বিশ্বমানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ কোরআনে মহান রাব্বুল আলামিন দু’প্রকার বিধান নির্দেশ দিয়েছেন। কতকগুলো পালনীয়, কতকগুলো বর্জনীয়। যেসব বিষয় পালনের নির্দেশ রয়েছে, তা যথার্থরুপে পালণের মধ্যে স্রষ্টার সন্তুষ্টি নিহিত। আর যেসব বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা থেকে বিরত থাকা ও পূর্ণরূপে বর্জন করা ইসলামের দাবী এবং একজন মুমিনের পরিচায়ক। ইসলাম শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামী শরীয়ত বিরোধী অসামাজিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কঠোর বিধান আরোপ করেছে। সুখী ও শান্তিময় সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী অনুশাসন ও বিধি মেনে চলার তাগিদ দিয়েছে। পক্ষান্তরে ইসলামী বিধান অস্বীকার ও বিরোধিতাকে চরম ধৃষ্টতা ও মারাত্মক গর্হিত অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছে। অন্যায়, অত্যাচার, পাপাচার, ব্যভিচার, জুলুম, নির্যাতন, হত্যা, সন্ত্রাস, চুরি ও ডাকাতিসহ অসামাজিক সকল কার্যকলাপ ইসলাম নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
অবৈধ যৌনচার প্রতিরোধে ইসলামের ভূমিকা : ইসলামের বিধানে যৌনচারী, ব্যভিচারী অপরাধীকে শাস্তিযোগ্য গণ্য করা হয়েছে। কোরআনের ভাষ্য, অবৈধ যৌন সম্ভোগের নিকটবর্তী হয়ো না, এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ। (সুরা বনী ইসরাইল: ৩২)। জিনার শাস্তির বিধানে মহান রাব্বুল আলামিন বলেন ‹ব্যভিচারিনী এবং ব্যভিচারী তাদের প্রত্যেককে একশত কষাঘাত করবে। আলাহর বিধান কার্যকারীকরণে তাদের প্রতি দয়া যেনো তোমাদের প্রভাবান্বিত না করে। (সুরা নূর: ০২)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যে দুজন এতে লিপ্ত হবে তাদের শাসন করবে, যদি তারা তাওবা করে স্বয়ং নিজেদের সংশোধন করে তবেই তাদের রেহাই দিবে। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সুরা নিসা: ১৬)।
মদ্যপানের শাস্তি : মদ্যপান ইসলামি উম্মাহর জন্য হারাম। এই বিধান অমান্য করে মদ্যপান করলে তাকে শাস্তির দিতে হবে। এ অপরাধের জন্য দুধরণের শাস্তি রয়েছে, ইহকালিন শাস্তি ও পরকালিন শাস্তি। ইসলামি আইনজ্ঞ ফকিহগণ হাদিসের আলোকে এর শাস্তি নির্ধারণ করেছেন। ইমাম আবু হানিফা (রাহ.)- এর মতে, মদ্যপানকারীর শাস্তি আশি দোররা বেত্রাঘাত। ইমাম মালেক (রাহ.) ইমাম আবু হানিফা (রাহ.)- এর মতের সমর্থক। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনাকে মদ ও জুয়ার বিধান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে আপনি বলুন, সে দুটিতে মহাপাপ রয়েছে এবং মানুষের জন্য কিছু পার্থিব উপকারও। আর সে দুটির পাপরাশি উপকার অপেক্ষা বড়।’ (সুরা বাকারা: ২১৯)।
চুরির শাস্তি : চুরির শাস্তির বিধান সম্পর্কে আল-কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আর যে পুরুষ কিংবা নারী চোর সাব্যস্ত হয়, তবে তার হাত কর্তন করো। এটা তাদের কৃতকর্মের ফল, আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি। তিনি মহা পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সুরা মায়িদা: ৩৮)। প্রথমবার চুরির কারণে ডান হাত কাটা হবে। এরপর দ্বিতীয়বার আবারও চুরি করে তবে বাম পা তারপর আবার যদি চুরি করে, তাহলে তাকে বন্দী করে রাখা হবে, যতক্ষণ না তাওবা না করে। চুরিকৃত মাল যদি মওজুদ থাকে, তবে তা ফেরত দেয়া ওয়াজিব। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনগণ! তোমরা তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না।’ (সুরা নিসা: ২৯)।
হত্যা ও সন্ত্রাস : হত্যা ও সন্ত্রাসরোধে ইসলামি বিধান অত্যন্ত কঠোর। কোরআনের ভাষ্য ‘নর হত্যা কিংবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের অপরাধে ব্যক্তি ব্যতিরিকে কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেনো পৃথিবীর সমগ্র মানব গোষ্ঠিকে হত্যা করলো আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেনো সমগ্র মানব জাতির প্রাণ রক্ষা করলো। (সুরা মায়িদা: ৩২)। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‹আলাহ যে প্রাণ হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতীত তাদের হত্যা করো না। (সুরা বানী ইসরাইল: ৩৩)। হত্যার পরিণাম সম্পর্কে মহামহিম আলাহ বলেন, ‹কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মোমিন ব্যক্তিকে হত্যা করলে তার স্থান জাহান্নাম। সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং তার প্রতি আলাহর অভিসম্পাত। আর তিনি তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। (সুরা নিসা: ৯৩)।
লেখক: শিক্ষক, বাইতুন নূর মাদরাসা ঢাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন