শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

অবৈধ দখলে কুষ্টিয়ায় রেলের সম্পত্তি

এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন স্থানে রেলওয়ের কোটি কোটি টাকার জায়গা দখল করে নিয়েছে ভূমি দস্যুরা। রেলওয়ের কিছু অসৎ কর্মকর্তার যোগসাজশে কুষ্টিয়া শহরের কোর্ট স্টেশন, বড় স্টেশন সংলগ্ন জায়গা, পোড়াদহ রেলওয়ে হাসপাতাল, হাসপাতাল মাঠ, পোড়াদহ জিআরপি থানার পুলিশ ব্যারাক, পোড়াদহ হাইস্কুলের পেছনে পুকুর, রেলের আশপাশে জায়গাসহ বিভিন্ন স্থানের জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। এসব জায়গা দখলমুক্ত করতে রেলমন্ত্রী এবং রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ বাস্তবায়িত হচ্ছে না। রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মচারী, কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন আ.লীগ, জাসদ দলের নেতাসহ ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপের কারণে থমকে গেছে উচ্ছেদ অভিযান। দু’দুবার কুষ্টিয়ায় এ সব অবৈধ স্থাপনা ভাঙা শুরু করার পরও অজ্ঞাত কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। পোড়াদহে নাসিম সাইগল মুন্নার মার্কেটসহ নামমাত্র স্থাপনা ভাঙা হলেও বহু জায়গা বেদখলই রয়ে গেছে। ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ের দোতলা হাসপাতাল ভেঙে পাকা মার্কেট করেছে। এসব ঘটনায় জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
রেলওয়ে পাকশী বিভাগের ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. ইউনুছ আলীর তথ্যমতে, রেলের পাকশী বিভাগের জমির পরিমাণ ২৬ হাজার ৩০৫.৮০৯ একর। এর মধ্যে রেললাইন, স্টেশন, ব্রিজ, বিভিন্ন কোয়ার্টার, স্থাপনাসহ অপারেশনাল (রেলওয়ের কাজে ব্যবহৃত) জমির পরিমাণ ৯ হাজার ৮১৯. ৫০ একর। এর বাইরে রেলওয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা, আবাদ ও বিভিন্ন কারণে লাইসেন্স বা লিজ দেয়া হয়েছে ৪ হাজার ৮১৫.৮৩৫৪ একর জমি। বাকি প্রায় ২ হাজার ৪৭০.১৬ একর জমি চলে গেছে অবৈধ দখলদারদের দখলে। আর ৯ হাজার ২০০.৩১৩৬ একর জমি বহু বছর অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এসব জমিও চলে যাচ্ছে দখলদারদের হাতে।
সূত্রমতে, কুষ্টিয়া শহর, পোড়াদহ, মিরপুর, হালসা, ভেড়ামারা, খোকসা ও কুমারখালীতে বাংলাদেশ রেলওয়ের সবচেয়ে বেশি জমি বেদখল হয়ে আছে। জেলার ৬ উপজেলার বিভিন্ন রেল লাইনের পাশে রেলের জমিগুলো বর্তমানে অবৈধ দখলদারদের হাতে। কুষ্টিয়ায় কোটি কোটি টাকা মূল্যের ২৫ হাজার ৯৮ একর জমি বেদখল হয়েছে। ৩১৩ জন ব্যক্তি অবৈধভাবে এ বিপুল পরিমাণ জমি দখল করেছে। এর মধ্যে পোড়াদহ রেলওয়ে জংশনের ১২১জন অবৈধ দখলদার ৪১ হাজার ৩শ’ ১৬ বর্গফুট জায়গা দখল করে অবৈধ পাকা ও আধা পাকা স্থাপনা গড়ে তুলেছে।
জানা যায়, পোড়াদহ অত্র অঞ্চলের প্রথম রেলওয়ে জংশন ও দেশের বৃহত্তম কাপড় হাট হওয়ার কারণে এখানে যাত্রীদের প্রচুর ভিড় থাকতো। সে কারণেই ব্রিটিশ আমলে এখানে ট্রেনের যাত্রীদের চিকিৎসা সেবার জন্য দোতলা রেলওয়ে হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। এ হাসপাতাল থেকে শুধু ট্রেনের যাত্রীরাই নয়, অত্র এলাকার মানুষও চিকিৎসা সেবা পেত। কিন্তু এ ঐতিহ্যবাহী হাসপাতালটিও অবৈধ দখলকারীদের হাত থেকে মুক্তি পায়নি। আগেই দখল হয়ে গেছে হাসপাতাল মাঠটি। সেখানেও গড়ে তোলা হয়েছে স্থাপনা।
এলাকাবাসী জানান, ওই এলাকার কিছু অসাধু ঠিকাদার, ব্যবসায়ী রেলওয়ে কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে পোড়াদহের রেলওয়ের জায়গা একের পর এক গ্রাস করে চলেছে। ফলে বেহাত হয়েছে পোড়াদহ রেলগেটের সামনে পুলিশ ব্যারাক। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে মার্কেট। পোড়াদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পেছনে পুকুর ভরাট করে দখলকারীরা মার্কেট তৈরি করেছে। পোড়াদহ রেলওয়ে মসজিদ সংলগ্ন পুকুরের পাশে ভরাট করেও মার্কেট নির্মাণ করেছে। বেদখল হয়েছে রেলগেটের সামনে মেথরপট্টি, বেবিস্ট্যান্ডের কাছে মেথর বস্তিসহ বিভিন্ন জায়গা। ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে স্থানীয় কিছু নেতা এ দখলের কাজে লিপ্ত বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।
দখলদাররা পোড়াদহ-স্বরূপদহ গ্রামের কিন্ডারগার্টেন-এর পাশে বিরাট পুকুর ভরাট করে অবৈধভাবে পাকা স্থাপনা গড়ে তুলেছে। ওই গ্রামবাসীর অভিযোগ, আব্দুল মালেক, মধু, ফরহাদ গং মিলে ২০-২২ জন যুবক সেখানে পাকা স্থাপনা গড়ে তুলেছে।
এর আগে রেলওয়ে কর্মকর্তারা কুষ্টিয়া শহরের বড়স্টেশনের পাশে অবৈধ স্থাপনা ভাঙার মুহূর্তে কুষ্টিয়া আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার হস্তক্ষেপে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কুষ্টিয়া বড় বাজারে রেলওয়ের অবৈধ স্থাপনা কিছুটা উচ্ছেদ করলেও অন্য বিভিন্ন স্থানের জায়গার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। রেলওয়ের জমি জবর দখলের বিরুদ্ধে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও তা লংঘিত হচ্ছে।
রেল লাইনের পাশে স্থাপনা গড়ে তোলায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। অনেকেই আবার এসব জমি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছে। পোড়াদহ এলাকায় চলছে ভূমিদস্যুদের রেলওয়ের জমি দখলের প্রতিযোগিতা। প্রধানত দুটি গ্রুপ এ দখলদারিত্ব নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল হচ্ছে এসব জমির অবৈধ দখলদার। তারা এ জমিতে গড়ে তুলেছে বস্তি যা অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে নানা রকম অপরাধ ও অপরাধীদের নিরাপদ আস্তানা। রেলওয়ে জিআরপি পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের কোন উদ্যোগ নেই রেলওয়ে কর্র্তৃপক্ষের। অথচ বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব বিভাগ রয়েছে ভূমি দেখাশোনার জন্য। কিন্তু পাকশী রেলওয়ে অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও পোড়াদহ রেলষ্টেশনের কানুনগোসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় টাকার বিনিময়ে রেলের সম্পত্তি অন্যদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।
এলাকাবাসী পোড়াদহের ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে হাসপাতাল ভেঙে করা মার্কেটের স্থানে হাসপাতালের পুনঃপ্রতিষ্ঠা দেখতে চান এলাকাবাসী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন