দখল আর দূষণে হারিয়ে যেতে বসেছে ফেনী অঞ্চলের পাঁচ নদী। অবৈধ দখল আর নাব্যতা সঙ্কটে এসব নদী বর্তমাণে অস্তিত্ব সঙ্কটে রয়েছে। নদীর বিভিন্ন প্রান্তে দখল আর সংকোচনের কারণে নাব্যতা সঙ্কট চরমে পৌঁছেছে। সোনাগাজীর মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকার বিশাল চর দখলের পর এবার বড় ফেনী নদী দখলে মেতে উঠেছে প্রভাবশালীরা।
সরেজমিন পরিদর্শন, এলাকাবাসী ও পাউবো কর্তৃপক্ষ থেকে জানা যায়, সোনাগাজীর উপকূলীয় এলাকা নদীভাঙন থেকে রক্ষা করতে ১৯৮৬ সালে সাড়ে তিন কিমি বাঁধে মুহুরী সেচ প্রকল্প নির্মাণ করা হয়।
নদীর সোনাপুর-সোনাগাজী-জোরারগঞ্জ সড়কের মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকার উজানের সংযোগস্থলের উভয়পাশে ভূমিদস্যু চক্র বড় ফেনী নদীর তীরে বাঁধ দিয়ে অন্তত ৫শ’ একর নদী দখল করে পুকুর কেটে মৎস্য চাষ করছে। দখলের কারণে বড় ফেনী নদী সঙ্কুচিত হয়ে উজান থেকে পানির প্রবাহ বিঘিœত হচ্ছে। ফলে পানির চাপ বেড়ে মুহুরী বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মুহুরী বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নুরুল আফছার বলেন, নদী দখল রোধ করতে কয়েক বছর আগে অভিযান চালালে হামলায় পুলিশসহ ১০ জন আহত হন। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দিয়েও অপতৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না।
এদিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে উৎপত্তি হয়ে মুহুরী নদী বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় থেকে ছাগলনাইয়া ও সোনাগাজী হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। স্থানীয়রা জানান, নাব্যতা হারানো এ নদীটি কখনো ড্রেজিং করা হয়েছে কি না কেউ বলতে পারেন নি। এলাকার প্রবীণরাও জানেন না বিষয়টি। প্রায় ৫০ বছর ধরে কোন ড্রেজিং না করায় এ নদী বর্তমানে নাব্যতা হারিয়ে অনেকটা মাছ চাষের পুকুরে পরিণত হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, ম‚হুরী ও আরেক নদী কহুয়া খনন, ড্রেজিং ও বাঁধ সংস্কারের জন্য ডিপিপি প্রক্রিয়াধীন। এ প্রকল্প অনুমোদন হলে মুহুরী-কহুয়া নদী খনন বা ড্রেজিং ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হবে।
মুহুরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, নদীর মাঝখানে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ দিয়ে মৎস্য চাষ করা হচ্ছে। এতে ভাঙনের মুখে পড়ছে সোনাগাজী এলাকার নদী পাশের গ্রামগুলো। ইতোমধ্যে এলাকার গ্রায় ৭০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ছাগলনাইয়ার উত্তর পানুয়া গ্রামে মুহুরী নদীর ভাঙন তীব্র হচ্ছে। ফলে উত্তর পানুয়া গ্রামের শ’ শ’ একর ফসলি জমি, বাড়ি, গাছের বাগান ও শ্মশানসহ জনপদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে সিলোনিয়া নদী। এ নদী পরশুরাম উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে মুহুরীতে পতিত হয়েছে। এছাড়া এ নদীর শাখা নদী হচ্ছে অভয়া। এ দুটি নদীর চর দখল করে স্থানীয়রা গাছের বাগান আবার কোথাও স্থায়ী ইমারত নির্মাণ করেছে। এতে নদী ২টি সঙ্কুচিত হয়ে চরম নাব্যতা সঙ্কটে পড়েছে। ছোট ফেনী সদর এক সময়কার গতিপথ পরিবর্তন হয়ে সৃষ্টি হয়েছে কালিদাস পাহালিয়া নদী। এ নদীটিকে মূল নদীর সাথে একত্রিত করা গেলে প্রাণ ফিরে পেতো নদীটি। কিন্তু এ উদ্যোগ নেবার কেউ নেই। পাউবো এ ব্যাপারে কয়েকবার পদক্ষেপ নিলেও উধ্বতন মহলের অবহেলার কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি।
এসব বিষয়ে জানতে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী (অতি.দা.) মো. নাছির উদ্দিনকে ফোন করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য শিরিন আখতার বলেন, মুহুরী নদী রক্ষায় জনগন সচেতন হতে হবে। বর্জ্য পদার্থ, পলিথিনসহ নদী দ‚ষিত হয় এমন কিছু নদীতে ফেলা বন্ধে আইনগত ব্যবস্থা ও দখলকৃত স্থানসম‚হ চিহ্নিত করে দখলমুক্ত ও পরিকল্পিতভাবে নদী খনন ও ড্রেজিং করে বালি, পলি অপসারণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে মুহুরী-কহুয়ার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ স্থায়ীভাবে মেরামত করা হবে। দেশীয় মাছের প্রধান উৎপাদনস্থল হল নদী-নালা, খাল বিল। প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ মাছের প্রাকৃতিক বিচরণক্ষেত্র রক্ষার্থে বদ্ধপরিকর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন