শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

অপার ক্ষমার ঘোষণা এর পরও কি গোনাহ রয়ে যাবে

মুহাম্মাদ ফজলুল বারী | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০২১, ১২:১২ এএম

আল্লাহ তা‘আলা গাফফার-মহা ক্ষমাশীল; তিনি ক্ষমা করতেই ভালোবাসেন। তাই তো ক্ষমার জন্য তিনি রেখেছেন- বিভিন্ন উপলক্ষ; এই উপলক্ষে সেই উপলক্ষে তিনি বান্দাকে ক্ষমা করেন। পৃথিবী-ভর্তি গোনাহও তিনি ক্ষমা করে দেন। প্রয়োজন শুধু ফিরে আসা। তওবার মাধ্যমে তাঁর ক্ষমার দুয়ারে ধরনা দেয়া। ব্যাস, বান্দার ক্ষমা চাইতে দেরি, ক্ষমা করতে দেরি নেই। আর শুধু ক্ষমা নয়, ক্ষমা করে তিনি টেনে নেন রহমতের ছায়ায়; এমনকি কখনো পাপের সংখ্যা পরিবর্তন করে দেন পুণ্য দিয়ে।

বান্দাকে হতে হবে ‘তাওয়াব’-গোনাহ হয়ে গেলেই সাথে সাথে তওবা করতে হবে। তওবা করতে হবে দিল থেকে, অনুশোচনার সাথে। তাহলেই লাভ করা যাবে ‘গাফফার’-এর ক্ষমা। হাদীস শরীফে ইরশাদ : ‘আত তাওয়াবুনাল খাত্ত¡ায়িনা ও খায়রু খাত্ত¡াউন আদামা ইবনি কুল্লি’। প্রতিটি বনী আদম ‘খাত্তা’-বারংবার পাপকারী। তবে ‘খাইরুল খাত্তাঈন’ অর্থাৎ পাপকারীদের মধ্যে উত্তম হলো তারা, যারা ‘তাওয়াবূন’ অর্থাৎ যারা বেশি বেশি তওবা করে; গোনাহ হলেই তওবা করে নেয়। (জামে তিরমিযী : ২৪৯৯)।

হাঁ, গোনাহ হলে তওবা করে নেয়াই তো মুমিনের গুণ। মুমিনের এ গুণের বর্ণনা এসেছে কোরআনে, এভাবে : এবং তারা সেই সকল লোক, যারা কখনো কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে বা (অন্য কোনোভাবে) নিজেদের প্রতি যুলুম করলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার ফলশ্রæতিতে নিজেদের গোনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া কেই বা আছে, যে গোনাহ ক্ষমা করতে পারে? আর তারা জেনেশুনে তাদের কৃতকর্মে অবিচল থাকে না। (সূরা আলে ইমরান : ১৩৫)।

এই আয়াতের এক আয়াত আগে আল্লাহ বান্দাকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে প্রতিযোগিতামূলক ধাবিত হওয়ার আহŸান জানিয়েছেন। এরপর (উপরের আয়াতে) বর্ণনা করেছেন- যারা তাঁর মাগফিরাত ও জান্নাত পাবে, তাদের গুণ ও বৈশিষ্ট্য।

এর পরও কি গোনাহের পাল্লা ভারি হবে : বান্দার নেকী-বদী লিপিবদ্ধ করা হয়; কিয়ামতের দিন বান্দার সামনে তা মেলে ধরা হবে। ছোট বড় সবকিছু লেখা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার দয়া দেখুন- নেক কাজের ইচ্ছা করলেই একটি নেকী লেখা হয় আর সে নেক কাজটি করলে দশ থেকে সাতশটি পর্যন্ত নেকী লেখা হয়; কখনো আল্লাহ আরো বাড়িয়ে দেন। পক্ষান্তরে কেউ যদি কোনো গোনাহের ইচ্ছা করে, তো যতক্ষণ গোনাহটি না করে ততক্ষণ কোনো গোনাহ লেখা হয় না। তারপর যদি গোনাহটি করে ফেলে তখন মাত্র একটি পাপ লেখা হয়।

কেউ কোনো সৎ কাজ করলে সে তার দশগুণ পাবে আর কেউ কোনো অসৎ কাজ করলে তাকে শুধু একটি পাপের শাস্তি দেয়া হবে। আর তাদের প্রতি কোনো যুলুম করা হবে না। (সূরা আনআম : ১৬০)। হাদীসে কুদসীতে হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন : বান্দা যখন কোনো নেক কাজের ইচ্ছা করে, উক্ত নেক কাজ না করলেও (এ ইচ্ছার কারণে) একটি নেকী লেখা হয়। যদি সে নেক কাজটি করে তাহলে দশ থেকে সাতশগুণ পর্যন্ত নেকী লেখা হয়। আর যখন কোনো গোনাহের ইচ্ছা করে, কিন্তু ওই পাপ কাজটি করে না; তখন (এ ইচ্ছার কারণে) কোনো গোনাহ লেখা হয় না। হাঁ, যদি ওই পাপ কাজটি করে বসে তখন মাত্র একটি পাপ লেখা হয়। (সহীহ মুসলিম : ১২৮)।

কোথায় এক আর কোথায় দশ থেকে সাতশ! এছাড়া গোনাহ মাফ হওয়ার বিভিন্ন প্রসঙ্গ তো রয়েছেই। এই আমল করলে পিছনের এক বছরের গোনাহ মাফ হয়। ওই আমল করলে গোনাহ মাফ। এর পরও কি নেকির পাল্লা ভারি হবে না!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Mulla Tashfin ১২ নভেম্বর, ২০২১, ৮:২৩ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ক্ষমা করবেন- এটা মহান আল্লাহর ঘোষণা। তবে ক্ষমা লাভে অবশ্যই বান্দাকে তাঁর কাছে খাঁটি তাওবা করতে হবে।
Total Reply(0)
Nazmul Hasan ১২ নভেম্বর, ২০২১, ৮:২৩ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি অনেক দয়াবান। কারণ আল্লাহ তাআলা বান্দার দুনিয়ার সব অপরাধকে গোপন রাখেন।
Total Reply(0)
Badal Chowdhury ১২ নভেম্বর, ২০২১, ৮:২৪ এএম says : 0
মানুষ দুনিয়াতে যে সব অপরাধ করে তা যদি প্রকাশ পেত; তাহলে জনসম্মুখে মানুষের চলাচল অসম্ভব হয়ে যেত। যদিও দুনিয়াতে মানুষের গোপন পাপসমূহ আল্লাহ প্রকাশ করেন না কিন্তু পরকালে বান্দার গোপন ও প্রকাশ্য সব অপরাধই প্রকাশ পাবে। তা হোক বেশি বা অনু পরিমাণ। এটাও আল্লাহর ঘোষণা।
Total Reply(0)
Borhan Uddin ১২ নভেম্বর, ২০২১, ৮:২৪ এএম says : 0
মানুষ ভুল করবে আবার তা থেকে তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা লাভ করবে এটা মহান আল্লাহ পাকের ঘোষণা।
Total Reply(0)
Kafi Akond ১২ নভেম্বর, ২০২১, ৮:২৫ এএম says : 0
মানুষ পাপ করবে; আবার অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআলা ওই বান্দাকে ক্ষমা করে দিবেন। সে ব্যক্তি আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয়বান্দায় পরিণত হবেন। এটাও আল্লাহর ঘোষণা। কেননা অপরাধী বান্দা যখন আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তখন তিনি অত্যন্ত খুশী হন।
Total Reply(0)
Habibul Nabi ১২ নভেম্বর, ২০২১, ৮:২৫ এএম says : 0
আবার মানুষ যদি পাপ করা ছেড়ে দিত তবে মহান আল্লাহ এ জাতি ও জনপদকে ধ্বংস করে দিয়ে অন্য জাতি সৃষ্টি করতেন মর্মে হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। সুতরাং মানুষ ভুল করবে, অন্যায়-অপরাধ করবে আবার তা থেকে তাওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন