মহান রাব্বুল আলামীন সৌর মন্ডল ও ভুমন্ডল এবং তন্মধ্যস্থ বস্তু নিচয়ের জন্য যে প্রাকৃতিক বিধান স্থিরীকৃত করেছেন, তার কোনো নড়চড় হয় না। এই বিধান স্বাশত, অজয় ও অব্যয়। আল কোরআনের চতুর্দশতম সূরা ইবরাহীমে এর নজীর খুঁজে পাওয়া যায়, ইরশাদ হয়েছে : ‘আলিফ-লাম রা; এটি একটি কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার হতে আলোর দিকে বের করে আনেন, পরাক্রান্ত প্রশংসার যোগ্য পালনকর্তার নির্দেশে তাঁরই পথের দিকে।’ (সূরা ইবরাহীম : ১)।
এই আয়াতে কারীমায় আল্লাহপাক নিজের এমন তিনটি গুণের কথা উল্লেখ করেছেন, যা কোনোক্রমেই প্রতিরোধ করা যায় না। যেমন (ক) রাব্বুন-প্রতিপালক, (খ) আল আজীজ-প্রবল পরাক্রান্ত। (গ) আল হামীদ-প্রশংসার যোগ্য। গভীর মনোযোগের সাথে আল কোরআন তিলাওয়াত করলে দেখা যায় যে আল আজীজ রূপে এই নাম মোবারক এতে এসেছে বিরান্নব্বই বার এবং আজীজান রূপে এসেছে সাত বার। (একুনে (৯২+৭)=৯৯। যার একক (৯+৯=১৮)। উহার একক (১+৮)=৯, পরিপূর্ণ শক্তি। যে শক্তিকে প্রতিরোধ করা যায় না, যার সাথে পাল্লা দেয়া যায় না, যার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কিছু সংঘটিত হয় না, তিনিই আল আজিজ, পরাক্রান্ত মহা মনিব।
(গ) এই আয়াতে কারীমায় দ্বিতীয় যে গুণবাচক নামের উল্লেখ করা হয়েছে তা আল-হামীদ’ অর্থাৎ সর্ব প্রশংসীত, প্রশংসার যোগ্য। নভেমন্ডল ও ভুমন্ডলের বস্তু নিচয় তাঁরই প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে আছে এবং থাকবে। সকল প্রশংসা বা আল্ হামদু একমাত্র আল্লাহ পাকের জন্যই নিবেদিত। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে,‘আলহামদু’ অর্থাৎ সকল প্রশংসার মালিক মহান আল্লাহ তায়ালা। এই আলহামদু শব্দটি আল কোরআনে এসেছে ৩৮ বার। আর ‘বিহামদিকা’ রূপে এসেছে একবার এবং বিহামদিহী রূপে এসেছে চার বার। আর ‘হামিদুন’ আকারে এসেছে ১৬ বার।
এগুলোর যোগফল দাঁড়ায় (৩৮+১+৪+১৬)=৫৯। যার একক (৫+৯)= ১৪, এবং যার একক (১+৪)=৫, অর্থাৎ মোহাম্মাদ (সা.)। আল্লাহপাকের পরিপূর্ণ প্রশংসা তিনিই করতে পেরেছেন। কারণ তিনি আল্লাহ পাকের যাত বা সত্তা সম্পর্কে সর্বাধিক পরিচিত। (গ) উল্লিখিত আয়াতে কারীময় মহান রাব্বুল আলামীনের অপর একটি গুণবাচক নাম এসেছে, তা হলো ‘রাব্বুন’ অর্থাৎ প্রতিপালক, প্রতিপালনকারী। সৃষ্টি জগতের সব কিছুর প্রতিপালনকারী একমাত্র তিনিই। আল কোরআনে ‘রাব্বুন’ ও রাব্বিন’ আকারে এই নাম মোবারক এসেছে ৮৪ বার। আর ‘রাব্বি’ আকারে এসেছে ৬৭ বার। আর ‘রাব্বান’ আকারে এসেছে একবার। আর সম্বন্ধ পদ ‘রাব্বুকা’ ও ‘রাব্বিকা’ রূপে এসেছে ২৪২ বার।
আর সম্বন্ধপদ রাব্বুকুম ও রাব্বিকুম রূপে এসেছে ১১৮ বার। আর রাব্বুকুমা ও রাব্বিকুমা রূপে এসেছে ২৩১ বার। আর রাব্বুনা ও রাব্বিনা আকারে এসেছে ১৪৪ বার। আর সম্বন্ধপদ রাব্বুহু ও রাব্বিহি আকারে এসেছে ৭৬ বার। আর সম্বন্ধপদ রাব্বহা ও রাব্বিহা রূপে এসেছে ৯ বার। আর সম্বন্ধপদ রাব্বুহুম ও রাব্বিহিম আকারে এসেছে ১২৫ বার। আর সম্বন্ধপদ রাব্বি আকারে এসেছে ১০০ বার। আর রাব্বুন শব্দের বহুগুণে আরবাবুন রূপে এসেছে ১ বার এবং আরবাবান রূপে এসেছে ৩ বার।
একুনে সর্বমোট যোগফল দাঁড়ায় (৮৪+৬৭+১+২৪২+১১৮+২৩১+১১৪+৭৬+৯+১২৫+১০০+১+৩)=১১৭১। উহার একক (১+১+৭+১)= ১০। উহার একক (১+০)=১ অর্থাৎ আল্লাহ। মোট কথা, মহান রাব্বুল আলামীন প্রবল পরাক্রান্ত, সর্ব প্রশংসিত, ও সৃষ্টি জগতের একমাত্র প্রতিপালনকারী। তাই, তিনি কুল মাখলুকাতের জন্য যে সকল প্রাকৃতিক বিধান প্রবর্তন করেছেন, সেগুলোর মাঝেও কোনো পরিবর্তন ও পরিবর্ধন নেই। তিনি যার জন্য যা নির্ধারিত করেছেন তা-ই স্বতঃসিদ্ধ ও চিরন্তন।
লক্ষ্য করলে আরো দেখা যায় যে, সূরা ইবরাহীমের ২নং আয়াতের শুরুতে ‘আল্লাহ’ নাম মোবারক এসেছে। আর ১নং আয়াতের প্রথমে এসেছে ‘রাব্বুন’ নাম মোবারক এবং তার পর এসেছে আল্ আজীজ ও আল্ হামীদ নাম মোবারক। এই ধারাবাহিকতার আলোকে স্পশতই বুঝা যায় যে, মহান আল্লাহপাক সৃষ্টি জগতের প্রতিপালনের দায়িত্ব পূর্বাহ্নেই নিজের আয়ত্তে রেখেছেন। তারপর একথাও ঘোষণা করেছেন যে তিনি আল আজিজ অর্থাৎ শক্তিশালী ও পরাক্রান্ত। আর তিনিই আল হামীদ অর্থাৎ সকল প্রশংসার যোগ্য। এই তিনটি গুণবাচক নাম আসল সত্তা বাচক নাম।
‘আল্লাহ’-এর পূর্বে উল্লেখ করে এই ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, তিনি প্রতিপালক, তিনি পরাক্রান্ত এবং তিনিই প্রশংসার যোগ্য। ফলে যে সকল বান্দাহ তাঁর প্রতিপালকত্বকে স্বীকৃতি প্রদান করবে, এবং যারা তাঁর পরাক্রান্ত রূপের কাছে আত্মসমর্পন করবে এবং যারা তাঁর প্রশংসার হক আদায় করতে সমর্থ হবে, তারা দুনিয়ার জীবনে ও আখেরাতের জীবনে কোথাও হোঁচট খাবে না এবং তাদের চেষ্টা, সাধনা ও মেহনত বিফলে যাবে না।
বরং তারা তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছবেই। এটা সুনিশ্চিত তবে, শর্ত এই যে, এই পথ কোনোক্রমেই ছাঁড়তে পারবে না। আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে : ‘তিনিই মাশরেক এবং মাগরিবের প্রতিপালক, তিনি ছাড়া কোনোই উপাস্য নেই, তাঁকেই তোমরা অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করো।’ (সূরা মুয-যাম্মিল : ৯)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন