহরে অস্থায়ী বাসিন্দা হবার লক্ষ্যে মাসের পর মাস ভাড়া বাসায় সপরিবারে বাস করি, এবং ঈদ বা পারিবারিক বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া গ্রামের বাড়ীতে যাই না।
এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্ম গ্রহণ করে যারা সেখানেই বেড়ে উঠেছি, তারা অনেকে এখন বাকী জীবনটাও স্থায়ীভাবে ঢাকায় কাটানোর জন্য ঢাকা শহরে বা তার আশে-পাশে নিজেদের বসতবাড়ীও নির্মাণ করছি। আমাদের এসব কর্মকাÐের ফলে পরিবর্তনের একটা প্রভাব   কি না এসে পারে আমাদের মতো ঢাকার এসব নতুন বাসিন্দাদের জীবনে? এসব পরিবর্তনের বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়েই আমাদের পথ চলতে হচ্ছে। ফলে অনেক সময়ই আমাদের কল্পনা ও বাস্তবে মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না স্বাভাবিক কারণেই।    
তারপরও আমাদের ঢাকার এই পরিবর্তন প্রবনতাকে মেনে নিয়েই ঢাকায় স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বসবাস করতে হচ্ছে। যা হারিয়েছি তাকে নিয়ে দু:খ বোধ নয়। যা বাস্তব, তাকে নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এক হিসাবে চিন্তা করলে পরিবর্তনশীলতাই জীবনের সব চাইতে বড় সত্য। এক সময় আমরা ছিলাম না। যারা তখন ছিলেন, তাদের অনেকেই এখন নেই। আবার এখনও যারা ভূমিষ্ঠ হয়নি, তারা এক সময় থাকবে, অথচ আমরা যারা এখন আছি, তাদের অনেকেই তখন থাকব না।
এটাই সত্য, এটাই বাস্তবতা। তাই একদা যে ঢাকা দেখেছি সে ঢাকাকে এখন আর না দেখে দু:খ করে লাভ নেই। খোদ আমরাও যে একদিন থাকব না, এ বাস্তবতাকেই স্বীকার করে করণীয় কাজে এগিয়ে যেতে হবে। মানুষ প্রত্যেকে দুনিয়ায় আসে, আবার এক সময় চলে যায়। মানুষের জীবন মানুষের ¯্রষ্টার ইচ্ছাধীনই শুধু নয়, ¯্রষ্টার বিধান যথাযথভাবে যাতে আমরা পালন করে যেতে পারি, সেটাও আমাদের বড় দায়িত্ব।
মানুষ ¯্রষ্টার বড় আদরের সৃষ্টি। ¯্রষ্টা মানুষকে দুনিয়াতে তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন। আমরা যতদিন পার্থিব জীবন পালনের সুযোগ পাই ততদিন যদি আমরা ¯্রষ্টার বিধান মতে আমরা ব্যক্তি ও সমাজ জীবন যাপনের আন্তরিক প্রয়াস পাই, তবেই আমাদের এ জীবন যাপন সার্থক হবে। নইলে আমাদের জীবন আপাতত যত সুখেরই হোক, কিছুতেই তা সার্থক হবে না।
আমরা যারা অস্থায়ী তা স্থায়ীভাবে ঢাকার বাস করছি, ¯্রষ্টার বিধান মোতাবেক আমরা যদি এই ঢাকার নাগরিক ও সামাজিক জীবন ¯্রষ্টার বিধান মোতাবেক গড়ে তুলতে চেষ্টা করি, একমাত্র তবেই আমাদের জীবন সার্থক হবে।
যাঁর কল্যানে আমরা এই জীবন পেয়েছি, সেই মহান ¯্রষ্টার কাছ থেকে দ্বিবিধ দায়িত্বও আমরা পেয়েছি। এর একটা হক্কুল্লাহ, আর একটা হক্কুল এবাদ। আল্লাহর প্রতি দায়িত্ব এবং সৃষ্টি জগতের প্রতি দায়িত্ব এই মহান দায়িত্ববোধ নিয়ে আসুন আমরা মহান ¯্রষ্টার পতি আমাদের দায়িত্ব পালনের আলোকে ঢাকার বাসিন্দাসহ অন্যান্য মানুষ ও সৃষ্টির প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্রতী হই। তবেই ঢাকার প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন সার্থক হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Selina ৯ জুন, ২০১৭, ৩:৫৯ পিএম says : 0
If Dhaka properly maintain and treated encircled four river Dhaka is the beautiful ,clean and green metropolitan. In the world .according to CS land survey map save four river .
Total Reply(0)
harun ur rashid ১১ জুন, ২০১৭, ১১:৪০ এএম says : 0
we killed our river and and ourselves. nothing shall be developed.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন