ঘুম আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিয়ামত। বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ অনুগ্রহ ও দান। সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য ঘুমের বিকল্প নেই। শারীরিক-মানসিক ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করতে এই পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলা ঘুমকে অন্যতম প্রধান মাধ্যম বানিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : আর আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী। রাত্রিকে করেছি আবরণ। (সূরা নাবা : ৯-১০)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : তিনিই তোমাদের জন্যে রাত্রিকে করেছেন আবরণ, নিদ্রাকে বিশ্রাম এবং দিনকে করেছেন বাইরে গমনের জন্যে। (সূরা ফুরকান : ৪৭)।
দিনভর ক্লান্তিকর চলাফেরার পর মানুষ যখন নিস্তেজ হয়ে পড়ে; কর্মক্ষম মানুষ অক্ষম হয়ে পড়ে, শক্তিমান মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে, সে সময় এ নিয়ামতই হয়ে ওঠে তার একমাত্র অবলম্বন, যার মাধ্যমে সে শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করে। ফিরে পায় পরবর্তী দিবসের জন্যে নতুন প্রাণশক্তি ও নবতর উদ্যম।
কোনো ব্যক্তি যত প্রখর মেধারই অধিকারী হোক, যত শক্তিশালীই হোক-কেবল দু-একটি রাত বিনিদ্র কাটলে বা নিয়মতান্ত্রিক ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে মেধাশক্তি অকেজো হয়ে যায়। আচার-আচরণে, চলা-ফেরায় এবং কথাবার্তা ও কাজেকর্মে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। বস্তুত এ নিয়ামতের কদর সে-ই সর্বাধিক বুঝতে পেরেছে, যার রাত কাটে নিদ্রাহীন; বিভিন্ন ব্যবস্থাপত্র গ্রহণের পরও আরামের বিছানায় এপাশ ওপাশ করে যার রাত ভোর হয়।
আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, আল্লাহ তাআলার কী মহান নিয়ামত নিয়মিত ভোগ করে যাচ্ছি? অবিরত তাঁর কত বড় অনুগ্রহ লাভ করে যাচ্ছি! কোরআন মাজীদে ঘুমকে বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার রহমতের বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : তিনিই স্বীয় রহমতে তোমাদের জন্যে রাত ও দিন করেছেন, যাতে তোমরা তাতে (রাতে) বিশ্রাম গ্রহণ কর ও (দিনে) তার অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা ক্বাসাস : ৭৩)।
সূরা রূমে আল্লাহ তাআলা রাতের ঘুমকে তাঁর নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন : আর তাঁর নিদর্শনাবলীর একটি হলো রাতে ও দিনের নিদ্রা এবং তাঁর কৃপা অনে¦ষণ। নিশ্চয় এতে মনোযোগী স¤প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (সূরা রূম : ২৩)।
কি সেই নিদর্শন? কি সেই শিক্ষা? বস্তুত চিন্তাশীল ব্যক্তি সহজেই তা উপলব্ধি করতে পারে। খুঁজে পায় আল্লাহ তাআলার কুদরতের এক অবাক নিদর্শন। কীভাবে তিনি মুখরিত ও কোলাহলময় বিশাল এক অশান্ত পৃথিবীকে সময়ের সামান্য পরিবর্তনে নিস্তব্ধ-নীরব করে দেন। প্রাণবন্ত মানুষকে নিষ্প্রাণ ও নির্জীবের মতো করে দেন। হাদীস শরীফে ঘুমকে মৃত্যুতুল্য গণ্য করা হয়েছে। ঘুমের বড় শিক্ষা হলো, ঘুম আমাদেরকে প্রতিদিন মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মনে করিয়ে দেয় আমরা একদিন মৃত্যুবরণ করব এবং মাওলায়ে পাকের সম্মুখে উপস্থিত হব। হিসাব-নিকাশের সম্মুখীন হব।
আমাদের কর্তব্য হলো আল্লাহ তাআলার দেয়া এ নিয়ামতকে যথাযথ উপলব্ধি করা। বস্তুবাদীদের মতো এটাকে গতানুগতিক জীবনধারা বা নিয়ম না ভাবা; বরং ঘুম মুমিনের জীবনের একটি আমল। গুরুত্বপূর্ণ আমল। জীবনের প্রতিটি ক্ষণই মুমিনের আমলের অংশ। মুুমিনের সবকিছুই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য নিবেদিত, উৎসর্গিত। তার জাগ্রত থাকাও আল্লাহর জন্য, আবার ঘুমও তাঁর জন্য।
হযরত মুআয ইবনে জাবাল রা. একবার আবু মূসা আশআরী রা.-কে উদ্দেশ্য করে বললেন : হে আবদুল্লাহ! আপনি কীভাবে কোরআন তিলাওয়াত করেন? তিনি বললেন, আমি (দিবা-রাত্রি) কিছুক্ষণ পরপর কিছু অংশ করে তিলাওয়াত করতে থাকি। তিনি বললেন, আর আপনি কীভাবে তিলাওয়াত করেন হে মুআয? উত্তরে তিনি বললেন, আমি রাতের প্রথমাংশে শুয়ে পড়ি এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘুমিয়ে উঠে পড়ি।
এরপর আল্লাহ আমাকে যতটুকু তাওফীক দান করেন তিলাওয়াত করতে থাকি। এতে আমি আমার নিদ্রার অংশকেও সাওয়াবের বিষয় বলে মনে করি, যেমন আমার দাঁড়িয়ে তিলাওয়াতকেও সওয়াবের বিষয় বলে মনে করি। ঘুমের সুনান ও আদাব এবং নিয়তের প্রতি লক্ষ রাখা হলে ঘুমের প্রতিটি মুহূর্তই বান্দার আমলনামায় সওয়াব হিসাবে জমা হতে থাকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন