পীরগাছা (রংপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : গ্রামের নাম চরতাম্বুলপুর। গ্রামটির পূর্বদিকে তিস্তার মূলনদী আর পশ্চিম, দক্ষিণ ও উত্তর দিকে নদী বুড়াইল প্রবাহমান। গ্রামটির চার দিকে নদী থাকায় এটি একটি দ্বীপের মতই মনে হয়। এই গ্রামে প্রায় ২ হাজার পরিবারের বাস। গ্রামের শিক্ষিতের হার নেই বললেই চলে। গ্রামের অধিকাংশ লোকই দিন মজুর ও কৃষি শ্রমিক। এ গ্রামের বাসিন্দারা যেন নিজ ভূমে পরবাসী। তিস্তা ও বুড়াইল নদীই এ গ্রামটিকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। এমন একটি গ্রাম রংপুরের পীরগাছা উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে তাম্বুলপুর ইউনিয়নের তিস্তার চরে অবস্থিত। প্রায় ২০ বছর আগে ৮৮’র প্রবল বন্যায় ৬ কিঃ মিঃ বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে তিস্তার করাল গ্রাসে আশে পাশের ১০/১৫টি গ্রামসহ এ জনপদটি বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তীতে চর জেগে উঠে পলি পড়ে বিধ্বস্ত এজনপদটি ধীরে ধীরে ফল আর ফসলে ভরে উঠলেও এখানে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বিদ্যুৎ সংযোগসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। গ্রামটিতে প্রবেশে বা যাতায়াতে নেই কোন ভাল রাস্তা ঘাট। বুড়াইল নদীর উপর একটি নড়বড়ে বাঁশের সাকোর উপর দিয়ে গ্রামটিতে প্রবেশ করতে হয়।
ওই গ্রামে সরেজমিনে গেলে চোখে পড়ে অসহায় মানুষের করুন চিত্র। দীর্ঘ দিনেও সেখানে উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি। ওই গ্রামের বাসিন্দা শরীফ উদ্দিন (৪৮) বলেন, আমরা নিজভূমে যেন পরবাসী। কারণ এটা পীরগাছার একটা বিচ্ছিন্ন জনপদ। এখানে বৈদ্যুাতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে সারা বছরই এলাকাবাসীকে অন্ধকারে থাকতে হয়। তারা জরুরী প্রয়োজনে রাতের বেলা হারিকেন বা কুপি ব্যবহার করে থাকেন। এখানে কোন হাট বাজার নেই। শুধু রাস্তা ঘাট কিংবা বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাই নয়, বিশুদ্ধ পানীয় জলসহ স্যানিটেশনেরও নাজুক অবস্থা। অতিবৃষ্টি বা বন্যায় পুরো এলাকা পানির নিচে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। তখন পানি বন্ধি অবস্থায় তাদের থাকতে হয়। ঠাঁই নেয়ার মত কোন শুকনো জায়গা থাকে না। এখানে কোন দাতব্য চিকিৎসালয় কিংবা সরকারী কোন চিকিৎসা কেন্দ্র নেই। গ্রামের মানুষ অসুখ বিসুখে অসুস্থ্য হযে পড়লে সেবার জন্য কোন চিকিৎসক পান না। এ সময় গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তার বা কবিরাজই তাদের একমাত্র ভরসা। দুর্ঘটনায় কেউ পতিত হলে জরুরী চিকিৎসা নেয়ার যেমন কোন সুযোগ নেই, তেমনি সুযোগ নেই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে দূর্গত মানুষ জনকে উদ্ধারের। গ্রামে বিদুৎ না থাকায় কর্মসংস্থান মূলক কোন ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে ওঠেনি।
উপজেলা প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বলেন, এলাকার মানুষের সমস্যা অনেক তবে ওই এলাকায় রাস্তা ঘাট তৈরীর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন