টাঙ্গাইলের বাসাইলে বংশাই নদীতে ভাঙনে বিলিন হচ্ছে ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি ও জন চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। হুমকির মুখে রয়েছে হাট-বাজারসহ নানা স্থাপনা। ফলে তিনটি উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। কয়েক শ’ পরিবার ভাঙন আতঙ্কে নদী তীরে অসহায় জীবন-যাপন করছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বার বার প্রতিশ্রুতি দিলেও নদী শাসন কিংবা ভাঙন রোধে এগিয়ে আসেনি কেউ।
সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইলের বাসাইল, সখীপুর ও কালিহাতী এই তিনটি উপজেলার মিলনস্থল কাউলজানী এলাকায় বংশাই নদীতে ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে গেছে। লাঙনাই নদীর উৎসমুখে বাঁধ দিয়ে স্বাভাবিক প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ করায় ভাঙনের এই তীব্রতা বলে জানান স্থানীয়রা। এই সড়কের কাউলজানী পুরাতন বাজার থেকে মলিয়ানপুর, ডুমনীবাড়ি হয়ে কল্যানপুর, গিলাবাড়ি ও সুন্যা এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা রয়েছে। তিনটি উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ এখান দিয়ে যাতায়াত করলেও নদী শাসন বা ভাঙন রোধে কেউ এগিয়ে আসেনি। ইতোমধ্যে অসংখ্য ঘর-বাড়ি, সড়ক নদী গর্ভে চলে গেছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে হাট-বাজার, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি গভীর সেচ পাম্প। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদী তীরের পাঁচ শতাধিক পরিবার।
স্থানীয় ইউপি সদস্য এখলাস মিয়া বলেন, আমার ওয়ার্ডের অধিকাংশ বসতি নদী, খাল ও বিল এলাকায়। ফলে বর্ষা এলেই এই এলাকায় ভোগান্তি বেড়ে যায় কয়েকগুন।
মান্দারজানী গ্রামের বাসিন্দা হাতেম আলী, ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
মলিয়ানপুর গ্রামের ভাঙন কবলিত বাসিন্দা শান্তা বেগম জানান, বাড়ির সামনের রাস্তাটি নদী গর্ভে চলে গেছে। এখন বাকি রয়েছে আমার বাড়িটা। ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে সব সময় ভাঙন আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়।
ডুমনিবাড়ি গ্রামের ৮০ বছরের পৌর ব্যক্তি মকসেদ আলী বলেন, ঘর-বাড়ি ভাঙলেও কেউ সাহায্য করেনি। এদের মতো জাকির, সুরুজ আলী, আল মামুন, সালাহউদ্দিনসহ অনেকেই নানা রকম অভিযোগ করে বলেন, হাট-বাজার এবং স্কুল, কলেজে যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। এখান দিয়েই ইউনিয়ন পরিষদসহ উপজেলা শহর ও জেলা শহরে যাতায়াত করতে হয়। ভেঙে যাওয়ায় ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নিলে আমাদের কষ্টের শেষ থাকবে না।
কাউলজানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, সড়কটি একাধিকবার নির্মাণ করা হলেও প্রতিবারই ভেঙে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তা আমাদের নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড এখানে নদী শাসনের উদ্যোগ নিলে তবেই হয়তো রক্ষা সম্ভব।
বাসাইল উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম ভাঙনের বিষয়টি পাউবোকে জানিয়েছেন দাবি করে বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এই এলাকায় অল্প পরিসরে কাজ করে ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়। বড় প্রকল্পের মাধ্যমে নদী শাসনের ব্যবস্থা করলে হাজারো অসহায় পরিবারের ভিটে-বাড়ি রক্ষা পাবে। এ জন্য তিনি সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তবে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি তাই ক্ষতিগ্রস্থ ওই এলাকার ভাঙন সম্পর্কে তেমন অবগত নই। সরেজমিন ভাঙনকবলিত এলাকা দেখে তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন