আলতাফ হোসেন, বাগমারা (রাজশাহী) থেকে
এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে খ্যাত রাজশাহীর বাগমারার আসন্ন ইউপি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে। বাগমারায় পুলিশ কঠোর অবস্থানে থাকায় জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। তার পরেও কাটছে না আশঙ্কা। দলীয় প্রতীকে প্রথম বারের মতো ইউপি নির্বাচন হওয়ায় সহিংস ঘটনার প্রেক্ষিতে বাগমারাবাসী সঙ্কিত। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছে। রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলা সর্ববৃহৎ উপজেলা। এই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৪২ হাজার ৫৪০ জন। বাগমারা থানা পুলিশের ২৪ ঘণ্টা নজরদারী অব্যাহত থাকলেও মূল সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে আ.লীগের দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী বনাম আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে বিরোধ ঠেকাতেই পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পুলিশ ও র্যাবের যৌথ প্রচেষ্টায় বাগমারায় শান্তির বাগমারা ফিরে এসেছিল। কিন্তু বর্তমানে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বাগমারা থানা পুলিশ জেলা পুলিশের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা ১৬টি ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ টহল অব্যাহত রেখেছে। এতে করে জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। এখন সবারই চিন্তা ‘ভোট কী ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কিনা’। ভোট প্রয়োগ করতে পারলেও ফলাফল ঠিকভাবে পাওয়া যাবে কিনা? এই নিয়েই শঙ্কিত বাগমারার জনগণ। তবে যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভোটরদের আশ্বস্ত করা হচ্ছে বারবার। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কোনো প্রকার জালিয়াতির সুযোগ দেয়া হবে না বলে বলা হচ্ছে। বিশেষ করে উপজেলার মাড়িয়া, গোয়ালকান্দি, গনিপুর, আউচপাড়া, ঝিকড়া, যুগিপাড়া ইউনিয়নগুলোতে ভোটের দিনে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে ওই এলাকার ভোটাররা। বিশেষ করে হামিরকুৎসা, গোয়ালকান্দি, যুগিপাড়া, ঝিকড়া ইউনিয়নগুলো সন্ত্রাসী এলাকা হিসেবে পরিচিত সর্বহারা ও বাংলা ভাইয়ের উত্থান ঘটে ওই ইউনিয়নগুলোতেই। বাগমারায় সর্বহারার হাতে জবাই হন যুগিপাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন, তাহেরপুর পৌর সভার প্রতিষ্ঠাতা মেয়র মুক্তিযোদ্ধা আলো খন্দকার, বিএনপি নেতা তাহেরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ ম-ল, জাপা নেতা দুলু সরকার, বিএনপি নেতা সাবেক ঝিকড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ মরু, হারিমকুৎসা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ খামারুর দুই পুত্র, গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমসহ বেশকয়েকজন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ওই সময় সর্বহারার হাতে জবাই হন। তখন থেকেই বাগমারাবাসী অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। র্যাব গঠনের পরে বাগমারায় সর্বহারা ও বাংলাভাইয়ের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে অনেকেই ক্রস ফায়ারে নিহত হয় এবং চিহ্নিত অনেক ক্যাডার এলাকা ছাড়া হয়ে রয়েছে। অনেকেই বিভিন্ন মামলায় জেলহাজতে রয়েছে। তারপর থেকে বাগমারায় শান্তি ফিরে আসে। কিন্তু বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে অনেকেই সঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধেই বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে আ.লীগের দলীয় প্রার্থী এবং একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে হামলা, মামলা, ভাংচুর, ভয়-ভীতি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে বাগমারা থানা পুলিশে কঠোর অবস্থানের কারণে বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবে অকেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, শান্তির বাগমারা কী থাকবে? না আবারও গলা কাটাকাটি শুরু হবে? তবে এখন পুলিশের নিরপেক্ষ ভূমিকায় বাগমারাবাসী খুশি। কারণ পুলিশ নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। বাগমারা থানা পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে জনসাধারণকে। কেউ কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার জন্য অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে জনমনে ততই চিন্তা বেড়েই চলেছে। ভোটের দিন এবং ভোটের ফলাফল সঠিক হবে কিনা তা নিয়ে। বর্তমান পরিস্থিতির ব্যাপারে বাগমারা থানার ওসি মতিয়ার রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আশঙ্কার কোন কারণ নেই। ইতোমধ্যেই বাগমারা থানা এলাকা নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। ২৪ ঘণ্টা পুলিশি টহল অব্যাহত রাখা হয়েছে। যে কোনো প্রকার সহিংসতা দিয়ে শক্ত হতে দমন করা হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনকে জনগণের সহযোগিতা দিতে হবে। মিথ্যা গুজবে কান না দেয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। বাগমারাতে শান্তিপূর্ণ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণের সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বৃক্ষ তুমি কী তা ফলেই পরিচয় হবে বলে তিনি জানান। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাচন সমন্বয়কারী নাছরিন আক্তার বলেন, ৭ মে রাজশাহী জেলার বাগমারাতেই শুধু নির্বাচন রয়েছে। রাজশাহী জেলার সকল প্রশাসন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য কাজে লাগানো হবে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রেই ফলাফল ঘোষণা করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট এজেন্টদের হাতে ফলাফল সিট প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের বিধিমালা কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে। জনগণের রায় সঠিকভাবেই ঘোষণা করা হবে। এতে আশঙ্কার কোনো কারণ নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন