বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বিপর্যয়ের মুখে কৃষি, বাড়ছে জনজীবনে দুর্ভোগ

সড়কের পাশে ফসলি জমিতে ইটভাটা

| প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) উপজেলা সংবাদদাতা : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার চুন্টা ইউনিয়নের লোপাড়া হাওর এলাকায় সড়কের পাশে ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে মা-বাবা ব্রিক্স নামের একটি অবৈধ ইটভাটা। পাঁচ-ছয় বছর আগে গড়ে ওঠা এ ইটভাটার নেই কোনো অনুমোদন। ইটভাটার কারণে এলাকার কৃষি আজ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। জনজীবনে দেখা দিয়েছে দুর্ভোগ। উপজেলা প্রশাসন ও সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে যানা যায়, কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মাণে আইনগত নিষেধ থাকলেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সরাইল-অরুয়াইল সড়কের পাশে লোপাড়া হাওরে প্রায় ৮ একর ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে মা-বাবা ব্রিক্স নামের একটি অবৈধ ইটভাটা। এর আশপাশে ফসলি জমির সমারোহ। চাষ করা হয়েছে ধানের পাশাপাশি আলু, মরিচ, ডালসহ বিভিন্ন রবিশস্য। পাঁচ বছর ধরে খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে কাটা হচ্ছে ওই হাওরের ফসলি জমির উর্বর (টপ সয়েল) মাটি। বাদ পড়েনি সরকারি পতিত জমিও। ইটভাটার দখলে চলে গেছে লোপাড়া খালের একাংশ। এখানে নারী ও পুরুষের পাশাপাশি রয়েছে শিশু শ্রমিকও। সড়কের পাশেই রাখা হয়েছে মাটি ও জ্বালানি কয়লার স্তূপ। যন্ত্র দিয়ে সড়কের পাশে কয়লা ভাঙার সময় বিষাক্ত ধোঁয়া আর ধুলাবালিতে এলাকার পরিবেশ বিভীষিকাময় হয়ে ওঠে। এতে পরিবহনের চালক, যাত্রী ও পথচারীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তারা নাক চেপে ধরেও নিস্তার পাচ্ছেন না। গ্রামবাসীর অভিযোগ, সরকারি দলের স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় ফসলি জমিতে অবৈধ এ ইটভাটাটি গড়ে উঠেছে। সদর উপজেলার সুহিলপুর এলাকার শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি এ ইটভাটার মালিক। পাঁচ-ছয় বছর ধরে ইটভাটার আশপাশের বোরো ফসল বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। গত মৌসুমে জমির ধান পাকা শুরু হলে কৃষকরা অধিক মাত্রায় ক্ষতির সম্মুখীন হন। গত বছর প্রায় ৫০ একর জমির বোরো ধানে চিটা পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। এ ব্যাপারে সমাবেশসহ প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়। পরে উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ওই ভাটার মালিককে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করেন। কথা ছিল ফসলি জমি থেকে এটি সরিয়ে নেওয়া হবে, কিন্তু তা হয়নি। লোপাড়া গ্রামের বাসিন্দা প্রভাষক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ইটভাটার ধুলা আর ধোঁয়ায় মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মালিক পক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।’ এলাকার কৃষক নাসির মিয়াসহ অনেকে ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘এই ইটভাটার জন্য আমরার ক্ষতি অইতেছে। আমরা চাই এটি বন্ধ হোক। আমরা মালিকের কাছে অসহায়। আমার কথার কোনো দাম নাই।’ চুন্টা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই ইটভাটা চালাচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার বলেন, ‘কৃষি জমির পাশেই অবৈধভাবে ওই ইটভাটাটি গড়ে উঠেছে। ওই ইটভাটার কারণে এলাকার কৃষি আজ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। কৃষি জমির পাশে ইটভাটা হতে পারে না।’ পরিবেশ অধিদপ্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপ-পরিচালক মোসাব্বের হোসেন রাজিব বলেন, ‘ওই ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নেই। এটি পরিবেশ বিপর্যয় করে কৃষকদের ক্ষতি করছে। শিগগির এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ইটভাটার মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সব বিভাগে আবেদন করা হয়েছে। আশা করি কিছু দিনের মধ্যে সব কাগজপত্র পেয়ে যাব। ইউএনও সৈয়দা নাহিদা হাবিবা বলেন, ‘তদন্ত করে ওই ইটভাটার বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন