শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

লোহাগড়ার কলেজ মাঠে পানিবদ্ধতা

নড়াইল থেকে আতিয়ার রহমান | প্রকাশের সময় : ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:০৮ এএম, ১৩ অক্টোবর, ২০১৮

মাঠে পানি থইথই করছে। মাঠজুড়ে কচুরিপনা ও ঘাসের ঝোপ। দেখে মনে হচ্ছে ডোবা পুকুর। এখানে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা ও আশপাশের ক্লিনিকের বর্জ্য। এ গুলো পানির সঙ্গে মিশে পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এ চিত্র লোহাগড়া সরকারি আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের খেলার মাঠের। মাঠটি বছরের প্রায় সাত মাস থাকে পানির নিচে। কলেজের প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী ছাড়াও উপজেলা সদর ও আশপাশের অন্তত ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ব্যবহৃত মাঠটি পানি জমে থাকায় হচ্ছে না ক্রীড়া চর্চা ও প্রতিযোগিতা। বন্ধ রয়েছে নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আয়োজন।

স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, ওই কলেজ ছাড়াও লোহাগড়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, লোহাগড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, মিতালী মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ উপজেলা সদরের ও আশপাশের অন্তত ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ মাঠে খেলাধুলা করে থাকেন। এ মাঠে নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিতে শিক্ষা বিভাগের আয়োজনে শিক্ষার্থীদের বাছাই পর্বের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এ মাঠেই সম্পন্ন হয়। শরীরচর্চা করতে উপজেলা সদর ও আশপাশের লোকজন এ মাঠ ব্যবহার করেন। বিকেল-সন্ধ্যায় উন্মুক্ত বাতাসে বসে শিশু, কিশোর, যুব-বৃদ্ধদের গল্প-আড্ডার আসর বসে এখানে। গত চার বছর ধরে মাঠটি বছরের প্রায় সাত মাস জলাবদ্ধ থাকায় সব মহল পড়েছেন বিপাকে। মাঠটি ৭ মাস ধরে জলাবদ্ধ থাকায় এখানকার খেলাধুলা শিকেয় উঠেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কলেজের দক্ষিণ পাশে বিশাল এ মাঠ। মাঠের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে চলাচলের সড়ক এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাশে বাড়িঘর। বৃষ্টির পানি বের হয়ে যাওয়ার পথ নেই। তাই সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

স্থানীয়রা জানান, এ মাঠের পানি নিষ্কাশনের চারটি কালভার্ট ছিল। অপরিকল্পিত ভাবে বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনা গড়ে ওঠায় কালভার্ট গুলো বন্ধ হয়ে গেছে। পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে এ জলাবদ্ধতা দূর হতে পারে।

মাঠের পাশের বাসিন্দা আলম শেখ জানান, গত মে মাস থেকে এ পর্যন্ত পানির নিচে রয়েছে মাঠটি। নভেম্বর পর্যন্ত পানি থাকবে। পানি পচে দুর্গন্ধ হওয়ায় পার্শ্ববর্তী বাসিন্দারা খুবই সমস্যায় আছেন। মশার উপদ্রবও অনেক বেড়েছে।

লোহাগড়া ইয়াং স্টার ক্রিকেট একাডেমির পরিচালক ও কোচ আরমান চৌধুরী বলেন, তরুণ ক্রিকেটার তৈরি করতে নিয়মিত চর্চা করতে হয়। আয়োজন করতে হয় প্রতিযোগিতার। এ জন্য কলেজের খেলার মাঠটিই ছিলো সবচেয়ে উপযোগী। সাত মাস ধরে জলাবদ্ধ থাকায় আমরা খুবই সমস্যায় আছি।

লোহাগড়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক দিলীপ চক্রবর্তী বলেন, আমাদের বিদ্যালয় জাতীয় শীতকালীন অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় টানা দশবার দেশসেরা হয়েছে। এর প্রশিক্ষণ সকাল-বিকাল এ মাঠেই হতো। কিন্তু এতোদিন জলাবদ্ধ থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছি।

লোহাগড়া কলেজের সম্মান শ্রেণির সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী সুজন মাহমুদ বলেন, খেলাধুলার জায়গায় নেই। তাই শিক্ষার্থীরা বিকেলে ভিন্নভাবে সময় কাটায়। কলেজপাড়ার বাসিন্দা রেশমিন জামান বলেন, আগে বিকেল-সন্ধ্যায় এ মাঠে ছেলেমেয়ে নিয়ে হাটাহাটি করতাম, গল্প-আড্ডার আসর জমাতাম। ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী পুর্নি খানম বলেন, বাড়িতে গিয়ে ঈদ ও পূজা-পার্বনে বন্ধুরা মিলে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতাম এ মাঠে। গত চার বছর তা করতে পারছি না।

কলেজের অধ্যক্ষ মো. মহাব্বত আলী বলেন, মাঠটির পাশ দিয়ে পরিকল্পিতভাবে নালা (ড্রেন) নির্মাণ করে এ জলাবদ্ধতা দূর করতে হবে। এ জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সহাযোগিতা প্রয়োজন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন