শুধু মুসলমান হওয়ার অপরাধে নিরপরাধ, নিরস্ত্র মুসলমানরা নির্মম নির্যাতন নিপীড়ন ও গণহত্যার শিকার হচ্ছে। কেন মুসলমানরা মজলুম হচ্ছে? তাহলে কি তারা মুমিন নয়? তারা কি কোরআনে কারীমের কৃত ওয়াদার অন্তর্ভুক্ত নয়? আমরা যদি কোরআনে কারীম গভীরভাবে অধ্যায়ন করি তাহলে এ প্রশ্নের উত্তর সহজভাবে পেয়ে যাব। কোরআনে কারীমে আল্লাহতায়ালা প্রকৃত মুমিনদের গুণ-বৈশিষ্টের কথা উল্লেখ করেছেন। সূরা আনফালে ইরশাদ হয়েছে : ‘মুমিন তো তারাই যাদের অন্তর কম্পিত হয় যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয়, আর যাদের সামনে আয়াত পাঠ করা হয় তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা স্বীয় প্রতিপালকের ওপর ভরসা করে। তারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে আমি যা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে, তারাই হলো প্রকৃত ঈমানদার।’ সূরা মুমিনে ইরশাদ হয়েছে : ‘মুমিনগণ কামিয়াব হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাজে বিন¤্র।’ সূরা তওবায় ইরশাদ হয়েছে : ঈমানদার নরনারী একে অপরের বন্ধু, তারা সৎ কাজের আদেশ করে অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে, নামাজ কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে, তাদের ওপর আল্লাহ কৃপা করবেন।’
সূরা হুজরাতে আছে, মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই, অতএব তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মিমাংসা করে দাও। সূরা হুজরাতে আরো আছে, তারাই ঈমানদার যারা আল্লাহর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং তাদের জীবন সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারাই সত্যনিষ্ঠ।’ সূরা নুরে আছে, ঈমানদারদের উক্তি তো এই যে, ‘যখন তাদের মাঝে ফয়লাসা করে দেয়ার জন্য আল্লাহ তার রাসূলের দিকে আহŸান করা হয়, তখন তারা বলে আমরা শুনেছি এবং আদেশ মেনে নিয়েছি, আর তারাই সফল কাম।’
এই আয়াতগুলো সামনে রেখে যদি আমরা চিন্তা করি এবং কোটি কোটি মুসলমানের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখতে পাই, প্রকৃত মুমিনের গুণ বৈশিষ্ট্য যে কোরআনে কারীমে উল্লেখ করা হয়েছে, তার কিঞ্চিত পরিমাণ আমাদের মাঝে নেই। আমরা নামাজ পড়ি নামাজে আমাদের মনোযোগ নেই। অন্তরে আল্লাহর জিকির নেই। আমাদের সমাজে অন্যায় অসৎ কাজ হচ্ছে তার প্রতিবাদ করছি না।
সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজের নিষেধ একেবারে ছেড়ে দিয়েছি। সুতরাং, আমরা কোরআনের পরিভাষায় মুমিন কিনা সেটা এখন বড় প্রশ্ন। ঈমান অর্থ হলো কালিমা পাঠ করা এবং ইসলামের কিছু বিধান মেনে চলা, তাহলে আমরা সবাই মুমিন। কিন্তু মুমিন অর্থ যদি হয় কোরআনের বর্ণিত বিশেষ গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যসমূহ অর্জন করা, তাহলে সে অর্থে আমরা কতটুকু ঈমানদার হতে পেরেছি সেটাই এখন চিন্তার বিষয়।
তবে, এপর্যায়ে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে, মুসলমানদের যত দোষ থাকুক তারা মুসলমান। তারপর তারা ইহুদি খ্রীস্টানদের হাতে মার খাচ্ছে কেন? ইহুদি খ্রীস্টানরা বিজয়ী, আর মুসলমানরা পরাজিত কেন? এ প্রশ্নের উত্তর আরো সহজ। ইহুদি খ্রীস্টানরা সৃষ্টির বিষয়ে আল্লাহতায়ালার অনুসৃত রীতিনীতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছে এবং সে অনুযাযী কাজ করছে। অপর দিকে মুসলমানরা সম্পূর্ণ ভুলে গেছে। ইহুদি খ্রীস্টানরা পুরো জাতির বিজয়ের জন্য ঘাম ঝরাচ্ছে। আর মুসলমানরা অলস ঘুমে বিভোর।
ইহুদি খ্রীস্টানরা শিক্ষা দীক্ষায় নিয়োজিত আর মুসলমানরা মুর্খতার গøানিবহন করে বেড়াচ্ছে। ইহুদি খ্রীস্টানরা আগামীকালের প্রস্তুতি গ্রহণ করে রেখেছে সেখানে মুসলমানরা আজকের করণীয় সম্পর্কে উদাসীন। জয় পরাজয় ও উন্নতি অধোগতির ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান কারো প্রতি অবিচার করে না। কোনো জাতির পক্ষপাতিত্বও করে না। এটা ইসলামেরই শিক্ষা। কিন্তু মুসলমানেরা কেন জানি এই শিক্ষা গ্রহণ করতে বা বুঝতে নারাজ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন