শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

গ্রামীণ জনপদে ইউপি নির্বাচনের হাওয়া- আ.লীগ ও জাসদ প্রার্থীদের উত্তেজনায় ভোটারদের মাঝে বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে
ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে প্রার্থীদের গণসংযোগ ও নির্বাচনী প্রচারণা মুখর হয়ে উঠেছে। উৎসবের আমেজ চলছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। পোস্টার পোস্টারে ছেয়ে গেছে ১১টি ইউনিয়নের পুরো নির্বাচনী এলাকা। এ উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে লড়াই হবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও জাসদ প্রার্থীদের মধ্যে। দলীয় প্রতিকে নির্বাচন হলেও জমজমাট এ লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতের সাথে যুক্ত হয়েছে জাসদ প্রার্থীরা। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ ও জাসদ প্রার্থীদের মাঝে ততই বিরোধ চরমে উঠছে। বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ও জাসদ প্রার্থীর কর্মীদের সাথে হাতাহাতি-বাকবিত-া, হামলা, ভাংচুর, ককটেল বিস্ফোরণসহ নির্বাচনী ক্যাম্পে হুমকি প্রদর্শনের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষেরও আশংকা করছে ভোটাররা। ফলে মিরপুরের নির্বাচনী উত্তেজনা বিরাজ করছে সবখানে। জানা গেছে, আগামী ২২ মার্চ কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১০১টি কেন্দ্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদে ৫৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ৫৮০ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ উপজেলায় ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ১ হাজার ৯৬৮। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাসদ ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ছাড়াও অংশগ্রহণকারী দলগুলোর একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিলেও সংসদের প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টি থেকে কেউ চেয়ারম্যান, মেম্বর ও সংরক্ষিত মহিলা মেম্বর প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এ নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার-প্রচারণা জমে উঠলেও বেড়েছে আওয়ামী লীগ ও জাসদ প্রার্থীদের মাঝে উত্তেজনা ও দ্বন্দ্ব সংঘাত। নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের অভিযোগ, চরমপন্থি কানেকটেড সন্ত্রাসীদের অবাধ বিচরণ ও নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে থাকায় কুর্শা, আমবাড়িয়া, মালিহাদ ও বাইরুপাড়া, আমলাসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি, জামায়াত ও জাসদ মনোনীত প্রার্থী-সমর্থক ও ভোটারদের মধ্যে বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে গত ১০ মার্চ রাতে কুর্শা ইউনিয়নের মাঝিহাট এলাকায় জাসদ সমর্থিত প্রার্থী ওমর আলীর নির্বাচনী সভা চলাকালে সভাস্থলের সন্নিকটে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল হান্নানের কর্মী-সমর্থকরা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ছাড়া গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আমবাড়িয়া ইউনিয়নের জাসদ ও আওয়ামী লীগ মনোনীত দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের কমপক্ষে চারজন জন আহত হন। ফলে নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও জাসদ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে গত শুক্রবার রাতে তালবাড়িয়া ইউনিয়নে জাসদ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আরিফুলের ৫টি ক্যাম্পে আগ্নেয়াস্ত্র মহড়া দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়েছে আওয়ামীলীগের প্রার্থীর লোকজন। এ নিয়ে জাসদ প্রার্থী সংবাদ সম্মেলনও করে। এছাড়াও আমলা ইউনিয়নে জামায়াতের চেয়ারম্যান প্রার্থী ডাঃ রফিকুলের নিজবাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। জামায়াত প্রার্থীর ভোটারদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের লোকজন তাদের কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভয়-ভ্রীতি প্রদর্শন করছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা প্রচারণার পাশাপাশি পেশিশক্তির মহড়া দিচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে এই উপজেলায় সন্ত্রাসীদের আনাগোনা ততই বাড়ছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে ভোটাররা আশঙ্কা করছেন। তবে পুলিশের দাবি, দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচনী প্রচারণায় সন্ত্রাসীদের প্রভাব বিস্তার ও পেশীশক্তির মহড়া সম্পর্কিত অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই । অপরদিকে প্রতিপক্ষের হামলা ও আক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটারদের সমর্থন লাভের জন্য বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা ছুটছেন প্রতিটি বাড়ি বাড়ি। মিরপুর উপজেলা জাসদের সভাপতি আহম্মদ আলী জানান, চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ভয়-ভীতি ও শক্তি প্রদর্শনের মহড়ার কারণে এলাকার ভোটারদের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুষ্ঠানের জন্য তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারী ও হস্তক্ষেপ দাবি করেন। পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম জানান, নির্বাচনী আচরণবিধি কেউ লঙ্ঘন করছে কিনা তা মনিটরিং করা হচ্ছে। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রচারণায় কাউকে বাধা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রচারণায় কেউ কাউকে বাধা কিংবা ভয়-ভীতি প্রদর্শন করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এবারের নির্বাচনে বেশ কিছু ইউনিয়নে সন্ত্রাসী কানেকটেড ও একাধিক মামলার জামিনপ্রাপ্ত বেশ কিছু আসামি ক্ষমতাসীন দল মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করায় ভোটারদের মধ্যে নানা শংকা ও ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। সন্ত্রাসী কানেকটেড ও মামলার ওইসব আসামিরা এলাকায় প্রভাব বিস্তার ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে ভোটারদের অনুকূলে রাখার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ও জাসদের কেন্দ্রীয় সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নিয়ন্ত্রিত এলাকা কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নেই ওই দুই দলের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছে। ফলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও জাসদ প্রার্থীদের মধ্যে দারুণ টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় এখানকার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা উপজেলা জাপার শীর্ষ নেতাদের উপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ। এ বিষয়ে উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি খন্দকার শাহজাহান আলী দুদু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রবিউল হক রবি বলেন, এবার আমরা সাংগাঠনিকভাবে দুর্বলতা ও কৌশলগত কারণে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না। নির্বাচনী সুষ্ঠু পরিবেশ হবে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রেখেই জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি। সবমিলে কুষ্টিয়ার মিরপুরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাসদ, জামায়াতের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। সেই সাথে একই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও জাসদের প্রার্থী থাকায় বাড়ছে টানটান উত্তেজনা। বিভিন্ন স্থানে সংঘাত সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে প্রার্থীরা। তবে দলীয় প্রভাব যাই হোক না কেন প্রশাসনের হস্তক্ষেপেই এ উপজেলায় সুষ্ঠু নির্বাচনে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ভোটাররা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন