শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

লক্ষ্মীপুরে নদী ভাঙনে গৃহহারা অসংখ্য পরিবার

এস এম বাবুল(বাবর)লক্ষ্মীপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

লক্ষ্মীপরে নদী ভাঙ্গায় ভিটে মাটিহারা সহ¯্রাধিক পরিবার অনিশ্চিত জীবন নিয়ে বেড়ীবাঁধের দু-পাসে বসবাস করছে। অধিকাংশ বেড়িবাঁধের দুই পাশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি স্থাপন করে অসহায় পরিবার গুলি দিনাতিপাত করছে। জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলার কিছু অংশে মেঘনার ভাঙনে গৃহহারা সহায়-সম্বলহীন হাজার হাজার পরিবার কোন রকমে মাথা গোঁজার জন্য ওইসব বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। 

ল²ীপুরের বেঁড়িবাঁধগুলোতে প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি পরিবার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ও নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাস করছে। বছরের পর বছর বেঁড়িবাঁধে বসবাসরত পরিবার গুলো মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অধিকাংশ সময়ে খাদ্যের অভাবে অর্ধাহারে-অনাহারে তাদের দিন কাটে। স্বাস্থ্য সেবা, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবার মত মৌলিক অধিকার বঞ্চিত এখানকার বাসিন্দারা। চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত থাকায় নানাবিধ জটিল ও কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। 
বারবার নদী ভাঙ্গনে স্থান পরিবর্তন করায় নাগরিকত্ব সনদ কিংবা জন্মসনদ না থাকায় জাতীয় পরিচয়পত্র করতে পারছেন না তারা। ফলে সরকারী কিংবা বেসরকারী সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। বেড়িবাঁধে বসবাস করা শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার আলো থেকে। অধিকাংশ শিশুরা অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে কঠিন কাজ করছে। যে বয়সে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার কথা সে বয়সে তারা দুমুঠো ভাতের যোগান দিতে ভাই কিংবা বাবার সাথে নদী-খালে মাছ শিকার,লাড়কি কুড়ানো কিংবা ইট-ভাটায় কাজ করছেন। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত কিশোরীরা প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছে বাল্যবিয়ের। 
সরকার ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করলেও বিভিন্ন সরকারের আমলে নানা নীতিমালায় ভূমিহীনদের কিছু কিছু জমি বরাদ্ধ দেওয়া হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থানীয় জোতদাররা ভূমিহীনদের নামে-বেনামে অনেক জমি নিজেরাই দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ একাধিক ভূমিহীনদের। খাসজমি প্রদান ছাড়াও বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীনদের পূনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এছাড়া এরশাদ সরকারের আমলে গুচ্ছগ্রাম, বিএনপি সরকারের আমলে আদর্শ গ্রাম প্রতিষ্টা করে ভূমিহীনদের পূনর্বাসন করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় যা খুবই অপ্রতুল।
সদর উপজেলার চররমনীমোহন ইউনিয়নের রহমত খালী বেড়িবাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখাযায়, রহমত খালী বেঁড়িবাধে ১৯৯২-৯৩ সালে বনবিভাগ চর আলী হোসেন রাস্তা থেকে মজু চেীধুরীহাট পর্যন্ত ৪ কিঃমিঃ বেঁিড়বাঁধের দুইপাশের সৃজনকৃত বনজ ও ফলজ গাছে কেটে বিভিন্ন স্থানের নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকার বাসিন্দারা আশ্রয় নিয়েছে। ভিটে-মাটি হারা এসব মানুষ দুই-চারটি জরাজীর্ণ টিন, পাটখড়ি, পলিথিন, ছন কিংবা তাল পাতা দিয়ে গড়ে তুলেছেন বেঁড়ির কোল ঘেষে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি। আর তাতেই বসবাস করছেন শিশু-বৃদ্ধসহ প্রায় পাঁচ শতাধিকেরও বেশি পরিবার। ৫টি মৌলিক অধিকারের কোনটাই এদের মাঝে দেখা যায়নি। গবাদি পশুর সঙ্গে গাদাগাদি করে বেঁচে থাকার পরও তারা খাদ্যের আগে চাচ্ছেন পরিধেয় কাপড়ের নিশ্চয়তা। পরিবারের নারী ও মেয়েদের নেই নিরাপদ শৌচাগার, নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। বছরের পর বছর চলে গেলেও এখন পর্যন্ত সরকারি বেড়িবাঁধের জায়গাটুকু ছাড়া আর কোন সাহায্য পাননি বলে অভিযোগ করেন তারা।
সদর উপজেলার দালাল বাজারে ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নেয়া ইব্রাহিম মিয়া (৬৫) জানান, সদর উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নে তার বাড়ী ছিল। পেশায় তিনি ড্রাইভার ছিলেন। তিনবার নদীভাঙ্গনে তাঁর সর্বস্ব শেষ হয়ে গেছে। কোথাও যাওয়ার কোন জায়গা না থাকায় ওয়াপদা বেড়িবাঁধে ৫/৬ মাস আগে পরিবারের ৯ সদস্যেকে নিয়ে তিনি বসবাস শুরু করেন। এখানে তিনি কৃষিকাজ করে জীবনযাপন করছেন।
ইব্রাহিম মিয়ার পাশে থাকা হারুন মাঝি জানান, বাবার ৫ একর জমি ছিল ও শ্বশুড়ের ২ একর জমিসবই মেঘনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ছয় ভাই তিন বোন সবাই নিঃস্ব হয়ে গেছি, ভিটে-মাটিও নাই। যে যার মত পেরেছি স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিই। পরে বেড়িবাঁধে এসে ঘর তুলি। খোলা আকাশের নিচে বাঁধের ওপর পলিথিন ও বাঁশ দিয়ে ঝুপড়ি তুলে গবাদি পশু ও স্বজনদের নিয়ে আছেন তিনি। বেড়িবাঁধে কোনমতে একটি ঘর তুলে সে ঘরে বয়স্ক মা, অসুস্থ শ্বাশুড়ী এবং তাঁর স্ত্রী ও ৫ কন্যা নিয়ে বসবাস করছেন। মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে যা পান তা দিয়ে কোনো রকম সংসার চালানোর চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন