আর মাত্র ক’দিন বাদেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ৩০ ডিসেম্বর ভোটের মাধ্যমে নতুন কান্ডারী নির্ধারণ করবেন ভোটাররা। এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আ.লীগ ও রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি বেশ কয়েকটি আসনে মনোনয়ন দিয়েছে নতুন মুখ। সাবেকদের হটিয়ে মনোনয়ন পাওয়া এসব প্রার্থীরা দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন ভোটের মাঠ। নিজেদের জয়ের ব্যাপারেও তারা আশাবাদী শতভাগ।
ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পেয়েছেন নব্বইয়ের দশকের মাঠ কাঁপানো ছাত্রনেতা আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের এই পুরোধা রাজনীতিক দলীয় নেতাকর্মীদের ‘প্রাণভোমরা’ হিসেবে পরিচিত। ২০১৩-১৪ সালের আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে ওয়াহাব আকন্দকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে বিএনপির রাজনীতি। কারাবরণ করেছেন, তবুও পিছপা হননি দলের আদর্শ থেকে।
ফলে দলটির হাইকমান্ড দুঃসময়ের এই নিবেদিতপ্রাণ কর্মীকে মূল্যায়ন করেছে। তার সঙ্গে মনোনয়ন লড়াইয়ে টিকতে পারেননি সংস্কারপন্থী সাবেক এমপি দেলোয়ার হোসেন খান দুলু। স্বপ্নবাজ ও লড়াকু রাজনীতিক আবু ওয়াহাব আকন্দ ময়মনসিংহের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গেই নিজের নিবিড় সম্পর্ক বজায় রেখে চলছেন অনেক দিন ধরেই। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের। ভোটের মাঠে জনপ্রিয় ওয়াহাব আকন্দ ভোটারদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। সুষ্ঠু ভোট হলে তার গলাতেই উঠছে বিজয়মাল্য, এমনটি মনে করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীরা। এখনো পর্যন্ত ময়মনসিংহ সদরে সমতল মাঠ বজায় রয়েছে।
ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে মহাজোটের মনোনয়ন চেয়েছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক ও মহানগর জাসদ সভাপতি সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু। দীর্ঘ দিন ধরে জনসংযোগ ও ভোটারদের কাছে কাছে গিয়ে ইতিবাচক ইমেজ গড়ে তোলতে সক্ষম হন তিনি। তবে জোটের মনোনয়ন না পেয়ে সিংহ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন মিন্টু।
১৯৯৬ সালে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী। এরপর ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হন। প্রায় দেড়যুগ পর মনোনয়ন রাজনীতিতে আবারো ঘুরে দাঁড়িয়েছেন মাদানী।
তবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দলের বর্ধিত সভায় জেলা আ.লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা, সহ-সভাপতি আমিনুল হক শামীমসহ দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা এবং উপজেলা আ.লীগের সর্বস্তরের নেতারা উপস্থিত হলেও ‘অজুহাত’ দেখিয়ে অনুপস্থিত থেকেছেন হাফেজ মাদানী। এতে করে দলের মধ্যকার কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে।
এ ছাড়া নিজের সংবাদ সম্মেলও দলটির সাবেক এমপি রেজা আলীকে ‘বহিরাগত’ বলে টিপ্পটি কাটেন মাদানী। এর ফলে রেজা আলী সমর্থক উপজেলা আ.লীগ ও ইউনিয়ন আ.লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে মাদানী বলছেন, রেজা আলী এখনো তার জন্য মাঠে নামেননি। এমপি হতে তাই তিনি রেজা আলীর ওপর নির্ভর করছেন না। নিজের যোগ্যতাতেই মাঠ গুছিয়ে নিজের বিজয় নিশ্চিত করছেন। অবশ্য দলটির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এমপি না হয়েই দাম্ভিক স্টাইলে পথ চলছেন মাদানী।
স্থানীয় আ.লীগের অন্য মতের অনুসারী নেতাকর্মীরা তার আচরণে বেজায় ক্ষুব্ধ। উপজেলা আ.লীগের এই অন্তর্কোন্দলে বেশ স্বস্তিতে রয়েছেন বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ডা. মাহাবুবুর রহমান লিটন।
ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু ও সাবেক এমপি শাহ নুরুল কবির শাহীন। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টকে আসনটি ছেড়ে দেয়ায় তারা মনোনয়নবঞ্চিত হন। গণফোরাম নেতা এইচ এম খালেকুজ্জামান আসনটিতে ধানের শীষ প্রতীক পান। সম্প্রতি খালেকুজ্জামানের সমর্থনে বিশাল শোডাউন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজেদ বাবু। তবে এখনো খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসতে পারেননি শাহীন বা তার অনুগত নেতাকর্মীরা। ভোটের মাঠে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে আঁটঘাঁট বেঁধে মাঠে রয়েছেন স্বনামধন্য সফটওয়্যার প্রকৌশলী মাজেদ বাবু। ভোটারদের কাছে নিজের পরিচ্ছন্ন ভাবমর্যাদাকে কাজে লাগিয়ে ফ্রন্টের প্রার্থীর জন্য ভোট প্রার্থনা করছেন।
ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনে প্রথমবারের মতো নৌকা প্রতীক পেয়েছেন কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনু। তিনি ইতোপূর্বে আ.লীগের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন। ধনু এবার মনোনয়ন যুদ্ধে পরাস্ত করেন তিনবারের সাবেক এমপি ও সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. এম আমান উল্লাহকে। মূলত নিজের ভাতিজাদের সীমাহীন অনিময়, দুর্নীতি ও দখলবাজির কারণে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন আমান উল্লাহ। ভোটের মাঠে তিনি সক্রিয় না হলেও পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড, ব্যক্তি ধনুর জনমত এবং উন্নয়নের প্রতীক নৌকার গ্রহণযোগ্যতা- এসব বিষয় বিবেচনা করে আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটে ধনুই শেষ হাসি হাসবেন এমন অভিমত তার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন