জনবল সঙ্কট আর নতুন ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন স্থাপন না করায় চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। রোগীদের উপস্থিতিতে হাসপাতালটি সরগম থাকলেও প্রকৃত সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা।
জানা যায়, মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদের সংখ্যা ২৪১টি। পদে কর্মরত ১৭১ জন ও শূন্য রয়েছে ৭০টি পদ। শূন্য পদগুলো হলো- আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার, জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেস্থেসিয়া), সহকারী সার্জনের পদ চারটি, সিনিয়র স্টাফ নার্সের পদ সাতটি, প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, স্টোর কিপার, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, সাকমো’র পদ ছয়টি, ফার্মসিস্টের পদ দুটি, স্বাস্থ্য পরিদর্শকের পদ চারটি, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য সহকারীর পদ ২৩টি, সিএইচসিপি পদে ১০ জন, ওয়ার্ড বয় একটি, এমএলএসএস চারটি, ঝাড়–দার দুইজন এবং মালি পদে একজনের পদ খালি রয়েছে।
উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তিনজন ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে দুইজন ডাক্তার কর্মরত। কিন্তু তারা পাঁচজন ডেপুটেশনে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরো একজন ডাক্তারও রয়েছেন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। নিশ্চিন্তপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার প্রেষণে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আছেন। প্রেষণে থাকা বাকিরা এ উপজেলার বাইরে কর্মরত।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ২০১৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নতুন অত্যাধুনিক একটি অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ পায়। ফলে আগের বিকল অ্যাম্বুলেন্স গ্যারেজে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ২০১৪ সালে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলেও এখন পর্যন্ত স্থাপন সম্ভব হয়নি। কারিগরি ত্রু টির কারণে চালু করা যাচ্ছে না। এক্স-রে মেশিনের একজন টেকনোলজিস্ট কর্মরত থাকরেও তার কোনো কাজ নেই। এ জন্য তার কর্মস্থলে রয়েছে গড়হাজিরা। বর্তমানে কোটি টাকার এক্স-রে মেশিনটি অবহেলিত অবস্থা পড়ে আছে।
মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পেট ব্যথা নিয়ে ভর্তি কুমারদন গ্রামে শওকত প্রধানের ছেলে মাহবুব হোসেন (২৮) সাথে আসা অভিভাবক খোকন বলেন, ডাক্তার আসলেও পরীক্ষার-নিরিক্ষার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রকৃত সেবা পাচ্ছি না। সেবা না পাওয়ার কারণে অসচ্ছল রোগীরাও অন্য হাসপাতালে চলে যায়।
পা ভেঙে আসা ব্রাহ্মণচক গ্রামের মৃত. আবুল মিয়াজীর ছেলে লাল মিয়া বলেন, পা ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। পা এক্স-রে করাতে বলেছে। হাসপাতালে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন আছে। অথচ সচল না থাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে গিয়ে এক্স-রে করাতে হয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া মতলবে স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩১ থেকে ৫০ শস্যবিশিষ্ট হাসপাতালে রূপান্তরিত করেছেন, নতুন অত্যাধুনিক একটি অ্যাম্বুলেন্স ও ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন ব্যবস্থা করেছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন নির্মাণ হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ব্যতীত উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নেই কোনো ডাক্তার। ফলে বিঘিত হচ্ছে চরাঞ্চলসমৃদ্ধ ১৪ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভার বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম।
মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শংকর কুমার সাহা জানান, জনবল সঙ্কট থাকা সত্তে¡ও আমরা স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছি। ওটি প্রস্তুত থাকা সত্তে¡ও জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেস্থেসিয়া) ও না থাকায় আমরা অপারেশন কার্যক্রম চালাতে পারছি না। কারিগরি ত্রু টির কারণে এক্স-রে মেশিন ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা: মো. সাইদুজ্জামান জানান, আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন