মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার আটটি, শালিখা উপজেলা সাতটি ও মাগুরা সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন নিয়ে মাগুরা-২ সংসদীয় আসন। এ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৩৪ হাজার ৯২৪। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৬৮ হাজার ৪৭, নারী ভোটার এক লাখ ৬৬ হাজার ১৭১ জন। আর নতুন ভোটারের সংখ্যা ৪২ হাজার ২০৩ জন। এ নতুন ভোটাররা যেদিকে গড়াবে, সেই প্রার্থীর জয় হবে বলে মনের করেন অভিজ্ঞমহল।
এ আসনে বিএনপির মনোনীত সাবেক মন্ত্রী কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাড. নিতাই রায় চৌধুরী ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে নেমেছেন আসন উদ্ধারে। অপর দিকে, আ.লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে আসনটি ধরে রাখতে নির্বাচন করছেন বর্তমান সরকারের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী অ্যাড. বীরেন শিকদার। নির্বাচনের আর সময় নেই। সমান তালে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। এ ছাড়া প্রার্থী হয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীক নিয়ে মাওলানা মোস্তফা কামাল। এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চললেও ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে। তারা ভোট দিতে পারবেন কি-না। আর এ কারণে এলাকায় ভোটের উৎসব দেখা যাচ্ছে না। তবে চায়ের দোকানে আড্ডায় চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এলাকার ভোটাররা জানান, দীর্ঘ দিন অনেকেই বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা তাদের ভোট দিতে পারেনি। এবার তাদের ভোট দেয়ার সুযোগ হলে ভোট দেবেন তাদের ইচ্ছামতো এমন মন-মানসিকতায় উদগ্রিব হয়ে রয়েছেন তারা। মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর বাজারে কলেজশিক্ষক হারুনর রশীদ বলেন, ভোট প্রয়োগের পরিবেশ থাকলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভোট প্রয়োগ করবেন। প্রকৌশলী রোকনুজ্জামান বলেন, নির্বাচনে যেভাবে বিরোধী প্রার্থীদের ওহামলা প্রচার কাজে বাধা দেয়া হচ্ছে, তাতে তিনি সন্দীহান; শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হবে কি-না। গত কয়েকবারের নির্বাচন মানুষকে হতাশ করেছে।
দেশের শান্তি শৃঙ্খলা, উন্নয়নের সঙ্গে সুশাসন চান ভোটাররা। এ নির্বাচনের মাধ্যমে যারা সরকার গঠন করবেন, তাদের কাছে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সরকার, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকরণসহ কার্যকর সংসদ এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা থেকে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনই সবার কাম্য। এনজিওকর্মী সুলতানা জামান বলেন, ভোট এলেই মানুষের মধ্যে শঙ্কা দেখা দেয়। আগে ভোট দেয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত। তরুণ ভোটার আসিক রহমান বলেন, আমরা তরুণ ভোটার আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো সে পরিবেশ চাই। গত দুইবার ভোট দিতে পারিনি, এবার সুযোগ পেলে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবো। মাগুরা সদর উপজেলার শত্রুজিৎপুর বাজার এলাকার ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী হাফিজার রহমান বলেন, ভোটকেন্দ্রে যদি যাওয়ার পরিবেশ থাকে, তা হলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভোট দেবো। আর পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে না পারলে কেন্দ্রেই যাব না। মাগুরা-২ আসনে তরুণ ভোটারের সংখ্যা ৪২ হাজার ২০৩ জন। ২০০৮ সালে এ আসনে বিএনপির সাথে ভোটের ব্যবধান হয়েছিল মাত্র পাঁচ হাজার ৪৬৪ ভোট। এ তরুণ ভোটাররা যেদিকে গড়াবে, সেই প্রার্থীর জয় হবেন। এমন কথা বললেন অটোচালক আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, আমরা তরুণরা দেখেশোনে ভোট দেবো। সীমাখালী এলাকার ব্যবসায়ী রাজিব হাসান বলেন, আগে ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তা না হলে এবারো ভোটারদের উপস্থিতি থাকবে না।
বর্তমানে যে অবস্থা, তাতে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাবেন বলে মনে হচ্ছে না। ভোট একটি উৎসব অথচ এখন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। শালিখা উপজেলার বুনিগাতি এলাকার বেসরকারি স্কুলশিক্ষক ছমির উদ্দিন বলেন, সহসা আর বাংলাদেশে ভালো নির্বাচন দেখা যাবে না। নির্বাচনে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে যাতে ভোট দিতে পারে, সে ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে। মহম্মদপুর উপজেলার বালীদিয়া বাজারে চায়ের দোকানে জনৈক ভোটার বলেন, এর আগে ২০০৮ সালে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি। আর ২০১৪ সালে ভোটের জন্য ভোটারর প্রয়োজন হয়নি। আমরা আশা করি, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমরা আমাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারব। বেশির ভাগ মানুষই চায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠিত হোক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন