শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

শবে বরাতে কী আমল করব

মুহাম্মাদ এনামুল হাসান | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০২২, ১২:১৩ এএম

শবে বরাত এবং শবে কদর মুসলিম উম্মাহর তাৎপর্যমন্ডিত দু’টি রজনী। তবে মনে রাখতে হবে, এ দু’রাতের জন্য বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামাজ নেই। সব সময় যেভাবে নামাজ পড়া হয় সেভাবেই পড়বে অর্থাৎ দুই রাকাত করে যত রাকাত সম্ভব হয় আদায় করবে এবং যে সূরা দিয়ে সম্ভব হয় পড়বে। তদ্রুপ অন্যান্য আমলেরও বিশেষ কোনো পন্থা নেই। কোরআন তেলাওয়াত, যিকর-আযকার, দু‘আ-ইস্তেগফার ইত্যাদি নেক আমল যে পরিমাণ সম্ভব হয় আদায় করবে।

তবে নফল নামাজ দীর্ঘ করা এবং সিজদায় দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করা উচিত, যা গত আলোচনায় উল্লেখিত হাদীস শরীফ থেকে জানা গেছে। বিভিন্ন বই-পুস্তকে নামাজের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন লেখা আছে অর্থাৎ এত রাকাত হতে হবে, প্রতি রাকাতে এই এই সূরা এতবার পড়তে হবে- এগুলো ঠিক নয়। হাদীস শরীফে এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই, এগুলো মানুষের মনগড়া পন্থা।

বলাবাহুল্য, যে কোনো বই-পুস্তিকায় কোনো কিছু লিখিত থাকলেই তা বিশ্বাস করা উচিত নয়। বিজ্ঞ আলিমদের নিকট থেকে জেনে আমল করা উচিত। শবে বরাত ও শবে কদরের নফল আমলসমূহ, বিশুদ্ধ মতানুসারে একাকি করণীয়। ফরয নামাজ তো অবশ্যই মসজিদে জামাআতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকি পড়বে। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার প্রমাণ হাদীস শরীফেও নেই, আর সাহাবায়ে কেরামের যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না। (ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম ২/৬৩১-৬৪১; মারাকিল ফালাহ পৃ. ২১৯)।

তবে কোনো আহবান ও ঘোষণা ছাড়া এমনিই কিছু লোক যদি মসজিদে এসে যায় তাহলে প্রত্যেকে নিজ নিজ আমলে মশগুল থাকবে, একে অন্যের আমলে ব্যাঘাত সৃষ্টির কারণ হবে না। শবে বরাত ও শবে কদর উপলক্ষে বিভিন্ন মসজিদ ও দোকানপাটে আলোকসজ্জা করা হয়, পটকা ফোটানো হয় ও আতশবাজি করা হয়। সেই সাথে হালুয়া-রুটি, খিচুড়ি ইত্যাদি খাবারের আয়োজন করা হয়।

এগুলো কিছু ভুল রেওয়াজ, যা পরিহার করা আবশ্যক। আলোকসজ্জা বা আতশবাজিতে অপচয়ের পাশাপাশি বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণও রয়েছে। তাই তা সর্বোতভাবে পরিত্যাজ্য। আর হালুয়া-রুটি বা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্য বানানো, আত্মীয়-স্বজনের মাঝে বিতরণ করা, তদ্রুপ খিচুড়ি রান্না করা এবং গরীব-মিসকীনদের মাঝে বণ্টন করা সাধারণ অবস্থায় জায়েয ও ভালো কাজ হলেও এটাকে এ রাতের বিশেষ আমল মনে করা এবং এসবের পেছনে পড়ে এ রাতের মূল কাজ তওবা-ইস্তেগফার, নফল ইবাদত ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত হওয়া শয়তানের ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়।

মূল কথা এই যে, এসব রাত উৎসবের নয়, ইবাদত-বন্দেগী ও তওবা- ইস্তেগফারের রাত। তাই রসম-রেওয়াজের অনুগামী হয়ে এ রাতে উপরোক্ত কাজকর্মে লিপ্ত হওয়া নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত করা ছাড়া আর কিছুই নয়। (ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম ২/৬৩২; আলমাদখাল লি-ইবনিল হাজ্ব ১/২৯৯ ও ১/৩০৬, ৩০৭; তানকীহুল হামীদিয়াহ ২/৩৫৯; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৫/২৮৯)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Numan Haider Chaudhury ১৮ মার্চ, ২০২২, ৬:১৩ এএম says : 0
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন উম্মাতে মুহাম্মদির জন্য এমন কতিপয় বরকতময় বিশেষ মাস, দিন ও রাত দান করেছেন, যেগুলোর গুরুত্ব, মাহাত্ম্য ও ফজিলত অপরিসীম। সেসবের মধ্যে পবিত্র শবে বরাত অন্যতম।
Total Reply(0)
Umar Faruk ১৮ মার্চ, ২০২২, ৬:১৪ এএম says : 0
বর্তমান সময়ে এ রাতে এমন কিছু কর্মকান্ড প্রচলিত আছে, যা সম্পূর্ণ শরিয়তবিরোধী। যেমন- ঘর-বাড়ি, দোকান, মসজিদ আলোকসজ্জা করা, মাজার-কবরস্থানে ফুল দেয়া ও আলোকসজ্জা করা, আতশবাজি, পটকা ফোটানো ইত্যাদি।
Total Reply(0)
Imran Selim ১৮ মার্চ, ২০২২, ৬:১৫ এএম says : 0
মনে রাখতে হবে, শবে বরাতে নির্দিষ্ট কোনো আমল নেই, আবার এই রাতের জন্য আমলের আলাদা কোনো নিয়মও কুরআন-হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত নয়। তাই আমাদের সকলের উচিত যাবতীয় ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে এ পবিত্র রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া, তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া, আল্লাহর কাছে তাওবা-ইস্তিগফার করা, জিকির-আজকার ও পবিত্র কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত করা। সব মৃত মুসলিম নর-নারী ও আত্মীয়-স্বজনের রূহের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা।
Total Reply(0)
Mir Irfan Hossain ১৮ মার্চ, ২০২২, ৬:১৬ এএম says : 0
শা’বানের এক তারিখ থেকে সাতাইশ তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখার বিশেষ ফযীলতের কথা হাদীস শরীফে আছে। তাছাড়া আইয়ামে বীয তথা প্রতি মাসের তেরো, চৌদ্দ ও পনেরো তারিখে রোজা রাখার ব্যাপারে হাদীস শরীফে উৎসাহিত করা হয়েছে।
Total Reply(0)
আবু তালিব ১৮ মার্চ, ২০২২, ৬:১৭ এএম says : 0
সহীহ্ হাদীস গুলো তুলে ধরার জন্য। ইনকিলাব পত্রিকার সংশ্লিষ্টদেরকে অশেষ ধন্যবাদ।
Total Reply(0)
গোলাম কাদের ] ১৮ মার্চ, ২০২২, ৬:১৮ এএম says : 0
এই রাতে বেশি বেশি ইবাদাত করে আমাদের উচিত নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সকল মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা।
Total Reply(0)
নামঃ সোয়াইব হাসান ৬ মার্চ, ২০২৩, ১০:২৮ পিএম says : 0
অনেক ভালো লাগছে।
Total Reply(0)
নামঃ সোয়াইব হাসান ৬ মার্চ, ২০২৩, ১০:২৮ পিএম says : 0
অনেক ভালো লাগছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন