রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

জয়পুরহাটে অনুমোদনের অপেক্ষায় ৪ নদী খনন

| প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জয়পুরহাট থেকে মুহাম্মদ আবু মুসা : জয়পুরহাটে ৪ নদী ১শ ৪২ কোটি টাকা ব্যায় নির্ধারণ করে নদী খনন (ডিপিপি) প্রনয়ণ প্রকল্প অনুমোদন হলে বদলে যাবে দৃশ্যপট। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এরই ধারাবাহিকতায় উত্তর জনপদের জেলা শহর জয়পুরহাট। জেলার উপর দিয়ে বয়ে চলেছে ৪টি নদী। ছোট যমুনা, তুলসীগঙ্গা, হাড়াবতী ও চিরি নদী। নদীমাতৃক এই দেশে নদী অববাহিকার দিক থেকে উল্লিখিত নদীগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। খননের অভাবে নাব্যতা হারিয়ে প্রায় সব নদীগুলোই এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে।
নদীগুলোতে চলত ময়ুরপঙ্খী, ডিঙ্গীসহ বাহারি রংএর পালতোলা নৌকা। দূর দূরান্ত থেকে বড় বড় নৌকায় নানা পণ্য সাজিয়ে ব্যাবসা বানিজ্যের কাজে সওদাগরদের নদীপথে আশা-যাওয়ার মাঝে জারি-সারি ও ভাটিয়ালি গানের সেই সুর আজও নদী তীরের মানুষসহ সব শ্রেণীর মানুষকে কাছে টানে। নদী আছে, নেই বহমান শ্রোতের কলতান। নাব্যতা হারিয়ে নদীর বুকে চর জেগে এখন ধূ ধূ বালুচর। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে পানি শুন্যতার কারনে হারিয়ে গেছে হাজারো প্রজাতির দেশীয় মাছ। ফলে নদীগুলো এখন সবুজে শ্যামলে দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ। জমি নেই এমন অনেকে এখন বনে গেছে মালিক, চাষ করে ইরি বোরো ধান। দখলে ভরাটে আর চাষাবাদের ফলে অনেকাংশে নদী হারিয়ে ফেলেছে তার চির-চেনা প্রকৃতির দেয়া আদি সেই রূপ।
বদলে যাবে জয়পুরহাটের ৪ নদী, প্রকল্প ব্যয় হবে ১শ ৪২ কোটি টাকা। জয়পুরহাট জেলার তুলসী গঙ্গা, ছোট যমুনাসহ হারাবতি ও চিরি নদী পুন: খনন প্রকল্প (ডিপিপি) সম্পুর্ন করতে প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১শ ৪২ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় কমিনশনারদের সমন্বয় সভায় প্রধান অথিতির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এসব কথা বলেন। কনফারেন্সে সচিবসহ মন্ত্রনালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তাগণও উপস্থিত ছিলেন।
কতৃপক্ষের পত্রের গুরুত্ব অনুসারে নদীসমুহ চিহ্নিত করে তা খননের প্রস্তাব প্রেরনের জন্য অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এবং সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতাসহ পাচঁবিবি, কালাই ও আক্কেলপুরকে অনুলিপি প্রেরন করলে জেলার তুলসী গঙ্গা, ছোট যমুনা, চিরি ও হারাবতি এই চার নদী পুন:খননের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্প তৈরী করে জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক বরাবর জমা দেয়া হয়। জেলা প্রশাসক প্রস্তাবিত প্রকল্পটি রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের নিকট জমা দিলে কারিগরি প্রতিবেদন তৈরীর লক্ষ্যে তা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড-এ পাঠানো হয়। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্পোটির কারিগরি প্রতিবেদন প্রণয়ন ও দাখিলের জন্য ঢাকা বাপাউবো’র তত্ত¡াবধয়ক প্রকৌশলী (নকশা সার্কেল ৬) মোতাহার হোসেন আহবায়ক, বগুড়ার বাপাউবো (পরও) বিভাগীয় নিবার্হী প্রকৌশলী রুহুল আমিন সদস্য সচিব, ঢাকা বাপাউবো নিবার্হী প্রকৌশলী (পরিকল্পনা পরিদপ্তর ৩ বর্তমান নকশা সার্কেল ৪) আবুল কাওসার সদস্য, ঢাকা বাপাউবো উপ-প্রধান কৃষি (প্রধান পানি ব্যবস্থাপনার দপ্তর) জাহাঙ্গীরআলম, ঢাকা বাপাউবো উপ-প্রধান (অর্থনীতি) যুগ্ম প্রধান (পরিকল্পনা দপ্তর) গোলাম ফারুক আহম্মেদ সদস্য স্বমনয়ে ৫ সদস্যের একটি কারিগরি কমিটি তৈরী করে তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসচিব (পরিকল্পনা) সামিউল ইসলাম খানের আদেশক্রমে বগুড়া বাপাউবো (পরও) বিভাগে ন্যাস্ত করা হয়।
এ ব্যয়ে পাঁচবিবি, জয়পুরহাট সদর, ক্ষেত্রলাল ও আক্কেলপুরে তুলসী গঙ্গা নদী পুনঃখনন হবে ৪১.৫০০ কি.মি। পাঁচবিবি ও জয়পুরহাট সদরে ছোট যমুনা নদী পুনঃখনন হবে ২৩.১০০ কি.মি। জয়পুরহাট সদর ও আক্কলপুরে চিরি নদী পুনঃখনন হবে ২১.৭০০ কি.মি এবং পাঁচবিবি, জয়পুরহাট সদর ও ক্ষেত্রলালে হারাবতী পুনঃখনন হবে ১৬.০৫০কিঃমিঃ। এ ছাড়াও তুলসী গঙ্গার উভয় তীরে বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ হবে ৩০.৫৭০ কি.মি। উল্লেখ্য যে, গত ২৫ অক্টোবর ২০১৭ বাংলাদেশ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাফর আহম্মেদ খানের সভাপতিত্বে জয়পুরহাট জেলার তুলশীগঙ্গা, ছোট যমুনা, চিড়ি ও হারাবতী নদী পুন:খনন প্রকল্পের যাচাই সভা অনুষ্ঠিত হয়। যাচাই শেষে যাচাই সভার কার্যবিবরণের উপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তৃপক্ষের বরাবরে পাঠানো হয়েছে। ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল (ডিপিপি) প্রস্তুত থেকে শুরু করে যাচাই প্রক্রিয়া পর্যন্ত সম্পন্ন। এখন চুড়ান্ত ও শেষ পর্বে প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখায় প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে জয়পুরহাট পানি উন্নয়নের বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য কিছুটা সদিচ্ছা প্রকাশ করলে প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে অনেক সহজ হবে। কেননা এলাকার উন্নয়নে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের ভ‚মিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন